বর্ণিল আয়োজনে রাঙ্গামাটির দূর্গম বিলাইছড়ি পাংখোয়া পাড়ায় বড়দিন উদযাপন

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় রাঙ্গামাটির দূর্গম বিলাইছড়ি পাংখোয়া পাড়ায় বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। বিশেষ প্রার্থনা, কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, আনন্দ-উৎসব এবং নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পাংখোয়ারা পালন করেছে এই বিশেষ দিনটি।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বিলাইছড়ি পাংখোয়া পাড়া বড়দিন উদযাপন কমিটি এলাকার মাঠে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিলাইছড়ি তিনকুনিয়া মৌজার হেডম্যান এ্যংলিয়ানা পাংখোয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, বিলাইছড়ি জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল শেখ আবদুল্লাহ, পিএসসি, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জন গোমেজ’সহ উপজেলার সরকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পাংখোয়া পাড়া গীর্জা পরিচালনা কমিটির লাল চুয়াক লিয়ানা পাংখোয়া।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে চলেছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে যার যার ধর্ম ও উৎসব সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে পালন করেত পারে সে লক্ষ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মান করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগমই প্রমান করে আমরা শান্তি ও সম্প্রীতিপ্রিয় মানুষ। আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। একে অন্যের উৎসবে যোগদিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াটায় আমাদের বড় ধর্ম। আগামীতে এই সম্প্রীতি অটুট রাখতে দেশনেত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। তাই নেত্রী হাতকে শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হিসেবে গড়ার। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার সে স্বপ্ন পূরনে কাজ করে চলেছে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নের পাশাপাশি সকল সম্প্রদায় যাতে শান্তিতে নিজ নিজ ধর্ম ও উৎসব পালন করতে পারে সে লক্ষে কাজ করে চলেছে। দেশনেত্রীর ২০২১ ও ২০৪১ সালের ভিষনকে সফল করতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহবান জানান চেয়ারম্যান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিসকে দেশে আমন্ত্রন করে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যান এতেই বুঝা যায় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের উপর কতটা আস্থাশীল। প্রধানমন্ত্রী সকল সম্প্রদায়ের কল্যানে কাজ করে চলেছে। কারণ একটি উন্নত রাষ্ট্রগঠনে সকল জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয় ও ঐক্য প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ এলাকার ছেলে মেয়েদের রয়েছে শৃংখলাবোধ, উন্নত শিক্ষা-দিক্ষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি। সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে তাদের এসব জ্ঞানকে কাজে লাগানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
আলোচনা সভার আগে মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়। সার্বজনীন সে প্রার্থনায় অংশ নেয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হাজারও নারী-পুরুষ ও শিশু। প্রার্থনা শেষে অতিথিরা কেক কেটে ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটি উদযাপন করে। পরে স্থানীয় ও পাংখোয়া সম্প্রদায়ের শিল্পীদের পরিবেনায় অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহি নৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।
উল্লেখ, এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার করতে তার আগমন ঘটেছিল।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031