পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আনুষ্টানিক কার্যক্রম শুরু

॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনার কারণ উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটি আনুষ্টানিক ভাবে তদন্তের কাজ শুরু করছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যদের মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারগণ।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটির সদস্যরা খাগড়াছড়ির জেলার দীঘিনালার লারমা স্কয়ার এলাকা পরিদর্শন করেন ও ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেন। বিকালে কমিটির সদস্যদের খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পরিদর্শন ও সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী বলেন, সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত, প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকসহ সবার সাথে কথা বলে ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সহিংসতার কারণ উদঘাটনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন ও তদন্তপূর্বক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের স্বাক্ষর করা অফিস আদেশে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত সহিংস ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে একই জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যথাযথ সুপারিশ প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মো. মামুন নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গন পিটুনী দেয়ার এক পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক খুটির সাথে ধাক্কা খেয়ে মারাতœক আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া তলে তার মৃত্যু ঘটে।ঘটনাটিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল নিহত মামুনকে তাদের কর্মী দাবী করে এ মৃত্যুকে রাজনৈতিক হত্যা কান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে ফ্রবাহিত করে। পরে এ ঘটনার জেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও দীঘিনালায় এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এত করে খাগড়াছড়িতে ২ জন, দীঘিনালায় ১ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। এসময় শতাধিক দোকানপাটে আগুন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার জের ধরে পাশ^বর্তী জেলা রাঙ্গামাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সংর্ষষে ১ জন নিহত ও বহু লোক আহত হয়।
সহিংসতার ঘটনার পরদিন অর্ন্তবতী সরকারের তিন প্রভাবশালী উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলা সফর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশিষ্টজন ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে ছিলেন অর্ন্তবতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ইউপিডিএফের তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান
সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য সরকার থেকে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও অংশগ্রহণে স্বাধীন ও অবাধ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বরত নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।
শনিবার এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সহ-সভাপতি নূতন কুমার চাকমা ইউপিডিএফের দাবিকে পাশ কাটিয়ে সরকার থেকে বৃহস্পতিবার একতরফাভাবে তদন্ত কমিটি গঠনকে লোক দেখানো আখ্যায়িত করে বলেন, এই কমিটির প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের জনগণের কোন আস্থা নেই।
অতীতে বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর ব্যর্থতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘লোগাং গণহত্যা ও কল্পনা চাকমার অপহরণ তদন্তের জন্য গঠিত দু’টি তদন্ত কমিশন সম্পর্কে জনগণের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। এই কমিটিগুলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল।’
ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান ও অংশগ্রহণে তদন্ত ছাড়া হামলার প্রকৃত কারণ ও অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।’

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031