দেড় মাসেও মিলেনি বন বিভাগের ছাড়পত্র দীঘিনালায় মাইনী নদীতে নষ্ট হচ্ছে বাশঁ

সোহেল রানা দীঘিনালা প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মাইনী নদীতে নষ্ট হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। করোনা ভাইরাসের কারনে একদিকে পরিবহন সংকট অন্যদিকে বন বিভাগের ছাড়পত্র না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাঁশ ব্যবসায়ীরা। এরই মাঝে দেখা দিতে পরে পাহাড়ী ঢলের ¯্রােতে বাঁশ ভেসে যাওয়ার আশংক। তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে পরিবহনের অনুমতি দেয়া না হলে প্রায় আড়াই কোটি টাকার লোকসানের হিসাব গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। তাছাড়াও পরিবহন বন্ধ থাকায় কাটার, চালিবাহক ও লোডিং কাজে নিয়োজিত প্রায় ৫০ হাজার পাহাড়ীÑবাঙ্গালী বাঁশ শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় দীর্ঘ দেড়মাস ধরে সামাহীন দুভোগে দিন পার করছে।
বাঁশ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
উপজেলার বাবুছড়া বাজার সংলগ্ন মাইনী নদীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক পথে সমতল এলাকায় পরিবহন করার জন্য নদীর বুকে মজুদ করা হয়েছে সারি সারি অশংখ্য বাঁশের চালি। এসব চালিতে রয়েছে মূলিবাঁশসহ নানা প্রজাতির পাঁচ লক্ষাধিক বাঁশ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে পরিবহন সংকটের পাশাপাশি দীর্ঘ দেড় মাসেও মিলেনি বন বিভাগের ছাড়পত্র (টিপি)।
এ সময় নদীর পাড়ে কথা হয় কাটার, চালিবাহক ও লোডিং কাজের কয়েকজন বাঁশ শ্রমিকের সাথে। তাদেরই একজন জাকির হোসেন বলেন, বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় দীর্ঘ দেড়মাস ধরে আমরা কর্মহীন। নেই কোনো উপার্জন। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহার আর অর্ধাহারের মাঝে কাটছে। তিনি আরও জানান, আমরা সরকারি ত্রানসামগ্রী চাই না। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা পালনের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্মে ফিরে যেতে চাই।
বাবুছড়া বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, এই এলাকার অসংখ্য মানুষ বাঁশ শ্রমিক। তাই বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় কাটার, চালিবাহক ও লোডিং কাজে নিয়োজিত শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। অবিলম্বে ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে সমতল এলাকায় বাঁশ পরিবহনের অনুমতি দেয়া না হলে এ সংকট তীব্র আকার ধারন করবে।
বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অরুন বিকাশ চাকমা জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবহন করতে না পারলে বাঁশগুলো পাহাড়ী ঢলের ¯্রােতে ভেসে যাবে। তখন মূলধন হারানোর পাশাপাশি ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের গুনতে হবে মোটা অংকের লোকসানের হিসাব। তাছাড়াও বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ হাজার বাঁশ শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় দীর্ঘ দেড়মাস ধরে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। আবেদনমূলে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ জীবন চাকমা জানান, ব্যবসায়ী, কাটার, চালিবাহক ও লোডিংসহ নানা কাজে বাঁশ শিল্পের সাথে আমার ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। দীর্ঘ দেড়মাস যাবৎ বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় এ মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। তাই স্থানীয় বাঁশ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে বাঁশগুলো সমতল এলাকায় পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নাড়াইছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম রসুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করার পরও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আবেদন প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। বন বিভাগ বাঁশ কর্তনের অনুমতি দেয়ার পরেও কেনো পরিবহনের ছাড়পত্র দেয়নি তা তাদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে বলেও জানান তিনি।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031