॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই আনন্দ মিছিল থেকে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। দীর্ঘ কয়েকঘন্টা ধরে আগুন জ¦ললেও আগুন নেভাতে আসতে পারেনি ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা। এসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকেই আগুন নেভাতে কোন তৎপরতা চালাতেও দেখা যায়নি। ফলে কয়েকঘন্টার আগুনে কার্যত নিঃশেষ হয়ে যায় জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়টি। এসময় সাংবাদিকরা ব্যবহৃত মোবাইলে ও ক্যামরায় ভিডিও ও ছবি তুলতে গেলে সেখানে সংবাদিকর্মীদের বাধা প্রদান ও লাঞ্জিত করে দুর্বৃত্ত।
এরপর আনন্দ মিছিল থেকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও রাঙ্গামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্স ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালানো হয়।ঢিল ছুঁড়ে কাঁচ ভাঙ্গা হয় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুছা মাতব্বরের বাসভবন।
সোমবার (৫ আগষ্ট) সন্ধ্যার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর রাঙ্গামাটিতে আনন্দ মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। এতে বিপুল পরিমান ছাত্র-জনতা শহরে খন্ড খন্ড মিছিল করে করে। এসময় রাঙ্গামাটি শহরের দোয়েল চত্বর, প্রেস ক্লাবের সামনে, বনরূপা, ভেদাভেদীসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হয় শত শত ছাত্র জনতা।
আনন্দ মিছিল থেকে এ সময় উৎসুক জনতা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আসবাবপত্র ভাংচুর ও ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে আসবাপত্রসহ পুরো ভবনটি পুড়ে যায়। এর পর রাঙ্গামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর,রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. সোলায়মানের মালিকানাধীন নিডস্ হিল ভিউ আবাসিক হোটেলে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে।তবে বনরূপায় অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুরের সময় পুলিশ সদস্যরা কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলোনা।
এদিকে জানা গেছে, হামলার চেষ্টা করা হয়েছে রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরীর হ্যাপির মোড় এলাকার বাসভবন ও ব্যক্তিগত অফিসে। তবে এসময় কয়েকজন হামলাকারীদের নিবৃত্ত করেন। ইট পাটকেল ছোঁড়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের রেস্ট হাইজেও। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়েছে এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস আল মামুনের বাড়ি ও জেলা যুুব লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকমনসুর আহম্মেদের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর ও বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, রাঙ্গামাটি অন্যান্য জেলার তুলনায় মোটামুটি ভালোই আছে। আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নিরাপত্তাসহ নানান কারণে পুলিশকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে পারিনি আমরা। এখন পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। সবাইকে অনুরোধ করব রাঙ্গামাটির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখায় ভূমিকা রাখতে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার (৬ আগষ্ট) ভোর ৬টার পরথেকে কারফিউ তুলে নেয়ায় সকাল হতে বাংলাদেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। শহরে যাতে কোন নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পরে তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোর রয়েছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো আতংক কাটছে না। রাঙ্গামাটি শহরে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এছাড়া রাঙ্গামাটির উপজেলা গুলোতেও আনন্দ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।