॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে ৩দিন ব্যাপী কর্মসূচী শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে সংগীত ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. মুছা মাতব্বর। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অমিত চাকমা রাজু, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি মনসুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ এমরান রোকন প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেছে। তেমনি সমৃদ্ধশীল হয়েছে পাবর্ত্যাঞ্চলও। পাহাড়ের মানুষদের জীবনধারা অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সরকারের আন্তরিকতা শিক্ষা, চাকরী ও উন্নয়নের জোয়ার বইছে পার্বত্যাঞ্চল।
বক্তারা আরও বলেন, সরকার সকল ক্ষেত্রে জনগনের সুখ শান্তিতে দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গিকার বদ্ধ। তাই পার্বত্যাঞ্চলে সরকারের এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সকল জাতিগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করাতে হবে।
বক্তরা আরো বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা খুনিদের বিচার কাজ শুরু করেছে। তিনি দেশকে একটি উন্নয়নশীল ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিনত করেছে। যা অন্যকোন সরকার করতে পারেনি। তিনি সকল ক্ষেত্রে জনগনের সুখ শান্তিতে দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গিকার করেছেন। জননেত্রীর সে অঙ্গীকার পুরনে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
৩দিনের অনুষ্ঠান মালায় আজ বুধবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য প্রতিযোগিতা এবং শুক্রবার (১৭মার্চ) সমাপনী অনুষ্ঠান মালায় বিকাল ৪টায় রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজ গেইট হতে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালি শেষে বঙ্গবন্ধুর পাদদেশে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
রাঙ্গামাটিতে মাসব্যাপী তাঁত বস্ত্র ও হস্তশিল্প মেলা শুরু
পাট চাষীদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হবে—বৃষ কেতু চাকমা
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেছেন, সোনালী আঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরে আনতে পরিষদ হতে পাট চাষীদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, এক সময় পাটকে আমাদের দেশের সোনালী আঁশ বলা হতো কিন্তু সঠিক মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। এর ফলে দেশে পলিথিন এর ব্যবহার দিন দিন যেমন বেড়েছে তেমনী চাষীরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। এই অপচনশীল পলিথিন ও তামাক চাষের ফলে প্রতিনিয়তই পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তিনি তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে পাট চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগকে উদ্দ্যেগ গ্রহনের পরামর্শ দেন। তিনি পাটজাতীয় পণ্য ব্যবহারে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
রবিবার (১২মার্চ) বিকেলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ও রাঙ্গামাটি উদ্যেক্তা উন্নয়ন পরিষদের আয়োজনে জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত মাসব্যপী তাঁত বস্ত্র ও হস্তশিল্প মেলার উদ্ধোধনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
উদ্ধোধন শেষে অতিথিরা মেলায় বসানো স্টলগুলো পরিদর্শন করেন। মাসব্যাপী এ মেলায় পাটজাতীয় পণ্যসামগ্রী, টেক্সটাইল, হস্তশিল্প’সহ বিভিন্ন প্রকারের মালামাল নিয়ে মোট ৫০টি স্টল বসে।
অনুষ্ঠানে পার্বত চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য মোঃ শাহজাহান মোল্লা, বিআইডিডি’র চেয়ারম্যান সুব্রত রাহা ও আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা বক্তব্য দেন।
উচ্চ আদালতের রায়ের তিন মাস পার হয়ে গেলেও রাঙামাটি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে উজ্বল হয়ে শোভা পাচ্ছে দেশ কুখ্যাত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের নামে সড়ক ও এলাকার নাম। শুধু তাই নয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরও রাঙামাটি শহর থেকে এই কুখ্যাত রাজাকারের নামের সড়কের নাম বদলে ফেলতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। রহস্যজনকভাবে চুপ রয়েছে রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। চুপ রয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বজাধারী গণজাগরণ মঞ্চ। রাঙ্গামাটির যারা বাসিন্দা তারা তো এমনিতেই জানেন, তাছাড়া, যারা সেখানে কিছুদিন থেকেছেন কিংবা সেখানকার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন তারাও বলতে পারবেন যে, রাঙ্গামাটি শহরে একটি এলাকার নাম ত্রিদিব নগর, সংশ্লিষ্ট রাস্তাটির নামও ত্রিদিব রায় সড়ক!
