মাদকের প্রবেশ রোধে নাফ নদীতে মাছ ধরার ট্রলারে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে অভিযানের সিদ্ধান্ত

ঢাকা অফিস :: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পের ভেতরে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে মাদকের প্রবেশ রোধে নাফ নদীতে মাছ ধরার ট্রলারে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ৫ম সভা মেষে সাংবাদিাদের এক প্রশ্নের জাবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন আমাদের এখানে অবস্থান করার কারণে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছি। আমরা বারবার প্রচেষ্টার পরেও তাদের দেশে যাওয়ার যে প্রক্রিয়াটা তাদের অনীহার কারণে শুরু করতে পারিনি। তারপরেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝে মধ্যেই আমরা রক্তপাত দেখছি, সন্ত্রাস দেখছি।
তিনি বলেন, আজ দীর্ঘ আলোচনার পরে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে— ক্যাম্পে আমরা মাঝেমধ্যেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করেছি এবং বিনা কারণে রক্তপাতও দেখছি। মাঝে মাঝে মিয়ানমার থেকে মাদকের আনাগোনাও আমরা লক্ষ্য করছি। এটার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য আমরা তথ্য ভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অভিযানে প্রয়োজনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার তো আছেই প্রয়োজনে আমাদের সেনাসদস্যরাও এতে অংশ নেবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতার নিরিখে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যৌথভাবে ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাহিরে টহল ও অভিযান পরিচালনা করবে। ক্যাম্পের ভেতরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো কেন হচ্ছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি, পাশাপাশি আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ক্যাম্পের চতুর্দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপন যেটা চলছিল, সেটা প্রায় শেষের দিকে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাপে টহল রাস্তা কিছুটা বাকি আছে, শেষের দিকে। ওয়াচটাওয়ার সেখানে হবে। তারা যেন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা করছি। ক্যাম্পের ভেতরে জন্মনিরোধের জন্য একটি এসওপি তৈরির কাজ চলছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইসলামি ফাউন্ডেশন এ নিয়ে কাজ করছে। ঘরে ঘরে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন এবং সচেতন করছেন। মসজিদের ইমাম ও এনজিওরাও এ বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, নাফ নদী মাদক আনা নেওয়ার রুট, সেখানে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে মাদক চোরাচালান বন্ধে অভিযান যেটা ছিল তা আরও জোরদার করা হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকের পাশাপাশি ভারী অস্ত্রও দেখা যাচ্ছে, এ বিষয়ে উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। ভেতরে পুলিশসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, তারা কাজ করছেন। ভারী অস্ত্রের কথা যেটা বললেন, ঠিক অতখানি নয়, মাঝে মাঝে অস্ত্র দ্বারা রক্তপাত হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। তারা কীভাবে কোথা থেকে আসে বিস্তারিত নিয়ে খুব শিগগিরই তথ্য প্রকাশ করবো। তথ্য অনুযায়ী আমাদের পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে।
রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরা মিয়ানমারের মোবাইল ব্যবহার করে, এতে আমরা ক্রিমিনালদের শনাক্ত করতে পারছি না। আমরা যেটা চাচ্ছি তারা যেন আমাদের দেশি মোবাইল ব্যবহার করে। প্রয়োজনবোধে আমরা যেভাবে মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করি সেভাবেই করবো।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930