
॥ এ কে এম মুকুত আহমেদ ॥
বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম চাই। মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া একটা দেশ অথবা রাষ্ট্রের সঠিক কর্মকা- কোন অবস্থায় চলতে পারে না। তাই মুক্ত গণমাধ্যম চাই। কোন অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা চালু করতে হবে। বর্তমানে সংবাদপত্র, রেডিও এর জন্য আলাদা নীতিমালা চালু রয়েছে। টেলিভিশন ও অনলাইনে জন্য এখনো কোন নীতিমালা নেই। কাজেই সবকিছুর জন্য একটা নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্যতা হয়।
সকল গণমাধ্যমে তথাকথিত ওয়েস্টবোর্ড বাতিল করে নিজ নিজ বেতন ভাতা চালু করতে হবে। বর্তমানে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বেতন ভাতা হাতে গোনা কয়েকটি গণমাধ্যম ছাড়া বাকিরা মানতে পারছে না। কেননা এই বেতন বোর্ডে যার নির্ধারণ করা হয়েছে তা অনেক গণমাধ্যমের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
ঢাকা-চট্টগ্রামের কিছু কিছু পত্রিকার সমঝোতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন দিয়ে থাকে। অথচ দেখানো হয়ে থাকে বেতন বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মফস্বলের ক্ষেত্রে এটি অস্বাভাবিক। মফস্বলের কোন সংবাদপত্র এই আজগুবি বেতন বোর্ড রোয়েদাদ মানা সম্ভব নয়। কেননা মফস্বল ঢাকা এবং জেলা শহরের কোন গণমাধ্যম আর কোন অবস্থাতে এক না। এক এক ক্ষেত্রে এক এক রকম। ঢাকার গণমাধ্যমগুলো মফস্বলের হাতে গোনা ২/১ চুক্তিভিত্তিক বেতন দিয়ে থাকে। বেশির ভাগই কোন বেতন ভাতা দেয় না। এমনকি বিজ্ঞাপনের কমিশনও দেয়া হয় না। এক কপি পত্রিকার সৌজন্য সংখ্যা দেয় না। অনেকেই জোরপূর্বক পত্রিকা কিনতে বাধ্য করে।
নিয়োগপত্র এবং আইডি কার্ডের জন্য টাকা দিতে হয়। কাজেই বাধ্য হয়ে মফস্বলের সাংবাদিক অসাধু এবং বেআইনি কাজ করতে বাধ্য হয়। নাহলে ছেলে সংসার দিয়ে জীবন কাটাবে কি করে?
বিজ্ঞাপন নীতিমালা ওপেন হলেও মাত্র তিনটে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অথচ ২০০৫ এর পূর্বে ১০-১২টা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার নিয়ম ছিল। এখন সারাদেশে তিন-চার শত পত্রিকা ছিল। বর্তমানে হাজারের উপরে পত্রিকা রয়েছে। পূর্বে ঢাকার পত্রিকা ঢাকার পত্রিকা ৬০% এবং মফস্বলের পত্রিকায় ৪০%। মফস্বলের বিজ্ঞাপন মফস্বলের পত্রিকা ৬০% এবং ঢাকার পত্রিকা ৪০% বিজ্ঞাপন এর নিয়ম ছিল। পরবর্তীতে তা বাতিল করে সরাসরি বিজ্ঞাপন বিলির নিয়ম করা হয়। উপজেলার বিজ্ঞাপনগুলো স্থানীয় পত্রিকায় দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তা বাতিল করে ঢাকায় পত্রিকায় দেওয়ার নিয়ম করা হলে মফস্বলের পত্রিকাগুলো গভীর সংকটে পতিত হয়।
গ্রামীণ পত্রিকাগুলোকে বাঁচাতে হলে উপজেলার বিজ্ঞাপন সরাসরি মফস্বলের পত্রিকা গুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার নিয়ম করতে হবে। আর মফস্বলের বিজ্ঞাপন ঢাকার পত্রিকার দিতে হলে ঢাকা বিজ্ঞাপন মফস্বলের পত্রিকার দেওয়া বিধান রাখতে হবে। সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের মূল্য কমাতে হবে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে যে কোন ক্রোড়পত্র বিলি বন্টনের সময় অধিকার ভিত্তিতে দিতে হবে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে পত্রিকায় অনুপাতিক হারে বন্টন করতে হবে। বর্তমানে অস্বচ্ছলভাবে বন্টন করা হয়ে থাকে।
ক্রোরপত্রের বিল বছরের পর বছর বাকি রাখার পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। সংবাদপত্র অথবা গণমাধ্যম সম্পর্কিত সকল মামলা বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলকে আরো ক্ষমতা দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। আদালতে কোন মামলা দায়ের করা যাবে না। কোন সম্পাদক এবং সাংবাদিক গ্রেফতার করা যাবে না। সকল প্রকার মামলা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। সাইবার ট্রাইবুনাল আইন বাতিল করতে হবে। যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে এগুলো বাতিল করে গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ আরও অধিক হারে চালু করতে হবে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে সঠিক ভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।