তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পাড়া কেন্দ্রগুলোতে শিশুরা জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে

॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের পাড়া কেন্দ্র গুলোতে শিশুরা জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের নিয়ে তিন পার্বত্য জেলা চার হাজার পাড়া কেন্দ্রে শিশুদের পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দান করে আসছে পাড়া কর্মীরা।
পাহাড়ের দুর্গম এলাকার আশেপাশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাই পাড়া কেন্দ্রে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পাড়া কেন্দ্র চালু হওয়ায় ছেলে-মেয়েরাও স্কুলে আসতে আগ্রহী। ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছেলে-মেয়েরা সুশিক্ষিত হবে এবং শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে বলে এমটাই মনে করেন পার্বত্যবাসী।
পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন পাড়া কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদের মতে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান এবং ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রের আশ-পাশের গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, পুষ্টি বিষয়ে শারীরিক খোজ খবর নিয়ে থাকেন তারা। কেন্দ্র গুলোতে শিশুদের নিয়ে আদর যতœ, লালন-পালন, স্বাস্থ্য সেবা, জাতীয় সংগীত ছেলে মেয়েদেরকে শিখানো হয়। আর বাচ্চারাও স্কুলে আসতে আগ্রহী। অভিভাবক ছাড়াই স্কুল খোলার আগেই চলে আসে ছেলে মেয়েরা।
এদিকে ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর আওতায় তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ৩ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদেরকে নিয়ে চালু করা হয় পাড়া কেন্দ্র। এছাড়া কর্মীদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন সাধন, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিশুর বয়স উপযোগী যতœ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ এবং মহিলাদের অংশগ্রহণে টেকসই সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, মহিলাদের ক্ষমতায়নের সচেতনতা বৈঠক করা হয়। তাছাড়া পাড়া কর্মীদের কাজ হল শিশুদের পাঠদানের পাশাপাশি এলাকা বাসীদেরও সার্বিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
রোয়াংছড়ির জামছড়ি পাড়া কর্মী মিলি প্রু মার্মা জানান, সামান্য বেতন ভাতা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। কারণ শিশুদের নিয়ে আদর যতœ, লালন-পালন, স্বাস্থ্য সেবা, পাঠদান তার কাছে অনেক ভাল লাগে। তিনি দীঘদিন যাবৎ মানব সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার মতে, শিশুদেরকে সুন্দর ভাবে স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের সাথে আমাদের উঠান বৈঠক করা হয়। ছোট ছোট শিশুদেরকে স্কুল মুখি করার জন্য খেলাধুলাসহ সব ধরনে আয়োজন রয়েছে আমাদের পাড়া কেন্দ্রে।
লামা পৌর এলাকার মাঠ সংগঠক জেসমিন আক্তার জানান, মাঠ সংগঠক হিসেবে ১০টি পাড়া কেন্দ্রের দায়িত্ব রয়েছে। প্রতি মাসে একটা পাড়া কেন্দ্রে দুইবার করে পরিদর্শন করতে হয়। পাড়া কর্মীদের পাঠদান বিষয় গুলো তদারকি করা হয়। এছাড়াও পাড়া কর্মীদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন সাধন, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিশুর বয়স উপযোগী যতœ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ, প্রতি বছর শিশুদেরকে ভিটামিন “এ” প্লাস খাওয়ানো হয়, অভিভাবকদের নিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়।
বান্দরবান সদর উপজেলার মাঠ সংগঠক বিজলী তঞ্চঙ্গ্যা জানান, শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আমাদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য বর্ণমালা গুলো বিভিন্ন রঙ্গদিয়ে তৈরী করা হয়। এতে করে শিশুরা অতিসহজে শিখতে পারে এবং পাড়া কেন্দ্রগুলো শিক্ষা উপকরনের চাহিদা পুরন করা সম্ভব হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প ব্যবস্থাপক আলু মং বলেন, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় চার হাজার পাড়া কেন্দ্র রয়েছে। চলতি বছর আরোও তিনশত পাড়া কেন্দ্র সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং আগামী এক বছরে পাঁচ হাজার পাড়া কেন্দ্র হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে যারা রয়েছে তাদের সচ্ছতা ও জবাবদীহিতা রয়েছে। তার মতে, পাড়া কেন্দ্র গুলোতে পাঠ দানের মাধ্যমে মানবিক যেই গুনাভুলি রয়েছে সেইটা আরোও উন্নতি হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে যাচ্ছে সরকার। ধাপে-ধাপে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলা পাড়া কেন্দ্রগুলোকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে আবাসিক বিদ্যালয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। পিছিয়ে পড়া বান্দরবান জেলাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আরো উন্নত শিক্ষার জন্য বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে এবং বান্দরবানকে শিক্ষা নগরী করার ইচ্ছা রয়েছে পার্বত্যমন্ত্রীর।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30