॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি পৌর শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কের যত্রতত্র বিচরণ করছে গরু দল। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দিনের ব্যস্ত সময়ে ও সন্ধার পর সকল যানবাহন চালকসহ রাস্তায় চলাচলকারী জনগণকে বিড়ম্বনা ও প্রতিনিয়ত নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আর সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে চালকদের। শহরজুড়ে অবাধে গরুর দল চরে বেড়ালেও এসব নিয়ন্ত্রণে মাথাব্যথা নেই রাঙ্গামাটি পৌর কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কে শহরবাসীর ভয় ও বিড়ম্বনার প্রধান কারণ শহরের যত্রতত্র অবাধে বিশালাকারে দল বেঁধে গরু ঘুরে বেড়ানো। সড়কে আশেপাশে ও মাঝখানে বসে থাকা। আর গরুর দলের কারণে ভয়ে ভয়ে পথ চলে নারী-শিশুরা। এ ছাড়া নগরীর প্রায় সব এলাকায় এখন গরুর যন্ত্রণায় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ।
বিশেষ করে শহরের বনরুপা এলাকায় বেশ কয়েকটি দল বেঁধে গরু যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সড়ক পার হয়। এরপরে বাণিজ্যিক শহর বনরুপা সিঙ্গারের সামনে মোড়ে রাঙ্গামাটি পৌরসভার বসানো ডাস্টবিনের দিকে গরুগুলো অবস্থান নেয়। ডাস্টবিনে ঢেলে আবর্জনাগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করে ফেলছে গরুগুলো। এতে করে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। শহরের বনরুপা বাজার সংলগ্ন চৌমুহনীতে প্রধান সড়কের আশে পাশে ও মাঝখান ৪ থেকে ৫টি গরু প্রতিনিয়ত ঘোরাঘুরি করে থাকে। এ সময় যানবাহনগুলো গরুটিকে পাশ কাটিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আর শহরের ভেদভেদী, তবলছড়ি ও রিজার্ভ বাজার এলাকাতেও একই অবস্থা। রাস্তায় হরহামেশা মলমূত্র ত্যাগ করে গরুগুলো। ফলে সৌন্দয্য ও পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি দুর্গন্ধে পথচারীদের চলা দায় হয়ে পড়ছে দিন দিন।
শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনরুপা, চম্পকনগর, ট্রাইবেল আদম, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, কলেজ গেইট, ভেদভেদীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়িতে গরু লালন পালন করে থাকে। আর গরুগুলোর খাওয়ার খরচ সাশ্রয় করতে মালিকেরা দিনে এমনকি রাতেও শহরের বিভিন্ন সড়কে গরু ছেড়ে দিয়ে থাকে।
সড়কে চলাচলরত বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল আরোহী ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কে গরু দেখলেই তারা ভয়ে থমকে দাঁড়ায়। গরুর পেছনে পেছনে হাঁটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। বিশেষ করে গাড়ী চালকরা বেশ বিপাকে পড়েন। প্রতিনিয়ত গুরুগুলো রাস্তার পায় হয়, মূল সড়কে বসে থাকে অথবা রাস্তায় শুয়ে পড়ে। তারপর গরু আর ওঠানো যায় না। গাড়ীর হর্ণ দিলেও গরুগুলো উঠে না।
শহরের বনরুপা এলাকার ব্যবসায়ী পলাশ বড়–য়া বলেন, গরুর কারণে মটর বাইক, ট্রাক চালকদের দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পথচারীসহ বিশেষ করে শিশু ও নারীরা ভয় নিয়ে পথ চলে। বেশ কয়েক মাস কিংবা বছর আগে গরুর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছিল রাঙ্গামাটি পৌরসভা। কিন্তু পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে। এতে করে আবারো গরুর মালিকরা গরুগুলোকে ছেড়ে দেয় রাস্তায়।
সড়কে স্থানীয় ট্রাক চালক মফিজুর রহমান বলেন, রাস্তাঘাটে অবাধে গরুর চলাচলে আমাদের যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। রাস্তায় বসে থাকা এসব গরু হর্ন দিলেও সরে না। বেওয়ারিশ গরুর দল চরে বেড়ায় শহরের এপ্রান্ত থেকে ঔপ্রান্তে। এসব গরুর মালিক কারা ও কীভাবে? অধিকারে সাড়া শহরময় ছেড়ে দেন এ নিয়ে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শহরের বনরুপায় অবস্থিত আলিফ মার্কেটের প্রহরী বলেন, প্রতিদিন একদল গরু প্রধান সড়ক ও মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে। প্রায়ই গরু মার্কেটের সামনে এসে মলমূত্র ত্যাগ করে যায়। বিশেষ করে রাতে মার্কেট বন্ধ থাকার সুযোগে গরুর দল মার্কেটের সামনে গাড়ী পার্কি এর জায়গায় চলে আসে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় নিজেকে।