গত ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা, সড়ক ও রাস্তাঘাট থেকে তাদের নাম মুছে ফেলা হবে। সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্দেশ পালনে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহায়তা নিতে হবে।
হাইকোর্ট গত ৬ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলতে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে শিক্ষা সচিব ও স্থানীয় সরকার সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ২০১২ সালে এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে খুলনার খান-এ সবুর রোড এবং কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ আজিজুর রহমান মিলনায়তনের কথা উল্লেখ করা হয়। এর পর ২০টি স্থাপনার নামের তালিকাসহ সম্পূরক আরেকটি আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে রিটকারীদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার একে রাশিদুল হক।
এদিকে আদালতের এই নির্দেশের পর রাজাকারের নামে নামকরণকৃত নাটোর শহরের দু’টি সড়কের নামফলক হাইকোর্টের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শহরের ট্রাফিক মোড়ে আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়া এবং বড়হরিশপুর বাসটার্মিনালের বিপরীত পার্শ্বে কছের উদ্দিন নামে দুই রাজাকারের নাম ফলক দুটি ভেঙ্গে ফেলেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি। তবে হাসপাতাল রোডে আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়ার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার আলী এবং বড়হরিশপুর বাসটার্মিনালের বিপরীত পার্শ্বে কছের উদ্দিন চেয়ারম্যান রোডের নামের পরিবর্তে বীরপ্রতীক সোলেমান আলীর নাম নামফলকে স্থান পাবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়। এসময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে আদালতের নির্দেশের পর মাগুরা জেলায় চার রাজাকারের নামাঙ্কিত সড়কের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ি এই নামবদল করা হয়েছে। চারটি সড়কের তিনটি রয়েছে মাগুরা পৌরসভায় এবং একটি রয়েছে জেলার বিনোদপুর উপজেলায়। পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল আজ পৌর এলাকায় তিনটি সড়কের নাম বদলের নির্দেশ দেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী বলেন, “হাই কোর্টের এই নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক খুশি হয়েছেন।”
একইভাবে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমায় রাজাকার আব্দুল ওয়াহেদ সরদারের নামে স্থাপিত একটি সড়কের নামফলক ভেঙে দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। নগরকান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী ও পাকহানাদারদের দোসর ওয়াহেদ সরদারের নামে সড়কের নামকরণের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু।
দেশের সকলে জানেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় দেশ ছেড়ে প্রথমে রেঙ্গুন পরে সোজা পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছেন। কারণ তিনি কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বিজয়কে মেনে নিতে পারেন নি। শুধু তাই নয়, সেখানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
বাংলাদেশকে যাতে জাতিসংঘ স্বীকৃতি না দেয় সে জন্য পাকিস্তান সরকার ত্রিদিব রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলকে জাতিসংঘে পাঠায়। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ত্রিদিব রায়কে জাতিসংঘ থেকে ফিরিয়ে আনতে তার মা বিনীতা রায়কে বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘে পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু ত্রিদিব রায় এতটাই কট্টরপন্থী পাকিস্তানী ছিলেন যে নিজের মায়ের অনুরোধ উপেক্ষা করে সেখানে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। ধারণা করা হয় সে সময় তার প্রচারণার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে চীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছিল বলেই প্রথমবার বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়া আটকে গিয়েছিল।
শুধু কি তাই? এরপরও ত্রিদিব রায় পাকিস্তানে আমৃত্যু ছিলেন, সেখানে পাকিস্তানীরা তার আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রদূত করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। মন্ত্রিত্ব দিয়েছে, পাকিস্তানীদের দেওয়া সেই মর্যাদা তিনি আজীবন ভোগ করেছেন। কয়েক বছর আগে পাকিস্তানেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ত্রিদিব রায়ের ’৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডন-ভিত্তিক ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিত দেব সরকার, যার বই ‘দ্য লাস্ট রাজা অফ ওয়েস্ট পাকিস্তান’ গত বছর প্রকাশিত হয়েছে। এই বইতে লেখক উপমহাদেশের বিশাল ক্যানভাসের মধ্যে চাকমাদের ইতিহাসের প্রাসঙ্গিকতার একটি জীবন্ত চিত্র এঁকেছেন। রাজা ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ব্যাখ্যা করার জন্যই প্রিয়জীত দেবসরকার তাঁর বই-এর নামে তাঁকে ‘পশ্চিম পাকিস্তানের শেষ রাজা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মি: দেবসরকারের মতে, ১৯৫৩ সালে সিংহাসনে আরোহণ থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ত্রিদিব রায় নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানের এক জাতিগোষ্ঠীর রাজা হিসেবে দেখেছেন। রাজা ত্রিদিব রায় খুব চিন্তা-ভাবনা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মি: দেবসরকারের গবেষণা মতে, ত্রিদিব রায়-এর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রিক। নিজের রাজত্ব এবং স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখতেই ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। “উনি চাইছিলেন তাঁর রাজত্ব এবং রাজ পরিবারের শাসন যেন বজায় থাকে, যদিও অনেক সাধারণ চাকমা তাঁর নীতির বিপক্ষে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন”, মি: দেবসরকার বলেন। বইটির ভিত্তি হচ্ছে দালিলিক গবেষণা, অর্থাৎ প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত দলিল ছিল বইটির মৌলিক উপাদান। গবেষণার কাজ হয়েছে বিশ্বর বিভিন্ন অঞ্চলে – বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, তারপর শ্রী লংকা এবং থাইল্যান্ড হয়ে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স।
বই-এর শুরুতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে আরাকান এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাকমাদের আগমন এবং প্রভাব বিস্তারের ইতিহাস। এর পরে এসেছে, দিল্লিতে মোগল বাদশাহদের সাথে চাকমা রাজাদের সম্পর্ক এবং ব্রিটিশ শাসন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধীনস্থ করার সিদ্ধান্ত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও এলাকাটি পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করা হয়। স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ-এর এই সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করলেও, তৎকালীন চাকমা রাজা নালিনক্সা রায় খুশিই হয়েছিলেন। ভারতীয় কংগ্রেসের নীতি বেশ সোজা-সাপটা ছিল, বলছেন মি: দেবসরকার। তারা স্বাধীন ভারতে কোন ধরনের স্থানীয় রাজা-রাজকুমার বা রাজকীয় ক্ষুদ্র রাজ্য বরদাশত করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। কাজেই, চাকমা রাজার পক্ষে ভারতে যোগ দিয়ে রাজত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হতো।
“আপনি যদি একটু পেছনে যান, আপনি দেখবেন চাকমারা ব্রিটিশ ভারতে সব সময় স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে আসছে। তাদের কিন্তু সব সময় একটি আলাদা রাজত্ব, আলাদা পরিচয় ছিল,” মি: দেবসরকার বলেন।
রাজা ত্রিদিব রায় মনে করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করবে। শুরু থেকেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক আমলাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তানের উদীয়মান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকে তিনি কম গুরুত্ব দেন। এমনকি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শেখ মুজিবের ব্যাপক বিজয়-এর পরেও তিনি তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করেন নি।
মি: দেবসরকার বলছেন, ত্রিদিব রায় ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করলে তিনি তাঁকে আওয়ামী লীগ-এর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবার অনুরোধ জানান। মুজিব ত্রিদিব রায়কে আশ্বাস দেন, যে তাঁর দল বিজয়ী হলে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে তিনি সহায়তা করবেন। “কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায়-এর মূল লক্ষ্য ছিল তাঁর রাজত্বের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা রক্ষা করা এবং আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সে বিষয়ে হয়তো কোন সমস্যা ছিল”, মি: দেবসরকার বলেন। তবে মি: দেবসরকার মনে করছেন, ত্রিদিব রায় ভেবেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নির্বাচনের ফলাফলকে কোন না কোন ভাবে নাকচ করে দিতে পারবেন। “উনি যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাদেরকে অনেক উন্নত মানের বাহিনী মনে করতেন, তিনি ভেবেছিলেন যে তাদের বিরুদ্ধে বিদেশী কোন হুমকি কাজ করবে না এবং তারা সব কিছু সামলে নিতে পারবে,” তিনি বলেন।
লেখক তাঁর কাজ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই শেষ করে দেননি, কারণ ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক জীবন ১৯৭১-এর পর থেমে থাকে নি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালে রাজা ত্রিদিব রায়কে দেশের প্রেসিডেন্ট হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হতে চাননি বলে পদ গ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু তারপরও, মি: দেবসরকার তাঁর উপসংহারে লিখছেন, “ত্রিদিব রায় ছিলেন এমন একজন রাজা যিনি শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থ-র জন্য তাঁর রাজত্ব হারিয়েছেন”। চাকমাদের ৫০তম রাজা ত্রিদিব রায়-এর নাম ১৯৭২ সালের দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি সেই অভিযোগ মোকাবেলা করার জন্য কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসেননি এবং ৭৯ বছর বয়সে ২০১২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নির্বাসনে ছিলেন। – দ্য লাস্ট রাজা অফ ওয়েস্ট পাকিস্তান, ১৬১ পৃষ্ঠা। প্রকাশক: কুইনটাস।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় কি ভয়ঙ্কর রাজাকার ছিলেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও আদালতের নির্দেশ থাকার পরও কি করে তার নামে রাঙামাটি শহরে সড়ক ও স্থানের নাম থাকে সে প্রশ্ন রইলো রাঙামাটির জেলা প্রসাশক, জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, আওয়ামী লীগ ও গণ জাগরণ মঞ্চের নিকট? স্বাধীনতার মাসে এ প্রশ্নের উত্তর তারা দিবেন এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।
রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ দিনের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী
॥ নিজস্ব প্রতিবেক ॥ দেশে যতদিন পর্যন্ত গণমুখী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পাবে না ততদিন শিক্ষাঙ্গনে যথাযথ বাস্তবতা সৃষ্টি হতে পারে না বলে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গণমূখী করার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দেশের যুব সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে নৈতিক শিক্ষা দানের জন্য শিক্ষকদের আরো বেশী সচেতন হতে হবে। সমাজ জীবনে মানুষে মানুষে যে দ্বন্ধ সংঘাত, জাতি, সম্প্রদায় শ্রেনী ও লিঙ্গগত বৈষম্য রয়েছে তা শিক্ষার মাধ্যমে দুর করতে হবে।
শনিবার (১১ মার্চ) রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাচঁ দশক পূর্র্তিতে ২ দিনের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক, রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রেদুয়ানুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ কাওসার জাহান, ফরিদা পারভিন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক অঞ্জলিকা খীসা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা আরো বলেন, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারনে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, সমাজ জীবনে, শিক্ষা অঙ্গনে বিপর্যয় বয়ে আনে। প্রয়াত সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা নেতৃত্বে আবারও নতুন করে শিক্ষা আন্দোলন শুরু করা হয়। সেই ধারবাহিকতায় আজকে পার্বত্যাঞ্চলে শিক্ষার বিস্তৃতি ঘটেছে।
আলোচনা সভা শেষে সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা ৪৫ জন প্রাক্তন কৃতি ছাত্রীদের মাঝে সন্মাননা প্রদান করেন। বিকেলে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দুই দিনের উৎসব আজ রাতে শেষ হবে।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর পুরাতন রাঙ্গামাটি পানিতে তলিয়ে গেলে ১৯৬৬ সালে নতুন রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করেন। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এবছর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্ণ করে। বিদ্যালয় দুইদিনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যোগদিতে আসা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছাত্রীদের আগমনে রাঙ্গামাটিতে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
আগামী নির্বাচনে কে আসবে না আসবে সেটা দেখার কোন বিষয় নয়। সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি গতকাল শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দু দিন ব্যাপী সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বিকালে রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সূবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব উদ্বোধন করে তিনি আরো বলেন, সরকার দেশ থেকে জঙ্গীবাদ নির্মুলে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। এ সরকার দেশ থেকে জঙ্গীদের মুল উৎপাটন করেছে বলেও মন্তব্য করেন। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরিৎ কুমার চাকমা বক্তব্য রাখেন। ডেপুটি স্পিকার আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর সরকার এ পর্যন্ত চুক্তির অনেক ধারা বাস্তবায়ন করেছে। চুক্তি বাস্তবায়ণ একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার যে চুক্তি করেছে এই সরকার অবশ্যই তা বাস্তবায়ণ করবে। বিকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে ডেপুটি স্পিকার বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ২ দিনের বিদ্যালয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেন। এর আগে সকালে শহরে বের করা হয় রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ বছর পূর্র্তিতে ২ দিনের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের বর্নাঢ্য র্যালী। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান র্যালীর নেতৃত্ব দেন। র্যালীতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীরাসহ রাঙ্গামাটির সরকারী বেসরকারী পর্যায়ের কর্মকর্তা ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
সকালে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালী। এতে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীরা অংশ নেন।
এদিকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উৎসবকে ঘিরে প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে।
কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর পুরাতন রাঙ্গামাটি পানিতে তলিয়ে গেলে ১৯৬৬ সালে নতুন রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করেন। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এবছর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্ণ করে। বিদ্যালয় দুইদিনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যোগদিতে আসা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছাত্রীদের আগমনে রাঙ্গামাটিতে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা, সম্মাণনা প্রদানসহ নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। শনিবার বিকেলে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে সমাপনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামা আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ বছর পূর্র্তিতে সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসব আজ। এই উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে ২ দিনের বর্নাঢ্য অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে বিদ্যালয়টি। আজ সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রাঙ্গন থেকে শুরু হবে বর্ণাঢ্য র্যালী। র্যালীতে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীরা সহ রাঙ্গামাটির সরকারী বেসরকারী পর্যায়ের কর্মকর্তা ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন। র্যালীটি উন্নয়ন বোর্ড প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্কুল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হবে।
পরে শুরু হবে সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান মালা। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া প্রধান অতিথি হিসাবে উৎসবের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরি চৌধুরী, বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৈ শৈহ্লা, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের আহবায়ক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।
প্রথম দিন বিকালে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও বাইরের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন । অনুষ্ঠানের ২ দিনেই থাকবে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল শনিবার জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জনকারী বিদ্যালরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধঅন অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিক ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা। গেষ্ট অব অনার হিসাবে থাকবেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবকে ঘিরে রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সব রকম প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে সর্র্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উদ্যোগে সরকারিভাবে সকালে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ দিবস উপলক্ষে বুধবার (৮ মার্চ) সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভা যাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন-অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর মো. শহিদুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য মনোয়ারা জাহান আক্তার, রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, মহিলা পরিষদের রাঙ্গামাটি সভাপতি কনিকা বড়–য়া, সচেতন নাগরিকের জেলা সদস্য সুস্মিতা চাকমা প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন, নারীদের সাথে কোন বৈষম্য নয়। নারীর অধিকার নিশ্চিত করা যেমন পুরুষের নৈতিক দায়িত্ব, তেমনি নারীকেও তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়ে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য সৃষ্ঠি না করে নারী-পুরুষ মিলে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।
আলোচনা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
॥ শিশির দাশ,বাবলা ॥ বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করলে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলো চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিটি পদে পদে বাঁধা গ্রস্থ করবে বলে মন্তব্য করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য অঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা দীপংকর তালুকদার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রহণী ভূমিকার কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত হচ্ছে। কিন্তু আঞ্চলিক সংগঠন গুলো পার্বত্য এই মাটি ও মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিরোধীতা শুরু করে। বক্তারা বলেন, পার্বত্য মানুষের কথা চিন্তা করে পার্বত্য অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন।
গতকাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষন উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন ।
রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য হাজী কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যাণ্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক মমতাজুল হক, জেলা কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অভয় প্রকাশ চাকমা, জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ, পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সজল চাকমা (চাম্পা) পৌর মহিলা আওয়ামীলীগ সম্পাদিকা ও জেলা পরিষদ সদস্য মনোয়ারা আক্তার জাহান, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শাওয়াল ইদ্দন, শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, যুবলীগ শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক কামাল উদ্দীন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সুলদান মুহাম্মদ বাপ্পা।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল মাওলা।
বক্তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু”। এই স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজদৌল্লাকে পরাজিত করে ব্রিটিশ বিনিয়ারা এদেশেকে দীর্ঘ আড়াইশো বছর শাসন করেছে। যুগের আবর্তনে জাতি সমুহের সোচ্চার আন্দোলনের মুখে সেদিন ব্রিটিশরা এদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সেদিন বাঙালী জাতি মনে করেছিলো এবার স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। দুঃস্বপ্নের বেড়াজালের এবারও বাঙালী পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শিকলে পতিত হয়। যার ফলে বাঙালীরা স্বাধীনতার দাবিতে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণভ্যুত্থান ৭০’র নির্বাচন, অবশেষে ৭১’র স্বাধীনতার জন্য মুক্তিকামী বাঙালীরা সর্বস্ব ত্যাগ করে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলো। আজ বাঙালী স্বাধীন জাতি, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে ঠিকে আছে। আর এ বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাস যিনি রচয়িতা তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নবাব সিরাজদৌল্লাহ’র পরাজয়ের দিনকে যিনি স্বাধীনতার স্বাধ বাঙলা ও বাঙালীকে প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, যতদিন বাংলা ও বাঙালী থাকবে ততদিন এদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বঙ্গবন্ধু আদর্শের, সৈনিক সৃষ্ঠি হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন তথা সোনার বাংলা বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পাট অধিদপ্তর ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সারাজেলার ন্যায় রাঙ্গামাটিতেও পালিত হলো জাতীয় পাট দিবস-২০১৭।
সোমবার (৬ মার্চ) সকালে দিবসটি উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। র্যালীটি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ হতে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শেষ হয়ে আলোচনাসভায় মিলিত হয়।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম, মুজাদ্দেদ-ই-আল ফেসানি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মঈন বক্তব্য দেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ আজিজুল হক এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, তামাক চাষীদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে তামাক চাষের ফলে নিজের এবং পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, এক সময় এই সোনালী আঁশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে কিন্তু দিন দিন সে ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাষীদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে হবে। পরিবেশবান্ধব যেসব ফসল উৎপাদিত হয় সেসব ফসল উৎপাদনে চাষীদের বেশী করে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক এক মত বিনিময় সভায় আনানো হয়েছে বাংলাদেশে বছর প্রতি প্রতি লাখে নতুন ভাবে ২২৭ জন যক্ষায় আক্রান্ত হচ্ছেন । এর মধ্যে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে ৫১ জনের । কফে জীবানুযুক্ত নতুন রোগীর মধ্যে চিকিৎসার মাধ্যমে শতকরা ৯৪ ভাগ রোগী আরোগ্য লাভ করছে।
রবিবার বিকালে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি নাটাব আয়োজিত যক্ষা রোগ নিয়ন্ত্রনে সাংস্কৃকি কমৃীদের ভূমিকা শীর্ষক এই মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালুকদার। প্রবীন সাংবাদিক ও দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকার সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদের সভাপেিতত্ব অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নাটাবের রাঙ্গামাটি জেলার সম্পাদক হাজী মোঃ শাহজাহান মজুমদার, রাঙ্গামাটি শিশু নিকেতনের অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তফা কামাল , ব্র্যাকের জেলা স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী এম এ জামান এবং স্বাস্থ্য বিভাগের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মোঃ মোসলেম উদ্দিন।
মত বিনিময় সভায় জানানো হয় যক্ষা একটি বাহু বাহিত সংক্রামক রোগ হলেও এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার আওতায় এনে পূর্ণমাত্রায় চিকিৎসা প্রদান করা গেলে রোগীর সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। সরকার এই রোগ নিরুপন এবং চিকিৎসার সকল খরচ বিনামূল্যে প্রদান করছেন। ফুসফুসে আক্রান্ত যক্ষা রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনা না গেলে তার মাধ্যমে অন্যান্য সুস্থ্য রোগীরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
রাঙ্গামাটির সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের বিভিন্ন শাখর ৩০ জন শিল্পী ও সংগঠক মত বিনিময় সভায় অংশ নেন।