
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে বিশ্বের অনেক গুনি ব্যক্তি প্রায় সময় নানা রকম কথা বলেন। বিশ্বের অনেক ব্যক্তি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বন্ধন রয়েছে তা বাংলাদেশের আশে পাশের দেশে লক্ষ্য করা যায় না। এ সকল বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এবার বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেছেন করন থাপার। এই সম্মানিত ব্যক্তি ভারতীয় এক গনমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকার দেন। তার সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের উন্নতি ও ভারতের মিথ্যাচারের বর্ণনা উঠে এসেছে। তিনি যে গনমাধ্যমকে যে সাক্ষাৎকার দেন তার কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-
তিনি প্রথমেই বলেন, বাংলাদেশে উইপোকা হওয়া আসলে ভারতীয় নাগরিকত্বের চাইতে হাজার গুণ বেশি আকর্ষণীয়।
সত্যি বলতে কি, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আমি অভিযোগের আঙুল প্রথমে হেনরি কিসিঞ্জারের প্রতি তুলতে চাই। ১৯৭০ এর দশকে এই মার্কিন কূটনীতিবিদ বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ ভিক্ষাকারী তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উল্লেখ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী ওই সময়ে, অবশ্য বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমনটাই ছিল। সে সময়ের টেলিভিশন সংবাদে বাংলাদেশে বন্যা দুর্গত অঞ্চলের ছবিও ছিল নিত্য-নৈমেত্তিক ঘটনা। তাই কিসিঞ্জারের সংজ্ঞা সে যাত্রা টিকে গেল।
আজকের বাংলাদেশ অবশ্য ভিন্ন এক দেশ। বাংলাদেশের ব্যাপারে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে সময় লাগলেও, আমি অন্তত এই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। আর আমার মতো ভারতবাসীরও বাংলাদেশ নিয়ে সেই ৭০’এর দশকের আদ্যিকালের ধারণা রাখা উচিত নয়। অথচ গত সপ্তাহে আমাদের উপস্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জি কে রেড্ডি সেই কাজটাই করেছেন।
নিজের বর্ণবাদী মনোভাব চেপে না রেখেই এই মন্ত্রী বলেছেন, নাগরিকত্ব দিলে নাকি অর্ধেক বাংলাদেশের মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসবেন।
এই বক্তব্য শুধু প্রচলিত কূটনৈতিক শালীনতা লঙ্ঘন তাই নয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের সকল মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে যে কিছুই জানেন না এটা তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। নাহলে কি আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা দেয়া চলে। অন্তত বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা দেয়া পরিহাসেরই নামান্তর।
বাংলাদেশ আজ জীবনমান আর মানব উন্নয়ন সূচকের সব কয়টিতেই ভারতের চাইতে অনেক ভালো অবস্থানে। খোলা চোখে তাকালে প্রথমেই নজরে আসে বাংলাদেশের বিপুল মোট উৎপাদন প্রবৃদ্ধি, যা এখন ঈর্ষণীয় ৮ শতাংশের ঘরে। আর ভারত তার প্রবৃদ্ধি বিজেপির শাসনামলেই ৫ শতাংশে নেমে আসতে দেখেছে।
ভারতে এখন স্তিমিত হয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগ আকর্ষণের চাপে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন প্রকৃত বাণিজ্যিক করের আওতা নামিয়ে আনছেন ১৫ শতাংশে। বিনিয়োগ নিয়ে আমাদের অবস্থা টালমাটাল হলেও, বাংলাদেশ কিন্তু বিনিয়োগ প্রবাহ ধরে রেখেছে।
আপনি লন্ডনে যান কি নিউইয়র্কে, সেখানের হাই স্ট্রিটগুলোতে আপনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক দেখতে পাবেন। সেই তুলনায় লুধিয়ানা বা ত্রিপুরায় উৎপাদিত (ভারতীয়) পোশাক খুব একটা চোখে পড়ে কি? আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ডাবল ডিজিট আকারে বেড়েছে। একই সময়ে রপ্তানি বাজারে ভারত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।
তবে শুধু অর্থনীতির উদাহরণ দিলেই তো একটি দেশ সম্পর্কে সব বলা যায় না। মানব উন্নয়ন প্রকৃত উন্নতির প্রধান শর্ত। সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশিদের নারী ও পুরুষদের গড় আয়ু এখন যথাক্রমে ৭৪ এবং ৭১ বছর। ভারতে যা মাত্র ৭০ এবং ৬৭ বছর।
এসব কিছুর পরেও আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলছেন বাংলাদেশ নাকি ভারতীয় নাগরিকত্ব দিলে খালি হয়ে যাবে। পরিসংখ্যান আরও অসংখ্য আছে। নারী শিক্ষা, ইত্যাদি দিক থেকে উন্নতিতে বাংলাদেশ আজ বহু যোজন সামনে।
