যতদিন পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলবে ততদিন পর্যন্ত এ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর করা হবে—–দীপংকর তালুকদার

॥ মিল্টন বাহাদুর/নন্দন দেবনাথ ॥ সন্ত্রাস বিরোধী কোন জাতিগোষ্ঠী বা দলের বিরুদ্ধে নয়। যারা অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নীপিড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে এবং চাঁদাবাজি করছে তাদের প্রতিরোধ করতে এ আন্দোলন। তিনি বলেন, যতক্ষন পর্যন্ত পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলবে ততদিন পর্যন্ত এ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর করা হবে।
রবিবার (২৮ জানুয়ারী) পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযান চালানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়ে রাঙ্গামাটিতে সন্ত্রাস বিরোধী মহাসমাবেশ সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এইসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সকালে সন্ত্রাস বিরোধী এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সংসদের মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অংশুছাইন চৌধুরী, কাউখালী উপজেলা সভাপতি অংশুপ্রু চৌধুরী, লংগদু উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, ঠিকাদার সমিতির সভাপতি গেল্লা, আসবাবপত্র সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল শুক্কুর, মানবাধিকার কর্মী কাজী মোহাম্মদ জালোয়ার, প্রেস ক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।
এর আগে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে সন্ত্রাস বিরোধী বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। মিছিলে বিভিন্ন পেশার মানুষরা বিভিন্ন প্লেকার্ড, ফেষ্টুন নিয়ে হাজার হাজার মানুষ অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে মহাসমাবেশ স্থলে এগিয়ে যান।
সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে। সাধারণ মানুষেরা তাদের কথা না শুনলে, চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের শারীরিক নির্যাতন করছে। আমরা এইসব চিন্তা কখনো ভাবতে পারিনা। কিন্তু অবৈধ অস্ত্রধারীরা তাদের কোন মায়াদয়া নেয়। তাদের একটাই সনদপত্র যেটা হচ্ছে তারা কতখানী নিমর্ম কতখানী নিঃশংস হতে পারে। এদের পক্ষেই নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য আমরা এখানে সমাবেশ করছি। আমাদের কিছু বন্ধু আছে, যখন আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলি জুম্মুদের বিরুদ্ধে। আমরা যখন অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন তারা বলে জুম্মদের বিরুদ্ধে। এটা জুম্মদের বিরুদ্ধে নয়, এটা বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে নয়, এটা সকল নির্যাতিত মানুষের পক্ষের কথা বলতে চায়।
তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এইসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু এটাকে আরো বেশী ব্যাপকতা ও তীব্র করার জন্য সাধারণ মানুষকে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এই সমাবেশ। কারণ মাধারণ মানুষ যদি সহযোগিতা না করে তাহলে পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সব কিছু করার সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধপরাধী ছিল। যুদ্ধপরাধীদের আত্মীয়-স্বজনরা এখনো আছে। তারাও কিন্তু পাকিস্তানীদের সঙ্গে আই এএসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আজকে অবৈধ অস্ত্রধারী যারা তারা শুধু চাঁদাবাজি নয়, তারা শুধু অবৈধ অস্ত্র দিয়ে মানুষকে জিম্মি করা নয়, তারা বিভিন্ন সোসিয়াল মিডিয়াতে বিভিন্ন লেখা লিখছে স্বাধীন জুম্ম ল্যান। তারা লিখছে স্বাধীন জুম্ম ল্যান এর পতাকা কি হবে, তারা লিখছে স্বাধীন জুম্ম ল্যান এর মুদ্রা কি হবে। এইগুলো অত্যন্ত স্পশকাতর। সুতরাং আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলবো, এই বিষয়ে সর্তক দৃষ্টি রাখুন এবং যারা এই ধরণের দেশ বিরোধী কার্যকলাপ ও প্রপাকান্ড করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন।
দীপংকর তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চাঁদাবাজ ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করে এগিয়ে আসুন। আপনে যেমন শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন চাই, তেমনী আমরাও চাই। চুক্তি আমরা একত্রে করেছি, এক সঙ্গে বাস্তবায়ন করবো। আসুন আপনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সোচ্চার হোন, সক্রী হোন। আপনেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আর যদি আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা তারা যদি কখনো কোন মানুষকে চাঁদা বাজি অভিযোগে আটক করে। তারা যদি কোন মানুষ অস্ত্রসহ আটক করে তখন আপনি দয়া করে বলবেনা তারা আমাদের মানুষ। কারণ চাঁদাবাজদের কোন জাত নাই, অস্ত্রধারীদের কোন রকম নীতি নাই। এই নীতিহীন, আদর্শহীন মানুষদের নিয়ে আমরা কেউ কখনো ভাল কাজ করতে পারবো না। কাজেই এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আপনি সামিল হোন, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিন। তা হলে এই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অবস্থা বিরাজ করবে। নতুবা আমাদের এই শান্তি চুত্তি বাস্তবায়নটা কষ্টকর হবে।
রাঙ্গামাটির সচেতন নাগরিক সমাজের ডাকা এ মহাসমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় জনগনই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
সন্ত্রাস বিরোধী এ মহাসমাবেশে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক হাজার নারী পুরুষ যোগ দেয়।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031