কাউখালীতে পাহাড় ধসে স্ত্রী ও দু’সন্তান হারিয়ে নির্বাক আব্দুল রশিদ

॥ জসিম উদ্দিন, কাউখালী ॥ আল্লাহ তারে মাটি দি বানাইছে। হেই মাটিই আমার জোড়া ভাইঙলো। গাছ-ফল দুইই নিলো। আল্লাহ তুমি খু্শি হইলে আমিও খুশি। মঙ্গলবারের পাহাড় ধসে স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০) কে হারিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কাউখালীর কাশখালী এলাকার বর্ষিয়ান আব্দুল রশিদ। নিজের চোখের সামনে ন্ত্রী ও দুসন্তান হারিয়ে এক প্রকার নির্বাক আব্দুল রশিদ। একইসাথে স্ত্রী আর দুই ছেলে মো. ইসহাক (৩৫) ও মো. মনির (২৫) কে হারিয়ে নিজের প্রতি আক্ষেপ করে বলেন, বুড়া আমি। আমারে না নিয়া কেন ছেলেদের নি গেলা। তারা বিয়া শাদি কইরতো, কতো স্বাধ আহ্লাদ কইরতো। নিলে ৪ জনকেই একসাথে নিয়া যাইতা।
বুধবারের প্রায় সবকটি গণমাধ্যমেই মৃত হিসেবে নাম ছাপা হওয়া আব্দুল রশিদের বাড়ি উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে দুর্ঘটনাস্থল কাশখালী লেইঙ্গাছড়ি এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে খোঁজ নিতে গেলে প্রতিবেশীরা জানান আব্দুল রশিদ এখন ছেলের শশুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই কথা হয় তাঁর সাথে।
পান খাওয়া হলো না ফাতেমার: ঘরে একাই পান খেতেন ফাতেমা বেগম। দুর্ঘটনার দিন সেহেরি খেয়ে স্বামীর কাছে পানের বাটা দেখিয়ে ফাতেমা আবদার করে বলেছিলেন- ১০ টাকার পান আইনেন। আব্দুর রশিদ বুঝতেই পারেননি এটাই স্ত্রীর শেষ আবদার হয়ে স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে, বিঁধবে বুকে। যা কোন দিনই পূরণ করা যাবে না। বলেন, বেহেশতেও সঙ্গী হিসেবে ফাতেমাকে চাই। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন ২ টাকা থাকলে ১ টাকা দান করবো স্ত্রীর নামে। তার পরিশ্রমের ঋণ পূরণ করতে পারবো না। আব্দুর রশিদ বলেন, ৪০ বছরের সংসার আমার। কখনো কোন অভিযোগ করেনি আমার স্ত্রী ফাতেমা। ছিলো না কোন আবদারও। অভাব থাকলেও প্রতিবেশীর কাছে কখনই হাত পাততেন না। দুধ বিক্রি করেই সংসার চলতো।
দুর্ঘটনায় বাঁ পায়ে জখম হওয়া আব্দুর রশিদ ঠিকমতো পা ফেলতে পারেন না। নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে বলেন খুবই পরহেজগার ছিলো। কোন প্রতিবেশী পুরুষ তার মুখ দেখেনি। সবসময় মাথায় কাপড় থাকতো। ছেলে সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসহাক ছিলো মা ভক্ত। দুধের গাভীর জন্য মায়ের কষ্ট দেখে নিজেই সাঁজ অন্ধকারে ঘাস কেটে আনত।
তিনি বলেন, সহযোগিতা পেলে বর্গা জমি নিয়ে অন্যখানে ঘর বানাবো। যেখানে আমার স্ত্রী-পুত্রের জীবন গেছে সেখানে আমি ঘুমোতে পারবো না।
পাহাড়ের ঢালুতে টিনের চৌচালা মাটির ঘরে প্রায় ৩২ বছর ধরে বসবাস করেছেন আব্দুর রশিদ। সংসারে তিন ছেলে আর চার মেয়ে থাকলেও এ ঘরটিতে স্ত্রী, দুই ছেলে আর ছোট মেয়ে থাকতো। দখিনা দরজা। সামনের বারান্দায় ছেলে মনির, মূল ঘরের পূর্ব দিকে ইসহাক আর পেছনের বারান্দায় ছোট মেয়ে রুনার কক্ষে স্ত্রী ফাতেমা অবস্থান করছিলেন। পূর্বদিকে প্রায় দুইশ ফুট খাড়া পাহাড়। এই পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে প্রাণ গেছে স্ত্রী ও দুই ছেলের। ভাগ্যের ফেরে বেঁচে গেছেন আব্দুর রশিদ। একদিন আগেই ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ায় প্রাণে বাঁচেন মেয়ে রুনাও।
দুর্ঘটনার পরপরই প্রথম খবর পান আব্দুল রশিদের মেজো ছেলে জাকির হোসেন (৩৩), তিনি প্রায় ৪০ ফুট দূরের একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, সকাল ৬টার দিকে ঘরের মেঝের পানি সেঁচছিলাম। বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি ঘর নাই, মাটি আর মাটি। জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে বাবাকে বের করে আনি। মা ও ভাইদের কাউকেই খুঁজে না পাওয়ায় প্রতিবেশীদের খবর দেই, চিৎকার করতে থাকি তাদের উদ্ধারের জন্য।ইতিমধ্যে যা হওয়ার তাই হয়ে গেছে। সবকিছু শেষ।

থানচি সীমান্ত সড়কের ব্রীজ উদ্বোধন ও ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন পাহাড়ে উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ শান্তির পরিবেশ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে —–ব্রিঃ জেঃ মোঃ শামসুল আলম

চবি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাঙ্গামাটির দৈনিক গিরিদর্পণ কার্যালয় পরিদর্শন দৈনিক গিরিদর্পণ পার্বত্য অঞ্চলের গণমাধ্যম ইতিহাসের অমূল্য দলিল —–অধ্যাপক শাহাব উদ্দীন নীপু ৪৩ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও দৈনিক গিরিদর্পণ আজো নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে —–সম্পাদক মঞ্জুরাণী গুর্খা

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930