তাইতো দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের অনেক নাগরিক এখন বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। একথার সত্যতা সব ভারতীয়কে অনুধাবন করতে হবে।
বিজেপি পাণ্ডাদের প্রিয় গরু খেতে কোনো বাংলাদেশি ভারতে আসে না, বরং ভারতীয়রাই সেদেশে যায়। কারণ তারা জানেন, ভারতে বৈধ নাগরিক হলেও জীবনের কোনো মূল্য নেই। তার চাইতে বরং বাংলাদেশে অবৈধ উইপোকা হয়েই বেঁচে থাকা ভালো।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ও হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের মানুষ রয়েছে যাদের পাঠানো রেমিটেন্সের মাধ্যমে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের সুনাম এখন বহি:বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ চলছে। এই বাংলাদেশের বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজের পুরো অর্থ বাংলাদেশই বহন করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
———————————————————–
বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে কোথায় কোথায় এগিয়ে দেখিয়ে দিল হিন্দুস্তান টাইমস
ভারত বাংলাদেশের জনগণকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করলে অর্ধেক বাংলাদেশ জনমানব শূন্য হয়ে যাবে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জে কৃষ্ণ রেড্ডি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কঠোর জবাব দিলেন দেশটির সাংবাদিক করণ থাপার।
তিনি ভারতীয় মন্ত্রীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন- বাংলাদেশ এখন আর ভারতের চেয়ে পিছিয়ে নেই।
যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে তা তুলে ধরেছেন ওই সাংবাদিক। আর এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশটির জনপ্রিয় দৈনিক ‘হিন্দুস্তান টাইমস’।
* জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারত যেখানে শতকরা ৫ শতাংশ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশ সেখানে ৮ শতাংশ হারে এগিয়ে যাচ্ছে।
* ভারতের অর্থমন্ত্রী সীতারাম ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স নির্ধারণ করে যেখানে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণে মরিয়া, সেখানে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে।
* বিশ্বের ধনী শহরগুলো যেমন— লন্ডন ও নিউইয়র্ক যখন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকে ভরে গেছে, সেখানে লুধিয়ানা ও ত্রিপুরায় বানানো কাপড়ের ছোট্ট একটা অংশ জায়গা পেয়েছে।
* বাংলাদেশ যেখানে রফতানি দ্বিগুণ করেছে, সেখানে ভারতের রফতানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
* বাংলাদেশের পুরুষ ও নারীদের গড় আয়ু যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর; ভারতে তা যথাক্রমে ৬৭ ও ৭০ বছর।
* ভারতে নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে ২২ দশমিক ৭৩, বাংলাদেশে সে হার ১৭ দশমিক ১২।
* ভারতে শিশু মৃত্যুর হার ২৯ দশমিক ৯৪, বাংলাদেশে ২৫ দশমিক ১৪।
* ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার বাংলাদেশে ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা ভারতে ৩৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
* বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ৭১ ভাগ নারীই স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, ভারতে এ হার ৬৬ শতাংশ।
* বাংলাদেশে ৩০ শতাংশের বেশি নারী শ্রমে যোগ দিচ্ছেন ; ভারতে এ হার মাত্র ২৩ শতাংশ।একযুগে তা ৮ শতাংশ কমেছে।
* ছেলে-মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির হারে ০ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে এগিয়ে ভারত, সেখানে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে এগিয়ে এগিয়ে।
* সীমান্তের ওপারের অবস্থা শুধু আমাদের চেয়ে ভালোই নয়, বরং তা আরও ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
* ‘কিছু ভারতীয় অর্থনৈতিক কারণে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে’, কথাটা বাস্তবতার নিরিখে সঠিক। মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই উন্নত জীবনযাপনের জন্য ভালো জায়গায় পাড়ি দেয়। যদি আমেরিকা আজ ঘোষণা করে যে তারা নাগরিকত্ব দেবে, তাহলে দেখা যাবে অর্ধেক ভারত খালি হয়ে গেছে। বলতে গেলে এর চেয়েই বেশি খালি হবে। আরেকটা বিষয়, আমেরিকার দরজা এখন বন্ধ থাকলেও আমাদের থামানো যাচ্ছে না।’