চট্টগ্রাম ব্যুরো :: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেছেন, সারাদেশ করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা সনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় কিট ও সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রয়েছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি ও হাঁচি নিয়ে হাসপাতালে গেলে আতংকিত না হয়ে রোগীর শরীরে করোনার লক্ষণ আছে কিনা নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার জন্য ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি হাসপাতালে মানসম্মত ল্যাব রয়েছে। রোগীর শরীরে করোনা পজেটিভ হলে বিআইটিআইডি, জেনারেল হাসপাতাল, বেসরকারী পার্কভিউ হাসপাতাল ও ইম্পেরিয়েল হাসপাতালে আইসোলেশন বেড এবং ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পরিমানে পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) মজুদ রয়েছে। যারা করোনা রোগীদের সংস্পর্শে যাবেন শুধুমাত্র তারাই পিপিই পরিধান করবেন, অন্যরা নয়। স্বাস্থ্য াবভাগের পক্ষ থেকে পার্কভিউ ও ইম্পেরিয়েল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পিপিইও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে। করোনা রোগী বাড়লে পিপিই’র ব্যবহার ও বাড়বে। সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ফ্লু কর্ণারে পিপিই ব্যবহার হচ্ছে। করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া রোগীদেরকে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী সরকারীভাবে দাফন ও দাহ করার জন্য মহানগর, জেলা, ও উপজেলা পর্যায়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় বাড়ী না ফিরে সে ব্যবস্থা ও করা হচ্ছে। আজ ৩ এপ্রিল ২০২০ ইং শুক্রবার সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্টিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী এস.আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের জন্য জেলা প্রশাসকের হাতে দুই হাজার পিপিই তুলে দেন প্রতিষ্টানটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পিএস আকিজ উদ্দিন।
ডিসি বলেন, করোনা মহামারীর এই সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম বড় ইস্যু পিপিই। যেটা নিয়ে অনেক কথা, লেখালেখি, সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। চীন থেকে পিপিই আমাদের দেশে পৌঁছেছে। পাশাপাশি আমাদের দেশের শিল্পপতিরাও এগিয়ে আসছেন। আজকে তারই উদাহরণ হিসেবে এস.আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে ২ হাজার পিপিই দেয়া হয়েছে। এসব পিপিই চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানে সহায়তা করবে। যেসব চিকিৎসক পিপিই না থাকার কারণে চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছেন, তাদের ভয় আর থাকবে না। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালেও পিপিই সরবরাহ করা হবে। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালে পিপিই পরে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে পারবেন।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে রাস্তায় বের হওয়া যাবেনা, ঘরেই থাকতে হবে। অন্যকেও ঘর থেকে বের না হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। চায়ের দোকান খোলা রাখা যাবেনা। যেখানে যেখানে আড্ডা হয় সেগুলো বন্ধ করতে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করে কেউ ঘর থেকে বের হলে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে তালিকা প্রস্তুতের মাধ্যমে নগর ও জেলার গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের মাঝে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় মোট হোম কোয়রেন্টিনে রয়েছে ৮৭১ জন, ছাড়পত্র নিয়ে মুক্ত হয়েছে ১০২ জন এবং আইসোলেশন বেডে রয়েছে ২ জন রোগী। চট্টগ্রাম বিআইটিআইডিতে এ পর্যন্ত করোনা সন্দেহে ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও ফলাফল নেগেটিভ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা থেকে ২ জন করে মোট ৩০ জন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে বিআইটিআইডিতে প্রেরণ করা হয়েছে। এটার ফলাফল খুব দ্রুত সময়ে পাওয়া যাবে। চট্টগ্রাম জেলারেল হাসপাতালে ভেন্টিলেশনসহ ১০টি আইসিইউ বেড বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্ন্তবর্তীকালীন সময়ে নগরীর পার্কভিউ ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া চমেক হাসপাতালের যেসব আইসিইউ বেড রয়েছে সেগুলো প্রয়োজন হলে ব্যবহার করবো।
তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ফ্লু কর্ণার চালু রাখা হয়েছে। সকল বেসরকারী হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা ফ্লু কর্ণার চালু রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল গুলোতে সকল ধরণের রোগীর চিকিৎসা-সেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৪ টি সরকারী ও ১০টি বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। র্যাপিড রেসপন্স টিম ফোকাল পারসন ও যুগ্ম ফোকাল পারসন মনোনীত করা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,স্বাস্থ্য দপ্তর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা সমূহে কোভিড-১৯ সংক্রন্তে যাবতীয় তথ্য প্রতিদিন ভোর ৫টার মধ্যে এবং সন্ধ্যার মধ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ই-মেইলে প্রেরণ করা হচ্ছে। এছাড়া ‘সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রান্তে যাবতীয় তথ্য এই পেইজে মুহুর্তে মুহুর্তে আপলোড করা হচ্ছে।
পিপিই সরবরাহ বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩৯৯৮ টি পিপিই মজুদ রয়েছে। এস.আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে আরো ২ হাজার পিপিই পাওয়া গেছে। এগুলো থেকে ১৫ উপজেলায় ১৫’শ পিপিই দেয় হবে। এছাড়া বাকী পিপিইগুলো করোনাভাইরাসের চিকিৎসার প্রয়োজনে সরবরাহ করা হবে।
এস.আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পিএস আকিজ উদ্দিন বলেন, দুর্যোগকালীন সময় ছাড়াও দেশের যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থেকেছে এস.আলম গ্রুপ। চট্টগ্রামের মানুষের জন্যও চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ নিবেদিত প্রাণণ। ইতোমধ্যে মেধাবী শিক্ষিত বেকারদের চাকরি দেওয়া, দরিদ্রদের কর্মসংস্থানসহ সমাজসেবায় বিভিন্নভাবে তিনি অবদান রেখেছেন। করোনা মহামারীর এই দুর্যোগকালে তিনি পিপিই প্রদান করে চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আরও ৫ হাজার পিপিই প্রদান করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) একেএম এমরান ভূইয়া, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ (উপ-পরিচালক), জেলার এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক শরীফুল হাসান, সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শহীদুল ইসলাম, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহীদুল ইসলাম ও জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়া প্রমূখ। সভায় জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।