যেসব পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না, সেগুলো বন্ধের জন্য সরকারের তরফ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এসব পত্রিকার ডিক্লারেশন রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এগুলো ভুতুড়ে পত্রিকা। এখানে নিয়োগকৃতদের বেতন দেওয়া হয় না, এরা চাঁদাবাজিসহ নানা কিছুতে লিপ্ত হয় এবং সেই বদনামটা সাংবাদিক সমাজের ওপর বর্তায়, যা কখনোই সমীচীন নয়। এজন্য আমরা ভুতুড়ে পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।”
শোকের মাস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘সাংবাদিকতায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তবেই অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যে সমস্ত অনলাইন পোর্টাল সংবাদ ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
আইপি টিভির জন্য ইতোমধ্যে ছয়শ আবেদন জমা পড়েছে বলে তথ্য দেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “আমরা সতর্কতার সাথে দেখছি। মন্ত্রিসভায় পাস করা নীতিমালা অনুযায়ী আইপি টিভি কোনো সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। সহসা আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও সমাজের বহুমাত্রিক বিকাশের স্বার্থে গণমাধ্যমের প্রসার ও স্বাধীনতা যেমন প্রয়োজন, একইসাথে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের নীতি-নৈতিকতাও আবশ্যক। তা না হলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রসারের সাথে নীতি-নৈতিকতা থাকলেই কেবল গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য সফল হবে।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ‘সাংবাদিকবান্ধব’ নেতা ছিলেন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “তখন যারা সাংবাদিক ছিলেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও বাঙালির জন্য তার চিন্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছিল।
“স্বাধীন হওয়ার পর দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। বাসন্তী নামের একজন নারীকে শাড়ির চেয়ে বেশি দামের জাল পরিয়ে ছবি ছাপানোসহ কিছু পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে আসার পর সেই বাসন্তীর সাথে দেখে করেছেন, তার ঘরও পাকা করে দিয়েছেন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর পত্রপত্রিকার সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন, যেখানে ছিলেন মিজানুর রহমান, অধ্যাপক খালেদ, আনিসুজ্জামান খান, গিয়াস কামাল চৌধুরী, আমানুল্লাহ খান, আব্দুল গণি হাজারী। আর ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সলিমুজ্জামান। এর বাইরে সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল।
“তাদের পরামর্শেই পত্রিকার সংখ্যা সীমিত করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাংবাদিক বেকার হননি, বেশিরভাগ চাকরিচ্যুতদের অন্যত্র চাকরি দেওয়া হয়েছিল, বাকিরা তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভাতা নিয়ে আসতেন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সাংবাদিক সমাজের জন্য যা করেছেন তা অতীতে কেউ করেনি। করোনার মধ্যে এদেশে তিনি সাংবাদিকদের সহায়তার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, আশপাশের দেশে তা করা হয়নি। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের তেমন কোনো জোরালো দাবি ছিল না, প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই স্থায়ী ব্যবস্থা করেছেন।
“আজ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার সাংবাদিক উপকৃত হচ্ছে এবং এটি সাংবাদিকদের একটি ভরসাস্থল। কেউ মৃত্যুবরণ করলে পরিবার ৩ লাখ টাকা পায়। সাংবাদিকদের পরিবারকে সহায়তার জন্যও নীতিমালার খসড়া হয়েছে। ডিআরইউ’র এই জায়গাটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। আর জাতীয় প্রেসক্লাবের জায়গা বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের যাত্রাও বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে। সেখানে অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে।”
ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় সভায় ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম ও সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও রাজু আহমেদ, যুগ্মসম্পাদক আরাফাত দাড়িয়া, নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতা নাহার এবং সদস্য মোতাহার হোসেন ও মানিক লাল ঘোষ বক্তব্য দেন।