খাগড়াছড়িতে কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমা খুনের তদন্তে পুলিশ সন্দেহ ভাজন আটক-১

॥ লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়িতে কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমার খুনের নেপথ্যে প্রেম, পরকীয় না অন্য কিছু রয়েছে এ নিয়ে রীতিমত নানা প্রশ্ন দানা বাধতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। শুরু থেকে এ হত্যাকান্ডে কতিপয় মহল নানা রং ছড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।বাঙালিদের দায়ী করে পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে।
পুলিশ এখনো পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডে’র মূল রহস্য উদঘাটনে অনেকটাই অন্ধকারে। তবে নিহতের দুলাভাইয়ের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে বুধবার (১ মার্চ) খাগড়াছড়ি সদর থানার পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমার হত্যাকারিদের সন্দেহভাজন একজন উপজাতী যুবক গোনতোস চাকমাকে (৪৯) কে আটক করেছে। বুধবার দুপুরে পুলিশ কোর্টে হস্তান্তর করেছে। এই ব্যাপারে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং- ১৬/২৮/২০১৭।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে খাগড়াছড়ি শহরের আরামবাগ এলাকায় খুন হয় কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমা। তাকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে দিয়ে হত্যা করা হয়। ভগ্নিপতির ভাড়া বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ইতি চাকমা জেলার দীঘিনালা উপজেলার ছনখোলাপাড়ার মৃত অন্ত্ররেন্দ্রীয় চাকমার কন্যা। তবে সব কিছু মিলে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক সন্দেহের তীর কিন্তু ভগ্নিপতি ও একটি উগ্র আঞ্চলিক সংগঠনের দিকে।
সরেজমিন তদন্তে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহরের আরামবাগ এলাকায় বাবুল নাগের বাসায় গত ছয় মাস ধরে ভাড়া থাকেন অটল চাকমা। এখানে ভগ্নিপতির বাড়িতে থেকে কলেজে পড়াশোনা করতো ইতি চাকমা।এর আগে থাকতেন জেলাশহরের মধুপুরে। স্ত্রী জোনাকি চাকমা দীঘিনালা উপজেলার বানছড়া আনন্দময় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
স্ত্রী জোনাকি চাকমা জানান, তিনি বিদ্যালয় খোলা থাকলে কর্মস্থলে চলে যান এবং দীঘিনালায় বাপের বাড়ীতে থেকে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তার খাগড়াছড়ি আসা হতো। জোনাকি চাকমার অনুপস্থিতিতে ভগ্নিপতি ও ইতি চাকমা ঐ বাসায় থাকতেন। হত্যাকান্ডের সময়ও জোনাকি চাকমা দীঘিনালায় বাপের বাড়ীতে এবং দুলাভাই ও শালিকা ঐ বাড়িতে ছিলেন। বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঐদিন রাতেই খাগড়াছড়ি আসেন জোনাকি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ আলম চৌধুরীর মতে, একার পক্ষে এ হত্যাকান্ড সম্ভব নয়। হত্যাকারীরা একাধিক ও পূর্ব পরিচিত হতে পারে। লাশের প্রাথমিক অবস্থা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ইতি চাকমাকে হত্যার আগে নেশা জাতীয় মেশানো কিছু খাওয়ানো হতে পারে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যে গলা কাটা হতে পারে। কারণ লাশ যে অবস্থায় পড়ে ছিল তা দেখে তাই মনে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বাবুল নাগের এক তলার ঐ বাসায় আরো ১৩টি পরিবার ভাড়া থাকেন। দুই লেনের বাসার মাঝখানে উঠোন। বাসায় ঢুকার গেইট মাত্র একটি। এলাকাটি খুবই নিরাপদ এলাকায়। বাইরের অপরিচিত কেউ আসলে কেউ না কেউ দেখার কথা।
ইতি চাকমা হত্যাকান্ডের পরপরই পুলিশ ও মিডিয়াকর্মীদের অটল চাকমা জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি শালিকা ইতি চাকমাকে বাসায় একা রেখে বাইরে যান। রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরে খাটের উপর শালিকার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।
কিন্তু একদিন পর অটল চাকমা পুলিশকে জানান, ২৬ ফেব্রুযারি রাতে গণতোষ চাকমা নামে এক ব্যক্তি তার সাথে রাত্রী যাপন করেছিলেন। সকালে কাজে বেরিয়ে যান তিনি এবং বিকালে বাসায় আসেন। বিকালে গণতোষ চাকমাকে বাসায় রেখে বেরিয়ে যান। এ সময় শালিকা ইতি চাকমা বাসায় ছিল। রাতে বাসায় ফিরে শালিকার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেলেও গণতোষ চাকমাকে পাওয়া যায়নি।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ হান্নান জানান, অটল চাকমার কাছ থেকে পাওয়া এ সব তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে গণতোষ চাকমাকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণতোষ চাকমার আসল নাম অমর কান্তি চাকমা। পিতা- বিনন্দ রাখাল চাকমা। বাড়ি- দিঘীনাল্ া উপজেলার গুলছড়ি রশিক নগরে। গণতোষ চাকমা তার সাংগঠনিক বা ছদ্ম নাম। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে সে কোনো পাহাড়ী উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে জাড়িত। সব মিলিয়ে ইতি চাকমার হত্যাকান্ডের রহস্য ক্রমেই দানা বাঁধছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পর্যন্ত নানা ধারণা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করছেন। এ হত্যাকান্ডে’র সাথে ভগ্নিপতিও জড়িত থাকতে পরে কিনা তদন্ত করে দেখছি। আবার এমনও হতে পারে, ভগ্নিপতি ও তার বন্ধু মিলে ইতি চাকমার সাথে জোরপূর্ব দৈহিক চাহিদা মিটানোর পর ঘটনা জানা জানি হতে পারে এমন আশংকা থেকে ঠান্ডা মাথায় ইতি চাকমাকে হত্যার পর না জানার নাটক সাজানো হচ্ছে।
ইতি চাকমার হত্যাকান্ড নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে নানা অপপ্রচার সম্পর্কে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা বলেন, বিষয়গুলো আমরা মনিটরিং করছি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031