চট্টগ্রাম ব্যুরো :: অবিভক্ত ভারতবর্ষের অসাম্প্রদায়িক মননের মনীষী, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী’র ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অদ্য ২৪ অক্টোবর কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র উদ্যোগে মোমিন রোডস্থ এতিমখানা প্রাঙ্গণে কদম মোবারক এতিমখানার সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট (ইনচার্জ) লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার’র সঞ্চালনায় সভায় মূখ্য আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ শামসুদ্দিন শিশির, অধ্যক্ষ ড. মোঃ সানাউল্লাহ, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের খতীব অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, ইসলামাবাদীর দৌহিত্র ও যুব উদ্যোক্তা এ.এম.এস. ইসলামাবাদী গাজী, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের মতোয়াল্লী মোহাম্মদ আজাদুল্লাহ খান, এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, লেখক নেছার আহমেদ খান, সংগঠক বোরহান উদ্দিন গিফারী, হাফেজ মাওলানা ইকরাম হোসেন, মিনহাজুর রহমান শিহাব প্রমুখ। সভায় ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ও সোচ্চার। চট্টগ্রামের যেসব মনীষী তাঁদের অলোকসামান্য প্রতিভার ছটায় নিখিল বঙ্গদেশকে উদ্ভাসিত করে তুলেছিলেন, যাঁরা কলকাতাকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ-বাংলা ও বার্মার স্থানে স্থানে সাময়িক কর্মস্থল স্থাপন ও পরিভ্রমণ করে জাতিকে জাগানোর প্রায় অসম্ভব সাধনায় লিপ্ত হয়েছিলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, সমাজসংস্কার, ধর্মপ্রচার, রাজনীতি, আইনসভা যখন যেদিকে তিনি তাঁর প্রতিভা কর্ষণ করেছেন, মুঠো মুঠো ফসলে যেন তাঁর গোলা ভরে উঠেছে। এমনই বিচিত্র পথে বিপুল সৃজনপ্রসূ হয়েছিল তাঁর যুগন্ধর প্রতিভা। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন মানবতাবাদে উজ্জীবিত, অহিংস মতবাদের ধারক, সুশিক্ষার প্রসারে দক্ষ এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব, উদার চিন্তার ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মনীষী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী এবং বিপ্লবীও ছিলেন তিনি। বক্তারা বলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, গোঁড়ামিমুক্ত ধর্মীয় নেতা, নিরলস কর্মী, অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী, অনন্য সমাজ সংস্কারক, শিক্ষা সম্প্রসারণের অগ্রদূত এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, দাতা ও সমন্বয়কারী। নিজের ভোগ-বিলাস পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে পরহিতব্রতে স্বীয় জীবন নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন যা সকলের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। প্রখ্যাত আলেম হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন যুক্তিবাদি, বিজ্ঞানমনষ্ক ও সমাজনিবিষ্ট জনসেবক। বক্তারা আরো বলেন, স্বকীয় সাধনা, চিন্তা, ত্যাগী জীবন সংগ্রাম ও ইতিবাচক কর্মযজ্ঞের ফলশ্রুতিতে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন। তিনি উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ দর্শনের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন ।
উল্লেখ্য, ২৪ অক্টোবর মাওলানা ইসলামাবাদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন, জেয়ারত, দোয়া মাহফিল ও তবারুক বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।
ফেনী প্রতিনিধি : অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ফেনীর ৩২৬ অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পাবেন বীর নিবাস। জেলার ছয়টি উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, বীর নিবাস নির্মাণ শুরুর আগেই যাচাই-বাছাই করে জেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘরের বরাদ্দ পেয়ে এবং নির্মাণ শুরু হওয়ায় ব্যাপক খুশি অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার। সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, অসচ্ছল-শহীদ-প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ লাখ টাকা করে এক একটি পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবেই ফেনীর ৩২৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ৫ পৌরসভায় মোট ৩২৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। ঠিকাদাররা বলছেন, দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে এসব ঘর নির্মাণ করতে গিয়ে তাদের লোকজন গুনতে হবে। তবুও, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করবেন।
ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মোতালেব বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। সরকার যে ঘরগুলো দিচ্ছে তা অবশ্যই ভালো কাজ। এতে করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মাথাগোঁজার ঠাই পাবেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল উল হাসান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সরকার দেশের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভেবে তাদের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ঘর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভীষণ উপকৃত হচ্ছেন। এ প্রকল্প মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
