॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। এর প্রভাব পড়েছে রাঙ্গামাটিতেও। আর প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় মানুষ তেমন একটা বের হচ্ছে না। ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত ও জনসাধারণকে ঘরের থাকার আহ্বান জানিয়ে শহরের প্রতিটি এলাকায় কাজ করছে জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম, সেনাবাহিনী ও পুলিশ। তবে এই অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ব্যাংকে চাকুরীরত কর্মকর্তা, কর্মচারী, সংবাদকর্মী, বিদ্যুৎ বিভাগ, পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী, স্বাস্থ্য বিভাগ, বাংলাদেশ মৎস্য কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারী বিভাগ সমূহ। এদিকে, এই সব বিভাগ সমূহ রাঙ্গামাটি শহরে তাদের কাজ পরিচালনা করলেও রাঙ্গামাটি থেকে প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াত করছে রাঙ্গামাটি বিএফডিসির মাছ পরিবহনের গাড়িসহ অন্যান্য জরুরি পরিবহনগুলো। আবার এসব গাড়িতে করেই প্রশাসনের ‘চোখ ফাঁকি’ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন প্রবেশ করছে রাঙ্গামাটি শহরে।
অন্যদিকে জরুরি পরিবহনে কর্মরত চালক-সহকারীরাও বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে বাধ্য হয়ে মেলামেশা করছেন। এতে করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে রাঙ্গামাটি শহরে। আর এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মরত কর্মচারী, শ্রমিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা। এ নিয়েও চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্বেগের কথা। সরেজমিন পরিদর্শনে রাঙ্গামাটি বিএফডিসির মাছের পল্টুনে গেলে রাঙ্গামাটি বিএফডিসি কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার সত্বে জানান, সকাল থেকেই এখানে কাজ করতে হচ্ছে। কাজের কারণে অনেকের সঙ্গেই মিশতে হয়। আবার এখানকার গাড়িগুলো বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করে। আবার এসব গাড়িগুলোর চালক-সহকারীদের সঙ্গেও আমাদের মেলামেশা করতে হয়। যেহেতু করোনা একটা সংক্রমণ রোগ, সেহেতু লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত নয়, তবুও বাধ্য হয়ে মেলামেশা করতে হচ্ছে। আবার কাজ না করলে পেট চলবে না; আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছেনা।
রাঙ্গামাটির বিএফডিসির অধিকাংশ ব্যবসায়ী আপদকালীন সময়ে মাছ শিকার আহরণ ও পরিবহন বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, আমরা নিজেদের স্বার্থের জন্য পুরো জেলার ক্ষতি করছি। তারা বলেন, রাঙ্গামাটি থেকে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ট্রাক ঢাকা যাচ্ছে এবং আসছে। এই ট্রাক গুলোর ড্রাইভার ও হেলফার প্রতিনিয়ত আমাদের সাথে উঠা বসা। ব্যবসার কারণে আমরা তাদেরকে আমাদের রুমে আসতে নিষেধ করতে পারছি না। তাই প্রশাসন যদি চাই কিছু দিনের জন্য মাছ শিকার ও পরিবহন বন্ধ রাখতে পারে। তাহলেই মনে হয় আমাদের ঝুঁকি কিছু কমে আসবে।
বিএফডিসি তথ্য মতে, অন্যান্য সময়ে যেখানে প্রতিদিন রাঙ্গামাটিতে বিএফডিসি’র তিন কেন্দ্র থেকে গড়ে ১৮-২০ টন মাছ আহরণ করা হতো। সেটি এখন গড়ে আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮-১০ টনে। পুরো রাঙ্গামাটি জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত প্রায় ২২ হাজার জেলে রয়েছে; এ খাতের ওপর নির্ভরশীল জেলার শতাধিক ব্যবসায়ী। আবার একজন ব্যবসায়ীর অধীনে কাজ করেন ৫-৮ শ্রমিক।
রাঙ্গামাটি পৌর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব এম জিসান বখতেয়ার বলেন, রাঙ্গামাটির বিএফডিসি থেকে প্রতিদিন মাছ পরিবহনের গাড়িসহ অন্যান্য সেবার গাড়িগুলো রাঙ্গামাটি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আসা যাওয়া করছে। আবার যারা বাইরে থেকে আসছে তাদের সাথে এইসব শ্রমিকসহ অন্যান্য কর্মচারীরা মেলামেশা করছে। এতে করে রাঙ্গামাটিতেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না। তাই আমি অনুরোধ করব আপদকালীন সময় বিবেচনা করে রাঙ্গামাটি থেকে মাছ আহরণ ও পরিবহন আপাতত বন্ধ করা প্রয়োজন।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিদিনই রাঙ্গামাটি শহর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে মাছ পরিবহনসহ কাঁচামালের গাড়িগুলো যাতায়াত করছে। এছাড়া এসব গাড়িতে করে প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকা থেকে বিভিন্ন মানুষ রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করছে। তাদের ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে রাঙ্গামাটিবাসীও ঝুঁকির মুখে পড়বে। এই বিষয়টি বিশেষভাবে দেখার জন্য জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেয়া প্রয়োজন।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জানান, রাঙ্গামাটির তিনটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিনই ঢাকা-চট্টগ্রামে মাছ পরিবহন করা হচ্ছে। তবে করোনার প্রভাবে কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণ পূর্বের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। এতে করে রাঙ্গামাটি থেকে প্রতিদিন ৪-৫ গাড়ি গিয়ে মাছ পরিবহন করা হচ্ছে। আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটিতে আসা গাড়ি চালক ও সহকারীকে রাঙ্গামাটি আসার পর ভালো করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আওতায় এনেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কি করা যায় একটি সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা বিএফডিসির কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করেছি। আসলেই বিষয়টি একটু ভাবার বিষয়। আমরা এই বিষয়ে ভাসছি। যে কোন মুহুর্তে যে কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।