এম কে মোমিন :: করোনাভাইরাস দুর্যোগ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলমান ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকার আগ্রাবাদের ২৪ নং মুহুরী পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত, দিনমজুর, হতদরিদ্র ২৮০ টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে ছিলো ১০ কেজি চাল, ২ কেজি চিড়া, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১ লিটার সয়াবিন তেল ও আধা কেজি নুডুুলস। আজ ২৯ মার্চ ২০২০ ইং রোববার সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
এরপর বেলা ১২টার দিকে জেলা প্রেশাসক মহানগরীর খুলশী এলাকায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশী নাগরিকদের খোঁজ নিতে যান। চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে মোট ৯৪৭ জন কোয়ারেন্টিনে আছেন। এর মধ্যে খুলশী এলালায় আনুমানিক ৭০ জনের মতো হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তিনি খুলশীর বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসী এবং বিদেশি নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। বিদেশ ফেরত সবাই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছেন কি না-তা তদারকি করেন ডিসি। ইতোমধ্যে যাদের হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদেরকেও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে ঘরে থাকতে বললেন তিনি। খুলশীর বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসী এবং বিদেশি নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। বিদেশ ফেরতরা সবাই হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছেন কি না-তা তদারকি করেন ইলিয়াস হোসেন। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে পুলিশের সহায়তায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে চারটি ম্যাজিস্ট্রেসি টিম কাজ করছে। খুলশী এলাকায় অভিযানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জাহাঙ্গীর।
খুলশী এলাকা পরিদর্শনকালে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারে যেকোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিশ্চিত করতে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলামকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় জনসমাগম কমাতে ও মানুষজনের চলাচল সীমিত নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আহ্বান জানান তিনি। এদিকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণ, বাজার মনিটরিং, অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম প্রতিরোধকল্পে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেসী টিম। আজ ২৯ মার্চ ২০২০ ইং রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর চান্দগাও, বাকলিয়া, পাচলাইশ ও খুলশী থানা এলাকায় করোনা ভাইরাসজনিত প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম। এসময় সেনা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণ ও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম তদারকি করেন তিনি। অভিযানকালে কামাল বাজার, মৌলভীবাজার, বউ বাজার, বহদ্দার হাট ইত্যাদি কাঁচা বাজার পরিদর্শন ও মাইকিং এর মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে নগরবাসীকে সচেতন করা হয়। ডবলমুরিং, বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গা এলাকায় মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করেন বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান। এসময় মূল্য তালিকা না টাঙিয়ে ব্যবসা পরিচালনার দায়ে একটি দোকানকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি। একইসাথে জনসমাগম বা অহেতুক কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে তাদের বাসায় অবস্থান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
মহানগরীর চকবাজার, বায়েজিদ, কোতোয়ালি ও সদরঘাট এলাকায় করোনা ভাইরাসজনিত প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণ, বাজার মনিটরিং ও সেনা বাহিনীকে আইনানুগ নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদ রানা। অভিযানকালে এসব এলাকার কাঁচা বাজার পরিদর্শন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে নগরবাসীকে সচেতন করা হয়। এ সময়ে চকবাজারে একটি খাবার হোটেল খোলা রাখায় দন্ডবিধির ২৬৯ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া বায়েজিদ এলাকায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে আইন অমান্য করায় ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাছাড়া বেশ কিছু দোকানের সামনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করণে সচেতন করে দেওয়া হয় ও অন্যদের এটা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিকে নগরীর হালিশহর, পাহাড়তলী ও আকবর শাহ এলাকায় করোনা ভাইরাসজনিত সেনা বাহিনীকে সাথে নিয়ে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আশিক-উর রহমান। অভিযানকালে এসব এলাকার কাঁচা বাজার পরিদর্শন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে নগরবাসীকে সচেতন করা হয়। এ সময়ে মোটরসাইকেল আরোহী বেশ কয়েকটিকে বের হবার কারণে তাদেরকে বাসা থেকে বের না হবার পরামর্শ প্রদান করে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া মোবাইল রিচার্জ ও লন্ড্রি দোকান খোলা রাখায় তাদের দোকান বন্ধ করে দ্রুত বাসায় চলে যাবার জন্য বলা হয়। তাছাড়া কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেও দোকান ও ফার্মেসীর সামনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে সচেতন করে দেওয়া হয় ও অন্যদেরকে এটা করতে পরামর্শ দেয়া হয়।