লামার পূর্ব-বেতছড়া পাড়ায় দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ল ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের বসতঘর

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বান্দরবান ॥ বান্দরবানের লামার উপজেলার সরই তংগোঝিরি এলাকায় গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে পূর্ব-বেতছড়া পাড়ার ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। পাড়ায় গির্জা না থাকায় পাড়াবাসী বড়দিন উদ্ যাপনের জন্য তংগোঝিরি নামের আরেকটি পাড়ার গির্জায় গিয়েছিলেন। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা পাড়া পুড়িয়ে দিয়েছে বলে পাড়াবাসীর অভিযোগ। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ঘটনায় আজ ভোরে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে অগ্নিকান্ডের পর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা নামে একজন ব্যক্তি লামা থানায় ৭ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। পরে রাতেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে মামলার আসামীদের মধ্যে ৪জনকে আটক করে লামা থানায় নিয়ে আসে এবং তাদের আদালতে প্রেরণের কাজ শুরু করে, আসামীদের মধ্যে একজন বাঙ্গালী ও ৩জন ত্রিপুরা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. এনামুল হক জানান, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ার গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা (৭২) নামে একজন ব্যক্তি মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ৪আসামীকে আটক করে। আসামীরা হলেন, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০), মইশৈ ম্যা ত্রিপুরা (৪৮), টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা জোয়াতিং ত্রিপুরা (৫২) এবং টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা মো.ইব্রাহিম (৬৫)।
বান্দরবান পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোছাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী জানান, বান্দরবানের লামায় দুর্বৃত্তের আগুনে ১৭টি ঘর পুড়ে যাওয়ার পর মামলা দায়ের হয় আর তাৎক্ষনিক পুলিশ অভিযান শুরু করে ৪জনকে আটক করেছে এবং বাকী আসামীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চলছে তবে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কয়েক পরিবার নতুনভাবে বসতী করে ওই এলাকায় বসবাস শুরু করায় ত্রিপুরাদের সাথে ত্রিপুরাদের দন্ধে এই ঘটনার জন্ম হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য বান্দরবান সদর থেকে সড়কপথে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়া পাড়ার গিয়ে পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, পাড়ায় ১৯টি পরিবারের মধ্যে ১৭টি ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। এ ঘটনা তদন্ত করে দোষীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, গতকাল লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার কম্বল কাপড়-চোপর, চাল, কিছু শুকনো খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদেরকে পূর্ণবাসন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ঘটনায় ভুক্তভোগীর মামলার এজাহার ভুক্ত সাতজন আসামিদের অভিযান চালিয়ে চারজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বলেছেন।
প্রসঙ্গত, গত তিন মাস পূর্বে লামা উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় বসতি শুরু করেন। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গীর্জায় প্রার্থনা করতে যায়, এই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা পাড়ার কাঁচাঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়, এতে ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এদিকে এই ঘটনার পর ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানের সাথে মতবিনিময় সভা পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে ——ইউজিসি চেয়ারম্যান

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728