ঢাকা অফিস :: সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ইনার হুইল ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত ‘পঞ্চম দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলন’ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়- জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার যেহেতু বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পায়নি সেহেতু বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলো কি না? এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমি সব সময় বলে থাকি তথ্য ও প্রমাণ ছাড়া কিছু বললে তা কেউ বিশ্বাস করে না। জনগনও তাতে আস্থা রাখে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন। আমাদেরকে কিছু প্রশ্ন আগেই দিয়েছিলেন। তার প্রশ্নের ৭৬ জন গুমসহ অন্যান্য বিষয় আমরা ভিডিও প্রেজেন্টেশন তাকে দেখিয়েছিলাম এবং কোনদিন কী হয়েছে বিস্তারিত বিষয় তার কাছে তুলে ধরেছি। এসব দেখে তিনি কোনো প্রশ্ন আমাদেরকে করেননি।
তাহলে বিএনপি যে বারবার অভিযোগ করে আসছিলো এবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হলো কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় বলে আসছি তারা (বিএনপি) একটা অবস্থার সৃষ্টির জন্য বিভিন্নভাবে রটনা করে যাচ্ছে। যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং সত্যতা দেখাতে পারেনি। ভিত্তি না থাকার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি।
চট্টগ্রাম ব্যুরো :: প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন (৩য় পর্যায়) ৫৮৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘরের মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মুজিবশতবর্ষে একজন লোকও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এর অধীনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১ম পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সারাদেশে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
আগামী ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ৩য় পর্যায়ের (২য় ধাপ) ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ৩য় পর্যায়ে (২য় ধাপ) ৫৮৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হয়েছে। পটিয়া উপজেলায় ১০টি, বোয়ালখালী উপজেলায় ১৫টি, চন্দনাইশ উপজেলায় ১৫টি, সাতকানিয়া উপজেলায় ২০টি, লোহাগাড়া উপজেলায় ৫১টি, বাঁশখালী উপজেলায় ১৫টি, হাটহাজারী উপজেলায় ৬০টি, ফটিকছড়ি উপজেলায় ১০০টি, আনোয়ারা উপজেলায় ১০০টি, মীরসরাই উপজেলায় ১০৯টি, রাউজান উপজেলায় ৫৪টি এবং সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৩৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হবে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলা যথাক্রমে পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলাকে হালনাগাদ যাচাই-বাছাইকৃত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২১ জুলাই ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রমত্তা পদ্মার বুকে দক্ষিণ জনপদের স্বপ্নের সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শনিবার পদ্মাসেতু উদ্বোধন শেষে মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “তাদের একটা জবাব আমরা দিয়েছি। তাদেরকে একটা উপযুক্ত জবাব আমরা পদ্মাসেতুর মধ্য দিয়ে দিতে পারলাম যে, বাংলাদেশও পারে।” বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর জনগণের ‘সাহস ও শক্তি নিয়েই’ সেতুর কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আজকে আলহামদুলিল্লাহ আমরা সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাইবোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।“আমাদের প্রত্যেকটা এলাকা এত দুর্গম ছিল, আজকে সেখানে রাস্তাঘাট, পোল, ব্রিজ করেছি বলেই সব জায়গায় যোগাযোগ হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। এই এলাকার লোক যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সেজন্য পায়রা পর্যন্ত আমরা সেতু বানিয়ে দিয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে মানুষ চলাফেরা করতে পারে।”
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মাওয়ায় পদ্মার তীরে উন্মোচিত হল ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবীর, বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এ ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দশক আগে তিনিই দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের এ স্বপ্নের সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
সকালে হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পবির্তন করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।”
সুধী সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক ব্যাংক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খামের মোড়ক উন্মোচন করেন।
তারপর প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল পরিশোধ করে গাড়ী নিয়ে সেতু এলাকায় প্রবেশ করেন সরকারপ্রধান। সেখানে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করে তিনি উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে তাকে সেলফিবন্দি হতেও দেখা যায়।
ঢাকা: ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২২’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২০ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এই সুবিধা পাবেন নাগরিকরা। পেনশনাররা (১৮-৬০ বছর) আজীবন পেনশন পাবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় বয়স্ক লোকদের জন্য ৫০ বছরের অধিক কেউ থাকলে বিবেচনায় নেওয়া হবে। পেনশন পেতে কমপক্ষে ১০ বছর নিয়মিত চাঁদ দিতে হবে।
একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চারজন সদস্য নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এছাড়াও, ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য একটা ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের ভুয়া ও অপসাংবাদিকতা থেকে নিরাপদে রাখা। সাংবাদিকতার নামে অনেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে এমন খবরও গোচরে আসে। তাদের সম্পর্কে জনমনে নানা প্রশ্ন। জনগণ তাদেরকে ‘সাংঘাতিক’ও বলছেন। তাই সাংঘাতিক না হয়ে সঠিক ও সত্যনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরে প্রকৃত সাংবাদিক হিসাবে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি। শনিবার (৪ জুন) সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত প্রেস কাউন্সিল আইন ও তথ্য প্রযুক্তি আইন বিষয়ক রাঙ্গামাটিতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জনাবে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আল মামুন মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব মোঃ শাহালমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের প্রাক্তণ সভাপতি ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, সাধারন সম্পাদক আনোয়ার আল হক, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা, সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নন্দন দেবনাথ প্রমূখ।
বিচারপতি আরো বলেন, সাংবাদিকরা সরকারের পরিপূরক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের সম্মান করতেন। যে কারণে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ১৯৭৪ সালে প্রেস কাউন্সিল আইন বাস্তবায়ন করেন। সে লক্ষ বাস্তবায়নের জন্য প্রেস কাউন্সিল কাজ করছে। আর সাংবাদিকরা কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরো বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বা গ্রেফতার করার আগে প্রেস কাউন্সিলের সাথে কথা বলতে হবে। অন্যায়ভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানী করা হলে প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিল আইনি সহায়তা দিবে।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতার অপব্যহার হচ্ছে। তাদের অনেকে সাংঘাতিক কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মান রক্ষা করতে হলে নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন আছে। সাংবাদিকতা পেশার সম্মান এখন আগের মতো নেই। প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের জন্য কাজ করছে। সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম গ্রাজ্যুয়েশ থাকতে হবে। তবে তা পাচঁ বছর আগে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নয় বলে তিনি জানান।
এ সময় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তথ্য প্রযুক্তি আইনের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যাবহার ও অনলাইন পোর্টালের দৌরাত্ব কমাতে তথ্য প্রযুক্তি আইনের প্রয়োজন আছে। তবে এ আইনে আসামীকে জামিন দেয়া যাবে না যে বিধান আছে তার সাথে দ্বিমত করে তিনি বলেন, এটি সংশোধন করা প্রয়োজন। একই সাথে তথ্যমন্ত্রীর দেয়া ঘোষণা “এ আইনে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা যাবে না” তা বাস্তবায়নেরও আহবান জানান প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান।
কর্মশালায় রাঙ্গামাটিতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৪২ জন সাংবাদিক অংশগ্রহন করেন।
॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ সমাজের সুষ্ঠু বিকাশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সমাজ যাদের দিকে তাকানোর সুযোগ পায় না, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সেই মানুষের না বলা কাহিনী তুলে ধরে।’
তিনি আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১১ জন সাংবাদিককে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য প্রত্যেককে আড়াই লাখ টাকা, মফস্বল সাংবাদিকতায় ৬৪ জন প্রবীণ সাংবাদিক প্রত্যেককে এক লাখ টাকা এবং সকলকে সনদপত্র ও সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়।
তথ্যমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন ও বসুন্ধরা গ্রুপকে বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই ধরনের পুরস্কার প্রদান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও সার্বিকভাবে সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করবে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যা সমাজকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করতে সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দিতে এবং অবহেলিত দিকগুলোতে সমাজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে যেভাবে ভূমিকা রাখে, তা অন্য কোনো পেশার মানুষ পারে না।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিন্ন মাত্রার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ ধরনের সাংবাদিকতায় ঝুঁকি থাকে, জীবন বিপন্ন হতে পারে। সেসব অতিক্রম করে সাংবাদিককে কাজ করতে হয়। পথের পাশের বিপন্ন মানুষগুলোর জীবনের যে গল্প, যে বেদনা, সেটিও তুলে আনতে পারে অনুসন্ধানী সাংবাদিকই।
গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতূর্থ স্তম্ভ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে গণমাধ্যমের বিকাশের সাথে রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশ নিহিত উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেকারণেই বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১৩ বছরে সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিটি ক্ষেত্র যুগান্তকারী বিকাশ লাভ করেছে। একইসাথে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও আইনবিরোধী চর্চা কমে এসেছে।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতিতে আমরা বিশ্বাস করি, লালন করি। সমালোচনা পথ চলাকে শাণিত করে, কাজকে বিশুদ্ধ করে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান তার বক্তৃতায় অতিথিদেরকে উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানান। সভাপতির বক্তব্যে সায়েম সোবহান আনভীর পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন এবং পুরস্কারের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা বুবলির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে ডেইলি স্টারের আহমাদ ইশতিয়াক, মাছরাঙা টেলিভিশনের কাওসার সোহেলী, জাগো নিউজ ২৪.কম-এর সালাহ উদ্দিন জসিম, অপরাধ ও দুর্নীতি ক্যাটাগরিতে দেশ রূপান্তরের শোয়েব চৌধুরী, জিটিভির জান্নাতুল ফেরদৌসী, নিউজ বাংলা২৪.কম-এর জেসমিন পাপড়ি, নারী ও শিশু ক্যাটাগরিতে সমকালের রাজীব আহাম্মদ, আনন্দ টিভির শওকত সাগর, ঢাকা পোস্টের আদনান রহমান, অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে মাছরাঙা টেলিভিশনের মাজাহারুল ইসলাম, তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদানের ক্যাটাগরিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ এবং আলোকচিত্রে প্রথম আলোর দীপু মালাকার, পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পুরস্কারের জুরিবোর্ডে ছিলেন, অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক দেশ রূপান্তর সম্পাদক অমিত হাবিব, লেখক নাসির আলী মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার ও সাংবাদিক জুলফিকার আলি মানিক।
॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে বহু-প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে। সোমবার (৩০ মে) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের এই একটি সিদ্ধান্ত-বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশিপাশি জাতির আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে।’ ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদরদপ্তরের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আর্মি সিলেকশন বোর্ড ২০২২ এর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, জনৈক ব্যক্তি পদ্মা সেতু প্রকল্পে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনায়- কোন বোর্ড মিটিং না করেই বিশ্বব্যাংক সেতুটি নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও পরে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছি, (বাংলাদেশকে স্বল্পেন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে) তা নিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেত হবে।
সেনাবাহিনীর বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর্মি সব সময়ই অবকাঠামো নির্মাণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনগণের আত্মবিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাই জনগণের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজন সংক্রান্ত সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের খুরুসকুলে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সারা দেশে কেউ ভূমিহীন এবং গৃহহীন থাকবে না কারণ তাঁর সরকার বিনামূল্যে জমি দিয়ে বাড়ি করে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র উদাহরণ যেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গতিশীল নেতৃত্বে তিন মাসের মধ্যে মিত্র বাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছে। তৎকালীন পূর্ব (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিটি সেক্টরে বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি সামরিক সার্ভিসে শুধুমাত্র একজন কর্নেল ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তবে, এখন জেনারেলরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে নেতৃত্বের জন্য পেশাদারি দক্ষতা, উৎকর্ষ, সততা ও দেশপ্রেম সম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। ‘আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে পেশাদারভাবে দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব এবং আপনাকে পদোন্নতির জন্য উচ্চ নৈতিক চরিত্রের উপর গুরুত্ব দিতে হবে বলেন প্রধানমন্ত্রী।’ দায়িত্ব প্রাপ্তরা সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং ন্যায়বিচারের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আনুগত্যসহ নেতৃত্বের জন্য দৃঢ় মানসিকতা, সততা এবং অন্যান্য গুণাবলীসম্পন্ন কর্মকর্তারা উচ্চতর পদোন্নতির জন্য যোগ্য। যাদের সামরিক জীবনে সফল নেতৃত্বের রেকর্ড রয়েছে এমন অফিসারদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা উচিত।’
সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা জনগণের পাশে থাকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরপরই একটি উন্নত, পেশাদার ও প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।