সংবিধানের বাইরে যাব না–ওবায়দুল কাদের

নির্বাচন সামনে রেখে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদেরের এই প্রতিক্রিয়া আসে।

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “সংবিধানের বাইরে যাব না। পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি, এটা মেনে নেওয়ার মত সংবিধানসম্মত কোনো কারণে নেই।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত ১ নভেম্বর সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে সাত দফা দাবির বিষয়ে কোনো সমাধান না আসায় বুধবার ‘সীমিত’ পরিসরে দ্বিতীয় দফার এই সংলাপে বসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে বেলা ১১টা থেকে তিন ঘণ্টার এই সংলাপে দুই পক্ষেই ১১ জন করে অংশ নেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের গণভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা তাদের সাত দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পরিদর্শনের অনুমতি, সত্যিকারের রাজনৈতিক মামলা থাকলে তা প্রত্যাহারের মত কয়েকটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ একমত হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে কাদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট মেয়াদ শেষে পরের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং দশজন উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ওই নির্বাচন হতে হবে।

ওই প্রস্তাব আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়ে কাদের বলেন, “হয়ত তাদের অনেকের একটা সদিচ্ছা আছে। এটা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা। এই পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁক ফোকর হয়ত খুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে ওয়ান ইলেভেনের মত সেই অনভিপ্রেত অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। আমরা সবাই মনে করছি।”সংলাপ শেষে বুধবার গণভবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে কাদের বলেন, “আমাদের দলনেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের নেতাদের অনুরোধ করেছেন, ‘আপনারা আসেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করি, দেখিয়ে দেব, আমি যা বলেছি সেটা সত্যি। আমরা দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক অভিসন্ধি নিয়ে কাজ করি না’।

“‘জনগণ যদি আমাকে ভোট দেয়, আমি থাকব। আপনারা জিতলে আপনারা জিতবেন। কোনো প্রকার নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি হবে না । একটা ভালো নির্বাচন হবে… ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে, ক্রেডিবল ইলেকশন হবে, একসেপটেবল ইলেকশন হবে।”

সংলাপের পরেও প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের জেষ্ঠ নেতাদের আলাদাভাবে একই কথা বলেছেন বলে জানান কাদের।

“তিনি বলেছেন, ফ্রি, ফেয়ার, নিউট্রাল ইলেকশন আমরা বাংলাদেশে দেখতে চাই। আজকে নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে গিয়ে ফাঁক ফোকড় গলে কোনো অপশক্তিকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেবেন না। যেটা আপনাদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, আমাদের সকলের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।”

খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়া এবং ইভিএম ব্যবহার না করাসহ সাত দফা দাবিতে গত ১ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সংলাপ হয়।

সেদিন সংলাপ শেষে ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণফোরাম সভাপতি কামাল বলেছিলেন, এ আলোচনায় বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি। বুধবারের সংলাপ শেষে বেরিয়ে এসে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও একই কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আলোচনা মনঃপূত হয়নি। সংলাপে কোনো সমাধান আসেনি।”

পরে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা এখন আন্দোলন জোরদার করবেন, সাত দফা আদায়ের জন্য বৃহস্পতিবার পদযাত্রা হবে, শুক্রবার রাজশাহীতে হবে সমাবেশ।

ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনের হুমকির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদযাত্রা বা রোড মার্চ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বলেই তারা মনে করেন।

“কিন্তু ওই যে পদযাত্রা, রোডমার্চ করতে বোমাবাজি, জ্বালাও পোড়াও যদি শুরু করে, সেই পরিস্থিতিতে আমরা তো চুপ থাকতে পারব না।”

সাত দফার হিসাব

কাদের দাবি করেন, ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার ‘বেশিরভাগ’ দাবি মেনে নিতে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনা সম্মত হয়েছেন।

“বিদেশি পর্যবেক্ষক যে কোনো বুথে যেতে পারে, যে কোনো কেন্দ্রে যেতে পারে এবং তারা যেভাবে চান সেভাবে নির্বাচন কমিশন এলাও করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক, রাজবন্দিদের মুক্তি- এসব বিষয়ে আমাদের নেত্রীর সাথে আলোচনা।

“এসব দাবি মেনে নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শিডিউল ডিক্লেয়ারের পরে নির্বাচন কমিশন এগুলো করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে আমরা সম্মত। সবার সমান অধিকার, তারা সভা সমাবেশ করতে পারবে। এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই।”

রাজবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “সত্যিকারের রাজবন্দি যদি হয়, আইনমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, এটা তদন্ত করতে। সত্যিই রাজনৈতিক মামলা হয়ে থাকলে মুক্তির ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই।”

বিএনপি চেয়ারপারসেনর মুক্তির যে দাবি ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে…জামিন চেয়েছে। মুক্তি ওইভাবে চাননি। আপনারা (সাংবাদিকরা) প্যারোল বানিয়েছেন, তারা কিন্তু প্যারোল বলেননি।

“আদালত তাকে দণ্ড দিয়েছে। তারা লিগ্যাল ব্যাটল করতে পারে। আদালত যদি তাকে জামিনে মুক্তি দেয়, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”

তবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের যে দাবি ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানেই রয়েছে বলে জানান কাদের।

তিনি বলেন, “পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের নিয়ম চালু নেই। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহায়তায় যখন যেখানে প্রয়োজন, সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে।”

নির্বাচন সামনে রেখে এই সংলাপ সফল হয়েছে কী না- তা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “ফেইল এ কথা আমি বলি না। সংলাপ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছেন। এ দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেনি “

তবে বুধবারের পর আর সংলাপ হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় আলোচনা এগিয়ে যাবে, তবে ডায়ালাগ শেষ।”

দ্বিতীয় দফার সংলাপে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু; বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ; জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন জোটের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আনিসুল হক, দীপু মনি ও শ ম রেজাউল করিম এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সংলাপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তার সংলাপের ‘ফলাফল’ জানানোর কথা রয়েছে।

রাঙ্গামাটিতে আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ প্রতিবন্ধীদের কল্যানে কাজ করে যাবে —–কৃষিবিদ কাজল তালুকদার পরিবার ও সমাজ থেকে প্রতিবন্ধীদের কথা চিন্তা করতে হবে —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ প্রতিবন্ধীদের দিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে তুলুন —-সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় জেলা পরিষদ সহায়তা দেবে —–সাগরিকা রোয়াজা

দৈনিক ভোরের চেতনা ২৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভা প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দেখতে চাইলে অবশ্যই রাঙ্গামাটিতে আসতে হবে —–মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান আমার সাংবাদিকতার জীবনে হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে আসছি —–এ কে এম মকছুদ আহমেদ

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031