॥ মিল্টন বাহাদুর ॥ আজ ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ২৭ তম বর্ষপূর্তির পরও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষদের মনে রয়েছে হতাশা আর ক্ষোভ। হানাহানি আর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে পার্বত্য অঞ্চল এখনোওঅশান্ত। শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা মতপার্থক্য। পাহাড়ের মানুষ চায় শান্তিচুক্তির যেসব ধারা অবাস্তবায়িত রয়েছে তা দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের। জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭৫ পরবর্তী প্রায় দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নামে অবহিত। আর এই চুক্তির ফলে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির দুই মাস পরে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে অস্ত্র সমর্পণ করেছিল শান্তি বাহিনীর সদস্যরা।এর পর কেটে গিয়েছে ২৭টি বছর। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৭ বছরেও পাহাড়ে কাঙ্খিত শান্তি ফিরে আসেনি। এখনো এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্কের শেষ হয়নি।পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। আওয়ামীলীগ সরকারের সময় চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়ন করার কথা বল্লেও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অভিযোগ চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অনেক ধারা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পাহাড়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে শংকা, ক্ষোভ আর হতাশা। এছাড়া চুক্তির পরেও পাহাড়েআঞ্চলিক কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও হানাহানি লেগে থাকার ফলে শান্তি মিলেনি এই পাহাড়ী জনপদে। আর চুক্তি স্বাক্ষরের ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও পাহাড়িদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ অনুযোগ। তাদের অভিযোগ, পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়ের মধ্যে ভুমি সমস্যার নিরসন না হওয়া, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট বিষয় হস্তান্তর ও নির্বাচন না হওয়া, পার্বত্য অঞ্চলে আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। এর কারণে পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। রয়েছে নানান হতাশা ও বঞ্চনা।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিব আজম বলেন, পার্বত্য শান্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় পাহাড়ের দূর্গম এলাকাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এরপরও পক্ষে বিপক্ষে বিভেদ তৈরী হওয়ায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে থমকে দিয়েছে। তাই পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙ্গালীসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র-নৃগোষ্টি রয়েছে সকলের সাথে আলোচনা করে এই শান্তিচুক্তিটি পূর্ণমূল্যায়ন করা অবশ্যই জরুরী কেন এখানে কাঙ্খিত শান্তি আসছে না পার্বত্য চট্টগ্রামে। সকলের অধিকার সমান ভাবে যাতে নিশ্চিত হয়, সাংবিধানিক অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়। কেউ যাতে কোন প্রকার বৈষম্য শিকার না হয় সেই জন্য প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠির সাথে আলোচনা করে এই চুক্তিটি পূর্ণমূল্যায়ন করা অবশ্যই জরুরী।
রাঙ্গামাটি আদিবাসী ফোরাম সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জিন চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে ১৯৯৭ সালে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হয়নি এখনো।বিশেষ করে পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়ের মধ্যে ভুমি সমস্যার নিরসন না হওয়া, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট বিষয় হস্তান্তর, পার্বত্য অঞ্চলে আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। এর কারণে পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। রয়েছে নানান হতাশা ও বঞ্চনা।তাই পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার এগিয়ে আসবে এমনটা প্রত্যাশা জনসংহতি সমিতির।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩টি ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীরা যাতে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার না হয়, সে লক্ষ্যে এই পার্বত্য চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করা জরুরী বলে স্থানীয়রা মনে করেন।