॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ ওপারে রেখে এসেছেন ঘর-বাড়ি; সাজানো সংসার ফেলে আসতে হয়েছে মিয়ানমারে সৈন্যদের নির্যাতন-নিপীড়নে; প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে।
তিন সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা শুরুর পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের রাখা হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ায়।
পালিয়ে আসা যারা অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে প্লাস্টিক-ত্রিপলের নিচে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, তারা নিজেদের কিছুটা ভাগ্যবানই ভাবছেন। কিছু ত্রাণ পেলেও বেশির ভাগ রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে তা জুটছে না।
সরকারি, বেসরকারি আর ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গাদাগাদি করে সেখানে থাকছেন রোহিঙ্গারা। যে প্লাস্টিক-ত্রিপলে ঘরের উপরের ছাউনি, তার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই।
আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া মিয়ানমারের ফকিরা বাজার লেমসি পাড়া বাসিন্দা আবদুল মালেক জানালেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তার ঘরে হাড়ি উঠেনি। খেতে পায়নি তিন শিশুসহ ১০ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা। তিন সন্তান আনিস, শোয়াইব, ফারজানা বেগমের কষ্টে বাসা থেকে বের হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন বাবা মালেক। এক পর্যায়ে রিলিফের টোকেন যখন তিনি সংগ্রহ করেন, ততক্ষণে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। তবে সেখান থেকে যে ত্রাণ পেয়েছেন, তা দিয়ে এক বেলা চলবে বলে জানান, দিন মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করা মিয়ানমারের এই নাগরিক।
মালেক জানান, তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ফারজানার জ্বর হয়েছে, সেই সঙ্গে পাতলা পায়খানাও। ঢাকা থেকে এক চিকিৎসক এসেছে শুনে তিনি গিয়েছিলেন মেয়েকে নিয়ে, কিন্তু টোকেন না থাকায় দেখাতে পারেননি।
কুতুপালং নতুন ক্যাম্পের এই বাসিন্দা বলেন, প্রধান সমস্যা পানির। পাহাড়ের পাশে একটা ছোট খাল আছে, কিন্তু সেখানে টয়লেটের বর্জ্যও গিয়ে পড়ে। খাবার পানির জন্য অবস্থাও ভালো না।
বালুখালী ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বিভিন্ন জায়গায় কিছু চাপকল বসানো হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে কিছু টয়লেটও। তবে দিনের বেলায়ও এ সব টয়লেটের সামনে দীর্ঘ লাইন।
ছোট বাচ্চাকে চিকিৎসক দেখাতে আসা রওশন আরা নামে বালুখালী ক্যাম্পের এক নারী জানান, সবাই ত্রাণ পেলেও তার ভাগ্যে তা জোটেনি। চিকিৎসক আসার খবর শুনে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু ওষুধ পাননি।
নতুন এই ক্যাম্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা দিতে সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা বেশ কিছু মোবাইল টিম কাজ করে। তবে দুপুর গড়াতেই এ সব টিমের অধিকাংশ কাজ গুটিয়ে ফেলে।
রওশন আরার সঙ্গে কথা বলার সময়ও খোলা ছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি সেবাকেন্দ্র। তবে নিয়ে আসা সব ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানেও চলছিল সব গুটানোর কাজ। তাই বাচ্চার চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না তিনি।
মিয়ানমারের সাব বাজারের উত্তরে ইয়াদ্দিনা পাড়ার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম স্বামী আলী আহমদের সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে এসেছেন। ঘর-দোর ছাই হওয়ার পর দীর্ঘ যাত্রা শেষে বাংলাদেশে এসে পৌঁছতে পারার আনন্দও বিষাদে পরিণত হয়েছে। সন্তানকে চিকিৎসক দেখানো নিয়ে ঝগড়ার পর স্বামী তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। মগের দেশে অশান্তি বলে এখানে এসেছি, এখানে অশান্তি হলে কোথায় যাব, হতাশ কণ্ঠে বলেন রোকেয়া।
স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে কাজ করা ডা. রঘুনাথ কর্মকার বলেন, এরা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। যথাযথ স্যানিটেশন নেই। খোলা আকাশের নিচে আছে। এই কারণে জ্বর-কাশি-নিউমোনিয়া-ডায়রিয়া এ সব রোগ বেশি হচ্ছে।
কেউ কেউ অনেক দিন না খেয়ে থাকায় ‘হাইপোপ্লাইসেমিয়াতে’ ভুগছে বলেও জানান তিনি।
৪ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরুর পর ১৫ হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার দাবি করে ডা. রঘুনাথ বলেন, এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ডায়রিয়া বা কলেরায় যাতে আক্রান্ত না হয়।
ক্যাম্পের বাইরে ঃ
শরণার্থী শিবিরের বাইরে যারা রয়েছেন, সেসব রোহিঙ্গাদের জীবন আরও কষ্টের। ক্ষুধা মেটাতে ত্রাণের আশায় রাস্তার পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন অনেকে। ত্রাণ এলেও তা পাওয়া দুস্কর হচ্ছে দুর্বল ও বৃদ্ধদের জন্য। এদের আবার কেউ বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের গাছ কেটে জায়গা করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করছেন।
সবাইকে বালুখালী নিতে সরকারি উদ্যোগের কথা এদের অধিকাংশই জানে না। এত মানুষের ঠাঁই বালুখালীতে হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
ত্রাণের আশায় ঠাঁয় দাঁড়ানো অনেককে দেখা গেছে হারিয়ে যাওয়া স্বজন কিংবা পরিচিতজনদের খুঁজতে। এমনই একজন সেতারা বেগম, যার স্বামীকে মিয়ানমারের সৈন্যরা হত্যা করে বলে জানান তিনি।