বনরুপার চৌমুহনীতে এক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন, মাঝে মধ্যে গরু তাঁর দোকানে হঠাৎ এসে ফল খেয়ে ফেলে। যানজটের কারণে অনেক সময় গরু দোকানের সামনের ক্রেতাদের গুঁতো দেয়। সারা শহর ঘুরে বেড়ায় এসব গরু। এগুলোর শরীরে কোনো রশি নেই। পৌরসভার পক্ষ থেকেও এইসব গরুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে সুশান্ত বড়–য়া বিপ্লব নামের একজন লিখেন, গরুগুলার মা বাপ কি নাই? দিন নাই রাত নাই সব সময় দেখি এইভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় অথবা শুয়ে তাকে। এতে করে যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। পৌরসভার কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন আপনারা এর একটা সমাধান করেন।
স্থানীয় কাঁঠালতলী এলাকার বাসিন্দা মো: বদিউল আলম বলেন, শহর দাপিয়ে বেড়ানো প্রায় শ’দুশত গরুর মালিকরা শহরেই বাস করেন। মালিকরা এসব গরু শহরে ছেড়ে দেন। গরুগুলো খাবারের সন্ধানে শহরের ডাস্টবিনগুলোতে হানা দেয়। ফলে ময়লা-আবর্জনা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ দূষিত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরুর মালিক জানান, জন্মের পর থেকেই উন্মুক্ত রাখায় গরু হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। দুধ দেওয়ার সময় গরু নিজ থেকেই মালিকের বাড়িতে নির্দিষ্ট স্থানে চলে আসে। এ ছাড়া বাড়িতে রাখলে গরুর খাবারের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। সড়কে ছেড়ে রাখলে সড়কের পাশের আস্তাকুড়ে থাকা বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে এদের পেট ভরে যায়।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন জানান, আমরা ইতিমধ্যে গরু অবৈধভাবে চলাচল করে বলে তথ্য ও অভিযোগ পেয়েছি। আগেও আমরা গরুর মালিকদের সর্তক করেছি। আবারো গরুর মালিকদের ডেকে তাঁদের বোঝানো হবে, অবাধে দিনের বেলায় কিংবা রাতে তাঁরা যেন গরু সড়কে ছেড়ে না দেন। গরুর মালিকদের বের করতে শহরে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মালিকেরা গরুগুলোকে ছেড়ে না দেন। শহরের আমাদের গরুর খোঁয়াড় রয়েছে। অবৈভাবে গরুর চলাচল করলে জড়িমানার ব্যবস্থা করা হবে।
রাঙ্গামাটি পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সড়কে গরুর অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে পৌরসভা একাধিকবার উদ্যোগ নিতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তারা তা বন্ধ করতে পারেনি। ওই সব গরুর মালিকেরা নানাভাবে তদবির করে পৌরসভার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করেন। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন সড়কে অবাধে বিচরণ করছে স্থানীয় লোকদের শতাধিক গরু। এতে এলাকার মানুষ দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
পৌরসভার জনস্বাস্থ্য ২০০৯-এর আইনের (৫০ ধারায়) স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ গবাদিপশু আবদ্ধ ও খোঁয়াড়ের ব্যবস্থা করতে পারবে। আবদ্ধকৃত পশুর জন্য জরিমানা ও ফি আদায়ের বিধানও রয়েছে। কিন্তু রাঙ্গামাটি পৌরসভাকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কখনো এই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
শহরে নতুন কোনো অতিথি এলেই তার চোখে যে বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগে তা হলো এ শহরের নোংরা চেহারা। শহরের এই চিত্র প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের রুচিবোধকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে দিনে দিনে পরিবেশ পরিবেশ আরো অবনতির দিকে যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।