মঙ্গলবার সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডেটাবেইজের এই তথ্য তুলে ধরেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
সাংসদ পিনু খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ঋণ খেলাপি গ্রাহকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে ওই দুই লাখ ঋণ খেলাপির হাতে কত টাকা আটকে আছে- তার হালনাগাদ তথ্য মন্ত্রীর উত্তরে আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত মার্চের তথ্য অনুযায়ী দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংক ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
সরকার খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করেছে। ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ সহজ হয়েছে। অবলোপন করা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ। তারপরও গতবছরের মার্চ থেকে এক বছরে খেলাপি ঋণের পারিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী গত এপ্রিলে এক কর্মশালায় এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ১ শতাংশের কম। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এ হার ৪০ শতাংশের উপরে। একই পরিবেশে কাজ করে এত কম-বেশি হবে কেন? এখানে কোনো সমস্যা আছে।”
মুহিত সংসদকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে অর্থঋণ আদালত আইন- ২০০৩ প্রণয়ন করেছে। ওই আইনের আওতায় খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এছাড়া দেউলিয়া আইন-১৯৯৭ এর আওতায় খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে গেলাপি ঋণ আদায় করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৬৫৪ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৬ হাজার ৫১০ কোটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২৫৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার ৮৬ কোটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৪৮৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৩২৮ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১৫০ কোটি টাকা, বিডিবিএল এর ৮৫৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১৩০ কোটি টাকা, কৃষি ব্যাংকের ৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৯৩০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এক হাজার ৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২২৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বিভিন্ন নির্দেশনাও দিচ্ছে বলে জানান মুহিত।
ঋণ আদায় ইউনিটকে শক্তিশালী করা, মাঠ ও শাখা পর্যায়ে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া, লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে কর্মকর্তাদের পুরস্কার বা ইনসেনটিভ দেওয়া, ব্যর্থতার ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, শ্রেণিকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে দায়ের করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপক সম্মেলনে ঋণ আদায় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় জোরে দিতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ১৯ শতাংশ শাখা লোকসানী
সাংসদ আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ১৩৪টি শাখার মধ্যে ৯৫২টি শাখা লোকসানী।
এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৮টি শাখার মধ্যে ৩৩৩টি, জনতা ব্যাংকের ৯০৭টি শাখার মধ্যে ৬৯টি, অগ্রণী ব্যাংকের ৯৩৫টি শাখার মধ্যে ৭৮টি, রূপালী ব্যাংকের ৫৬৪টি শাখার মধ্যে ১১০টি, বেসিক ব্যাংকের ৬৮টি শাখার মধ্যে ৩১টি, বিডিবিএল এর ৪২টি শাখার মধ্যে ২৭টি, কৃষি ব্যাংকের ১০৩১টি শাখার মধ্যে ১৬৮টি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৭৯টি শাখার মধ্যে ১৩৬টি লোকসানী।
মন্ত্রীর তথ্য অনুসারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ১৮.৫৪ শতাংশ শাখাই লোকসানে রয়েছে।
রিজার্ভ চুরির ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পাওয়া যায়নি
সাংসদ মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পাওয়া যায়নি। ওই টাকা উদ্ধারে ফিলিপিন্সে আইনি উদ্যোগ চলমান।
স্কুল ব্যাংকিংয়ে আবগরি শুল্কের ‘প্রভাব পড়বে না’
সরকার দলীয় সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে ব্যাংকিং হিসাবের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। তাই আবগারি শুল্কের প্রভাব শিশুদের স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর পড়বে না।
ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর দেন ১৫ লাখ ১৩ হাজার ২৫৩ জন
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা ১৫ লাখ ১৩ হাজার ২৫৩ জন।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরের মে পর্যন্ত সময়ে মোট দুই হাজার ৬৭ কোটি টাকা আয়কর বাবদে আদায় হয়েছে তাদের কাছ থেকে।
মোবাইল গ্রাহক ১৩ কোটি, ইন্টারনেটে ৭ কোটি
দিলারা বেগমের এক প্রশ্নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার ২০৬ জন। আর ইন্টারনেট গ্রাহক সাত কোটি ৭৭ হাজার ৯৬৯।
সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৬৮৮টি মামলা
ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে এ পর্যন্ত ৬৮৮টি মামলা হয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনালে।