॥ নন্দন দেবনাথ ॥ চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মোটর মালিক সমিতির সীমাহীন নৈরাজ্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টার্মিনাল ইজারা নিয়েছে চট্টগ্রাম মোটর মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের যোগ সাজসে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও সমবায় সমিতি। গত কয়েকবছর ধরে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির কয়েকজন সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে অল্প টাকায় ইজারা নিয়ে দ্বিতীয় পার্টিকে বেশী টাকা দিয়ে ইজারা প্রদান করে বাড়তি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাই রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি উন্মুক্ত দরপত্র দেয়ার জন্য দাবী জানান রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘ বছর ধরে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতি টার্মিনাল ইজারা নিয়ে ব্যবসা করলেও কোন দারোয়ান কিংবা পাহাড়াদার নিয়োগ করেনি। বর্তমানে টার্মিনালের অধিকাংশ জায়গা দখল করে ভাড়া দিয়েছে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। বর্তমানে রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাস থাকার কথা থাকলে ও রাঙ্গামাটির যত্র তত্র বাস রেখে ড্রাইভার ও হেলফার বাড়ী চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টার্মিনালে বর্তামনে থাকছে কাঠভর্তি ট্রাক। এছাড়া পুরো টার্মিনাল জুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ওয়ার্কসপ। ওয়ার্কসপের কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে পুরো টার্মিনালের জায়গা। টার্মিনালের পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বর্তমানে সবত্র পরিবেশ অত্যান্ত নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড টার্মিনালটিকে সুন্দর দৃষ্টি নন্দন করলেও বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে টার্মিনালটি। উন্নয়ন বোর্ড বিশাল অংকের টাকা খরচ করে রাঙ্গামাটি জেলার অভ্যন্তরীন সড়কের জন্য প্রতিটি এলাকার টিকেট কাউন্টার থাকলেও টার্মিনালে সব কাউন্টার এখন অবৈধ দখল হয়ে গেছে। এ গুলোতে বলে জুয়া ও মাদকের আড্ডা খানা।
বাস টার্মিনালটি ইজারা দিয়ে সমবায় সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রক্ষাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকলেও চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির অবৈধ স্বার্থে তারা কুক্ষিগত গত করে রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ডাক দিলেও সমিতির সদস্যদের কারণে কোন ভাবেই বাইরের কেউ টেন্ডার ডাকে অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। তারা হুমকী দিয়েছে বাইরের কেউ ডাক গ্রহণ করলে তারা কেউ বাস টার্মিনালে ঢুকাবে না। সেই কারণে বাইরের কেউ ডাকে অংশ গ্রহণ করতে পারেনি।
অপরদিকে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি মালিক সমিতির যতো ইনকাম রয়েছে সব গুলো অর্থ নিয়ে যাচ্ছে রাউজান সহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন নেতা। তার মধ্যে রাঙ্গামাটির হাতে গোনা কয়েকজন নেতা তার কিছু কিছু ভাগ পাচ্ছে। যার কারণে রাঙ্গামাটির মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজদের আখের গোচাচ্ছে ও বিশাল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে নেতারা। অপরদিকে শ্রমিকের নাম দিয়েও রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার কিছু মানুষ রাঙ্গামাটি থেকে টাকা উপার্জন করে মালিক বনে গেলেও রাঙ্গামাটির মানুষদেরকে নুন্যতম সেবা তারা দিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে।
সরকার বাস মালিকদের অফিস ও বাস ষ্টেশন বানানোর জন্য জায়গা দিয়েছে। কিন্তু তারা এটাকে ব্যবসায়িক কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। রাঙ্গামাটি পুরাতন বাসষ্টেশনের জন্য জায়গাতে তারা দোকান ভাড়া দিয়ে বিশাল অংকের টাকা সমিতি নিজেরাই ভাগ বাটোয়ারা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পুরাতন বাস টার্মিনালে কাউন্টারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিলেও তারা এগুলোতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে প্রতিটি দোকান ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা সালামি নিয়ে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। টার্মিনালের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, আবাসিক হোটেল সহ বিভিন্ন অবস্থান থেকে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আর্থিক লাভবান হচ্ছে। এই টাকা গুলো নিজেদের উন্নয়নে খরচ করলেও রাঙ্গামাটি যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে একটি টাকাও খরচ করছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
এ বিষয়ে বাস শ্রমিক সমিতির নেতা মোঃ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইজারা আমরা মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতি নিয়েছি তা নিয়ে বাইরে দিয়ে বাড়তি যে টাকা পায় তা দুই সমিতি ভাগ বাটোয়ারা করে নেই তা সমিতির স্বার্থে এখানে একক কেউ টাকা গ্রহণ করতে পারে না।
এদিকে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সৈয়দ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক আমরা নিয়েছি। বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আবেদন করার পর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়তি টাকার মাধ্যমে এই ডাকটি আমাদের দেযার অনুমতি দেয়। তাই আমরা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায় ইজারা দিনে পারছি। তা আমরাই চালিয়ে শ্রমিক ও মালিক সমিতি কিছু আয় হয় তা সমিতিতেই থাকে। বাইরের লোককে নতুন করে ইজারা দেয়ার কথাটি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে বিভিন্ন কথার এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভাই আমরা ইজারা নিয়েছি। তবে সমিতির স্বার্থে তা নতুন পার্টিকে ইজারা দিয়ে বাড়তি টাকা গুলো সমিতির মানুষের কল্যাণেই রাখা হচ্ছে। তাকে রাঙ্গামাটির বাসের উন্নতি করার কথা বললে তিনি বলেন, কেন আমরা অনেক উন্নতি করেছি রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে চলাচলরত বাস গুলো।
সমবায় সমিতি সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা বার বার চাচ্ছি টার্মিনালটিকে উন্মুক্ত দরপত্রে দিতে কিন্তু কোন ভাবেই দিতে পারছি না। বাইরের কেউ এই ডাকে অংশ গ্রহণ করে না তাই সমিতির লোকেরা ইজারা ডাক নিচ্ছে। তিনি বলেন, টার্মিনালের জায়গাটি সমিতির জায়গা এখানে অবৈধ দখলদারদেও কারণে আমরা অতিষ্ট হয়ে আছি। তিনি বলেন, আমাদের একটি স্বপ্ন ছিলো কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষীর কারণে স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়ন করতে পারছি না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য আশীষ কুমার বড়–য়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবারই উন্মুক্ত দরপত্র দেয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রদান করছি কিন্তু কেউ অংশ গ্রহণ করে না। তাই আমাদের পক্ষে তো কাউকে ডেকে ডেকে দরপত্র বিক্রি করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এবার আমরা রাঙ্গামাটি যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি যাতে টার্মিনালটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করি। আমরা জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছরের জন্য ইজারা দেয়। সময় মতো আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।