স্বামীর লাশটি দেখার জন্য পেছনে না তাকিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন সেতারা। আসার সময় সঙ্গী ছিল প্রতিবেশী দুই তরুণী। এক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ওই প্রতিবেশীদের খুঁজছিলেন সেতারা।
সামাজিক বাস্তবতার কারণে পুরুষ আত্মীয় না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়েছেন এই নারী; তাই শরণার্থী শিবিরের না থেকে বাইরে থাকছেন, ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে জীবন।
ক্যাম্পের বাইরে যে সব জায়গায় মানুষ আবাস গড়ছে, সে সব এলাকায় স্যানিটেশনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। দিন যত যাচ্ছে, এসব এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে, বাড়ছে দুর্গন্ধ।
গত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় থাকা সাবেক সাংবাদিক এবং বর্তমানে এনজিও কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এখন এখানকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খাদ্য-পানি-স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে শনিবার নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘মূল কারণগুলো’ তুলে ধরে তা নিরসনে বাংলাদেশের প্রস্তাব তিনি সেখানে বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, শনিবার দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একটি ভিভিআইপ ফ্লাইটে আবুধাবির উদ্দেশে রওনা হবেন সরকারপ্রধান। সেখান থেকে রোববার সকালে ইতিহাদের ফ্লাইটে রোববার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবেন।
নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আগামী ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর চলবে সাধারণ বিতর্ক, যেখানে এই বিশ্ব সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন।
এবার এমন এক সময়ে বিশ্ব নেতারা জাতিসংঘ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন।
কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও আশপাশের জেলায় এ দফায় প্রবেশ করেছে আরও প্রায় চার লাখ শরণার্থী। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের এই মানবিক সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মিয়ানমার তাদের অবস্থানে অনড়। রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানকে তারা বর্ণনা করছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে। এমনকি রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতেও মিয়ানমার সরকার রাজি নয়।
এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছেও সমালোচিত হচ্ছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হলেও তিনি এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে যাচ্ছেন না বলে মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যে জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শরণার্থী সঙ্কট এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
“লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিতে এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি।”
তিনি জানান, এই সঙ্কটের মুহূর্তে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরবেন। পাশাপাশি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট প্রস্তাব তিনি জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন।
গত বছর অক্টোবরে রাখাইনে সেনা অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনর প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের কথাও বাংলাদেশের প্রস্তাবে থাকবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
গত ২৪ অগাস্ট সু চির হাতে তুলে দেওয়া আনান কমিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নাগরিকত্ব না পাওয়ায় এবং নিদারুণ বৈষম্যের কারণে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন রাজ্যে মুসলমান রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। তাদের ওপর বলপ্রয়োগের পথ ছেড়ে মিয়ানমার সরকারকে যৌক্তিক সমাধানের পথে আসতে হবে।
কফি আনান ওই প্রতিবেদন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনা ঘটে, যার পেছনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করে আসছে মিয়ানমার সরকার। এরপর নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল চলছে।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রস্তাব তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সকল রোহিঙ্গার নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম সাধারণ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন এই বিশ্ব সংস্থার রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সঙ্কট যে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, জাতিসংঘ মহাসচিবও সে কথা বলেছেন।
২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর ওইদিনই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত ‘জাতিসংঘ সংস্কার’ বিষয়ক এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অ্যান্ড অ্যাবিউজ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।
‘গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ বিষয়ক এক ফলোআপ বৈঠকেও তার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে ওইদিন।
