পাকিস্তানের পক্ষে থাকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভুল: স্মৃতিসৌধে মার্কিন অধ্যাপক

মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের বার্ষিকীতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসে একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে নিজের যাতনার কথা বললেন এক মার্কিন অধ্যাপক

ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল কটিংহ্যাম রোববার সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে বসে। তার পোশাকে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল আর সবুজ।

মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির বেদীতে ফুল দিয়ে ফেরার পথে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি অনুভব করি, আমার দেশ অনেক ভুল করেছে। আমি আমার দেশ ও দেশের সমস্যা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। আমি সেজন্য দুঃখও প্রকাশ করছি। আমি মনে করি, আমরা অনেক খারাপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি সেজন্য যাতনা বোধ করি।”

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা নিয়ে গবেষণার তথ্য সংগ্রহে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসেছেন অধ্যাপক কটিংহ্যাম। কয়েক দিন আগে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে ‘অনেক কিছু’ জেনেছেন তিনি।

“তখন পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটেছিল, যুদ্ধ কেমন ভয়াবহ ছিল, কত মানুষ জীবন দিয়েছে- সে সম্পর্কে জেনেছি। আমি অনেক ছবি দেখেছি, ঘটনাগুলো মর্মস্পর্শী। আমি সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে কিছু বই কিনেছেন অধ্যাপক কটিংহ্যাম।

তিনি বলেন, “আমি বাঙালির আত্মত্যাগকে সাধুবাদ জানাই। এটা ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ।”

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আরও সময় নেওয়া উচিৎ।

নিজের দেশের আইন লংঘন হবে জেনেও সাড়ে চার দশক আগে তিনি যে মুক্তিকামী বাঙালিকে দমনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সমরাস্ত্র যুগিয়েছিলেন, তা পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত একটি বইয়ে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত বিভিন্ন অডিও টেপের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিক্সন ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকা নিয়ে ২০১৩ সালে বইটি বই প্রকাশ করেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক গ্যারি ব্যাস।

‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার অ্যান্ড আ ফরগটেন জেনোসাইড’ নামের ওই বইয়ে তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার নানা দিক তুলে ধরেন।

তবে ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল অনেক মানুষ। নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সারা পৃথিবীতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে থাকলেও মার্কিন জনগণ কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, সে প্রসঙ্গ টেনে মাইকেল কটিংহ্যাম বলেন, “সিনেটর টেড কেনেডি মুক্তিযুদ্ধের বড় সমর্থক ছিলেন। আমি মনে করি, শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও যুব সমাজ তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতার স্বাক্ষর রেখেছিল।”

এবার বাঙালির বিজয় উদযাপনের অংশ হতে পেরে ‘সম্মানিত’ বোধ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি অনুভব করি, এটা আত্মত্যাগের উদযাপন। আশা করি, আমাদের দুই দেশ একসঙ্গে মিলিত হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ একই সঙ্গে করবে।(”বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031