॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলায় এবার পানিবাহিত আমাশয় রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দারা। এর মধ্যে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মৃতরা হলেন লংথাংপাড়া ৩য় শ্রেণীর ছাত্র ডালুং খুমি (১০) এবং সাংকিং পাড়ার বাসিন্দা নাংলং খুমি (৭০)। তারা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা।
লংথাং পাড়ার কারবারী (গ্রাম প্রধান) থেউলাং খুমি জানান, আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি এই দুজন পেট ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে মারা যায়, এই এলাকার খুমি সম্প্রদায়ের ৩টি পাড়ায় হঠাৎ আমাশয় রোগের প্রকোপ দেখা দেয়।
অন্য আক্রান্তরা হলেন অংথাং পাড়ার বাসিন্দা কাইং হয় খুমি (৭২), থাংঅং খুমি (৭০), সুইচেং খুমি (৬৯), থংহ্লা খুমি (২২) এবং থৈতাং খুমি (২৫)। এছাড়া সাংকিং পাড়া ৬জন ও অংতং পাড়া ৩ জন আক্রান্ত রয়েছে।
আক্রান্তদের একজন থৈতাং খুমি বলেন, তিন ধরে তার ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা হচ্ছে। প্রথম দিনে প্রায় বিশ বারের মত ডায়রিয়া হয়েছে, সাথে বমিও ছিল, তবে ওষুধ খাওয়ার পরে একটু সুস্থতাবোধ করছে।
সাংকি পাড়ার বাসিন্দা লংনে খুমি জানিয়েছেন, তার পাড়ায়ও এখন ৫ জন আক্রান্ত রয়েছে। আক্রান্তদের দূরের একটি বাজার থেকে ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মংহ্লাপ্রু মারমা জানান, মূলত দূষিত পানি পান করে টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ পানি বাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বছরে এ সময় এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পাড়া থেকে নদীপথের এলাকা বেতছড়া বাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ওই ক্লিনিক থেকে প্রাদুর্ভাব এলাকায় দুজন স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর কথা জানান তিনি।
বান্দরবানের সামাজিক সংগঠন খুমি সোস্যাল কাউন্সিলের নেতা সিংয়ং খুমি জানান, ওই এলাকায় কয়েক কিলোমিটার দূরত্বভেদে ৫টি পাড়ায় ৯২টি খুমি পরিবার রয়েছে, পাড়াগুলো খুব উঁচু এবং কিছুটা দুর্গম। এ পাড়াগুলোর অবস্থান রোয়াংছড়ি উপজেলা হলেও চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে। এর বাইরে এই উপজেলার আর কোথাও খুমি সম্প্রদায় নেই।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা: অং সুই প্রু মারমা বলেন, আমরা গত ২০ এপ্রিল রাতে জানতে পারি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় পানিবাহিত আমাশয় রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দারা। এর মধ্যে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আমাশয়ে মৃত্যু হওয়ার পরপরই আমরা ওই পাড়াতে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরীভাবে পাঠিয়েছি এবং তাদের স্বাস্থ্য সেবা ও জরুরী ওষুধ দেওয়ার জন্য তাদের নিদের্শনা প্রদান করেছি। সিভিল সার্জন ডা: অং সুই প্রু মারমা আরো বলেন, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের আতংকের কারণে এবং যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিকমত যেতে পারছে না এবং দুর্গম এলাকা হওয়ায় সঠিক খোঁজখবর নিতে পারছে না।