চট্টগ্রাম ব্যুরো :: অবিভক্ত ভারতবর্ষের অসাম্প্রদায়িক মননের মনীষী, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী’র ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অদ্য ২৪ অক্টোবর কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র উদ্যোগে মোমিন রোডস্থ এতিমখানা প্রাঙ্গণে কদম মোবারক এতিমখানার সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট (ইনচার্জ) লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার’র সঞ্চালনায় সভায় মূখ্য আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ শামসুদ্দিন শিশির, অধ্যক্ষ ড. মোঃ সানাউল্লাহ, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের খতীব অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, ইসলামাবাদীর দৌহিত্র ও যুব উদ্যোক্তা এ.এম.এস. ইসলামাবাদী গাজী, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের মতোয়াল্লী মোহাম্মদ আজাদুল্লাহ খান, এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, লেখক নেছার আহমেদ খান, সংগঠক বোরহান উদ্দিন গিফারী, হাফেজ মাওলানা ইকরাম হোসেন, মিনহাজুর রহমান শিহাব প্রমুখ। সভায় ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ও সোচ্চার। চট্টগ্রামের যেসব মনীষী তাঁদের অলোকসামান্য প্রতিভার ছটায় নিখিল বঙ্গদেশকে উদ্ভাসিত করে তুলেছিলেন, যাঁরা কলকাতাকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ-বাংলা ও বার্মার স্থানে স্থানে সাময়িক কর্মস্থল স্থাপন ও পরিভ্রমণ করে জাতিকে জাগানোর প্রায় অসম্ভব সাধনায় লিপ্ত হয়েছিলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, সমাজসংস্কার, ধর্মপ্রচার, রাজনীতি, আইনসভা যখন যেদিকে তিনি তাঁর প্রতিভা কর্ষণ করেছেন, মুঠো মুঠো ফসলে যেন তাঁর গোলা ভরে উঠেছে। এমনই বিচিত্র পথে বিপুল সৃজনপ্রসূ হয়েছিল তাঁর যুগন্ধর প্রতিভা। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন মানবতাবাদে উজ্জীবিত, অহিংস মতবাদের ধারক, সুশিক্ষার প্রসারে দক্ষ এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব, উদার চিন্তার ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মনীষী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী এবং বিপ্লবীও ছিলেন তিনি। বক্তারা বলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, গোঁড়ামিমুক্ত ধর্মীয় নেতা, নিরলস কর্মী, অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী, অনন্য সমাজ সংস্কারক, শিক্ষা সম্প্রসারণের অগ্রদূত এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, দাতা ও সমন্বয়কারী। নিজের ভোগ-বিলাস পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে পরহিতব্রতে স্বীয় জীবন নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন যা সকলের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। প্রখ্যাত আলেম হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন যুক্তিবাদি, বিজ্ঞানমনষ্ক ও সমাজনিবিষ্ট জনসেবক। বক্তারা আরো বলেন, স্বকীয় সাধনা, চিন্তা, ত্যাগী জীবন সংগ্রাম ও ইতিবাচক কর্মযজ্ঞের ফলশ্রুতিতে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন। তিনি উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ দর্শনের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন ।
উল্লেখ্য, ২৪ অক্টোবর মাওলানা ইসলামাবাদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন, জেয়ারত, দোয়া মাহফিল ও তবারুক বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।