রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের মৃতের স্বজনদের আহাজারি থামছেনা,মৃতের সংখ্যা ১১০, উদ্ধার কাজ সমাপ্ত

॥ নন্দন দেবনাথ/ মিল্টন বাহাদুর ॥ রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের মৃতের স্বজনদের আহাজারি থামছেনা। চলছে চারিদিকে হাহাকার। শুক্রবার সকালে আরো দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করে সেনা বাহিনী ও ফায়ার সািির্ভসের উদ্ধার কর্মীরা । মৃতদেহ নিযে স্বজনের কান্না থামছেনা। রাঙ্গামাটির ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা লোকনাথ মন্দিরের নীচে পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত সুলতানার আক্তারের মৃতদেহ পাওয়া যায় বৃহস্পতিবার। একদিন পর শুক্রবার সকালে উদ্ধার করা হয় তার ছেলে ইব্রহীমের লাশ। পাহাড় ধসের তোড়ে ভেসে যায় তারা । দুদিনের ব্যবধানে রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউসের নীচ খেকে মা ও ছেলের  মৃত দেহ উদ্দারের পর মা ও ভাইয়ে মৃতু শোকে হাসপাতাল চত্বরে কান্নায় বিলাপ করছিল তার মেয়ে সুমী। তার পাশে দিশেহারা হয়ে হন্যে হয়ে ঘুলছিলো স্বামী মুছা। সে সময় খবর আসে মুজিব নামে আরো একটি শিশুর মৃতদেহ উদ্দার করা হয়েছে। এ শিশু হলো তাদের আদরের সন্তান। হাসপাতলে উদ্ধার কর্মীরা এ দুটি মৃত দেহ নিয়ে আর পর এক বেদনাকাতর অবস্থার সুষ্টি হয়। মা  ভাই ছেলে হারিয়ে মুছা দম্পতি আর স্বজনদের কানায় বাতাস ভারি হয়ে উঠে। পাহাড় ধসে এত প্রানহানীর ঘটনায়  গত চারদিনের রাঙ্গামাটি হাসপাতাল এলাকায় ছিল লাশের মিছিল আর স্বজননের আহাজারি। জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানান ঘটনার চারদিনে এ পর্যন্ত সর্বশেষ মৃতের সংখ্যা  ১১০।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান তারা উদ্ধার তৎপরতা সমাাপ্ত ঘোসনা করেছেন।
এর আগে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্থ পরিদর্শনে আসেন পানি সম্পদ মন্দ্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। রাঙ্গামাটি জেলা ¤্রশাসরনর কার্যালয়ে এক সভায় তিনি বলেন রাঙ্গামাটিতে এ বর্ষায় আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড় ধসে আর কোন প্রানহীন যাতে না ঘটে সে জন্য পাহাড়ের ঝুকিীতে থাকা মানুষদের সড়িয়ে আনতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
পাহাড় ধসের গটনায় সৃষ্ট দুর্যোগে রাঙ্গামাটিতে সৃষ্ট খাদ্য, জ্বালানী,ও নিত্য ব্যবহার্য পন্যের সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে জন্য রাঙ্গামাটি কাপ্তাই নৌ পথে নৌ পরিবহনের পন্য পরিবহন ব্যাবস্থা জরুরীভারে শুরু করার নির্দশ দেন। এসময়  সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার ,ত্রান সচিব , পার্বত্য মন্ত্রনালয় সচিব, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার সহ বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজের পেছন থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় ১ পুরুষ ও লোকনাথ মন্দির এলাকায় মাটিচাপা অবস্থায় ১ শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
পাহাড়ের মাটিচাপায় নিখোঁজ আরো কয়েকজনের মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। রাঙ্গামাটি এপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১১০ জন।
রাঙ্গামাটি শহরে সকাল থেকে থেমে হালকা বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারশেন) শাকিল ইমতিয়াজ।
পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় সৃষ্ট দূর্য়োগে রাঙ্গামাটি শহরের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে জ্বালানী সংকট। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্য মূল্যে দাম বেড়ে যাওয়া সাধারণ মানুষ নিদারুন কষ্ট ভোগ করছে।
এদিকে, শহরের বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং করতে বনরূপা, রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ি বাজারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক একটি বাজার মনিটরিং টিম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাজারে অস্থিরতা তৈরী না করতে ব্যবসায়ীদের আহবান জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে কাজ করছে  প্রশাসন।
তবে গত ১৫ জুন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এতে পানি সংকটও কিছুটা দূর হলেও গতকাল সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং দুপুরের পরে ভারী বর্ষণ হওয়ায় বিদ্যুতের খুটি পড়ে গেছে। বিদ্যুতের খুটি পড়ে যাওয়ায় আবারো রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুতের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানান, গতকাল আবারো বৃস্টি হওয়ায় মাটি ধ্বসে বিদ্যুতের খুটি পড়ে গেছে। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা ট্যাম্পরালী বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, মানিকছড়ির শালবাগান এলাকায় রাস্তায় বিশাল ধ্বস নামায় আমাদের নতুন করে কাজ করতে হচ্ছে। রাস্তা কাজ করতে গেলে ঐ স্থানে আমাদের দুটি বিদ্যুতের পুল  রয়েছে। আমাদেরকে দ্রুত এই দুটি পুল সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যেতে হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক সহ শহরের অভ্যন্তরিন সড়ক চালু করতে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের শ্রমিকরা কাজ করে চলেছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন রাঙ্গামটিতে এ পর্যন্ত পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১০।
এদিকে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কসহ অভ্যন্তরীন সড়কগুলোর উপর পড়ে থাকা পাহাড়ের মাটির স্তুপ সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা। রাঙ্গামাটির সকল সড়ক যোগযোগ বিছিন্ন থাকায় রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই নৌ পথে লঞ্চ সার্ভিস চালু করেছে জেলা প্রশাসন।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031