প্রশ্ন ফাঁস: ‘সব খুলে বলতে’ পারছেন না শিক্ষামন্ত্রী
তিনি বলেছেন, পরীক্ষার সকালে শিক্ষকদের হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়ার পর তার ফেইসবুকে তা ফাঁস হচ্ছে।
“আমরা এমন একটি পরিবেশের মধ্যে আছি যা আমরা সব খুলে বলতেও পারি না, সহ্যও করতে পারি না। কিন্তু আমরা আর সহ্য করব না। সত্যিকার অর্থে আমাদের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক বেশি দরকার।”
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজনে এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
চলতি বছর এসএসসিতে বিভিন্ন পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে, যা পরদিন পরীক্ষায় হুবহু মিলে গেছে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তাতে কাজ হয়নি। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও কোনো পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করার নির্দেশ দেননি মন্ত্রী।
প্রশ্নপত্র ঠেকাতে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলে আসছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকার চাইলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব।
দুদকের মানববন্ধনে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “এবার প্রশ্ন ফাঁসের কিছু ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। যখন বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নপত্র পাঠানো হল তখন তা ফাঁস হয়নি, শেষরাত বা ভোররাত থেকে প্রশ্ন ফেইসবুক থেকে আসছে। সত্যি কিনা মিথ্যা তা পরের দিনের প্রশ্নের সঙ্গে মেলালেই বুঝতে পারবেন।”
মন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র শিক্ষকের হাতে পৌঁছে দিয়ে তারা যখন ‘চিন্তামুক্ত’ হচ্ছেন, তখনই পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে প্রশ্নপত্র ফেইসবুকে আসতে দেখা যাচ্ছে।
“আমরা দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্ন দিতে বাধ্য, কারণ গ্রাম অঞ্চলে এই প্রশ্ন নিয়ে যেতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্ন রাখতে হয়, তার নিচে নয়। তাহলে কে প্রশ্ন বের করে দিচ্ছে?
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন বিজি প্রেস ছাড়াও ছাপানো ‘সম্ভব’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, বিজি প্রেসেই কিছু দুর্নীতিবাজ লোক গেঁড়ে বসে ছিল, এরপর দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাদের কারও চাকরি চলে গেছে, আবার কেউ জেলে আছে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে- এমন দাবিও নুরুল ইসলাম নাহিদ করছেন না।
“দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমার শিক্ষামন্ত্রণালয়ে হচ্ছে না তা বলছি না, সারাদেশজুড়ে এই মন্ত্রণালয়ের কাজ বিস্তৃত। তবে এইটুকু বলতে পারি, মন্ত্রণালয়ের যে পরিধি আছে সেখানে সরাসরি দুর্নীতি হয় না। অস্বীকারও করি না, তবে আগের মতো অবস্থা নেই।”
দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদকের সহযোগিতা আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘কাজে লেগেছে’ এবং ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন করতে না পারলে দুর্নীতি প্রতিরোধ ‘অসম্ভব’।“দেশটা গড়তে গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। দেশের উন্নয়নের অভিযাত্রাকে চলমান রাখতে হলে দুর্নীতির মাত্রা কমাতেই হবে।দুর্নীতির কারণে আমাদের দুই থেকে তিন ভাগ জিডিপি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
আর এ কারণে স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন দুদক প্রধান।
গত বছর দুর্নীতির ৫৪ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “এটা আমাদের বড় অর্জন, এটা একটা মাইলফলক।আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ শাস্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।”
তিনি বলেন, ব্যাংক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পাসপোর্ট ও ভূমি খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়।
“ওইসব ক্ষেত্রে আমরা বেশি ব্যবস্থা নিয়েছি, তবে আমরা পদ্ধতিগত পরিবর্তন চাই, মানুষকে ধরে বেঁধে সৎ বানানো যায় না।”
অন্যদের মধ্যে দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দীন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একযোগে দেশের ৬৪ জেলায় দুদকের এই দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।