১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। অন্যান্য দেশের নেতারাও সেখানে থাকবেন।
একই দিনে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের সভাপতিত্বে ‘উইমেন্স ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট ফর লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে যোগ দেবেন।
ওইদিন সন্ধ্যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ও কমনওয়েলথের বর্তমান চেয়ার-ইন অফিস মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকেট আয়োজিত কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরে ম্যাডিসন অ্যাভিনিউয়ের প্যালেস হোটেলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
রাতে নিউ ইয়র্কের ম্যারিয়ট স্কয়ারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অয়োজিত একটি সংবর্ধনা সভাতেও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
তিনি ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পরমাণু অস্ত্র নিরোধ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ‘এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন, ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড মনিটরিং: শেয়ারিং ইনোভেশনস থ্রু সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রাইয়াঙ্গুলার কো-অপারেশন’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ইউএনডিপি ও ইউএন অফিসের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
একই দিনে ‘ক্রিয়েটিং এ পলিসি ভিশন ফর এসডিজি ফাইন্যান্স: ফ্যাসিলিটেটিং প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য এসডিজিস শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত একটি মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেবেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে ইথিওপিয়ার প্রতিনিধিদল আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত আলোচনাতেও সেদিন যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া এবং মহাসচিবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের একটি প্যানেলের চতুর্থ বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ফাঁকে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
সেদিন সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এই সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসবেন প্রধানমন্ত্রী।
সফর শেষে ২২ সেপ্টেম্বর তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সেখানে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিবারের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সূচি অনুযায়ী ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ ইউনাইটেড ন্যাশনস চিলড্রেন ফান্ড (ইউনিসেফ) বৃহস্পতিবার বলেছে, মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট সর্বশেষ সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক চার লাখ রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
কক্সবাজার থেকে ইউনিসেফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই শিশু। আগে থেকে আশ্রয় নেয়া শরণার্থী শিবিরগুলোতে নতুন করে আসা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার স্থান সংকুলান হচ্ছে না হওয়ায় তারা যেখানেই জায়গা পাচ্ছে আশ্রয় নিচ্ছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রীবাহী ট্রাকগুলো কক্সবাজারের দিকে আসছে। আগামী দিনগুলোতে আরো ত্রাণ সামগ্রী আসবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফ প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বিগবেডার বলেন, ‘শরণার্থীদের জন্য বিশেষত: জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানিসহ সবকিছুরই প্রয়োজন রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিশুরা সেখানে পানিবাহিত রোগের ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে।
এডুয়ার্ড আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এই শিশুদের রক্ষা করাই আমাদের প্রধান কাজ।’
ইউনিসেফের বিবৃতি অনুযায়ী শিশুদের জন্য পাঠানো তাদের ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে গুড়া সাবান, সাবান, পানির পাত্র, তোয়ালে, স্যানিটারি ন্যাপকিনস ও স্যান্ডেল রয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি পানি শোধানাগার স্থাপন ও সরবরাহে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে সহায়তা করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নলকূপ স্থাপনে ইউনিসেফ তার অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।’
এডুয়ার্ড বলেন, ‘এই ত্রাণ সামগ্রীগুলো বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ক্রমবর্ধমান রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ইউনিসেফের পক্ষ থেকে প্রথম দফার জরুরি সহায়তা।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তার জন্য ইউনিসেফ আগামী ৪ মাসে দাতা দেশগুলোর কাছে ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা চেয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে এই অবস্থা চলতে থাকলে বছরের শেষ নাগাদ ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার অপারেশসন্স অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মেদ আবদিকার মোহামুদ এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র সহকারী হাই কমিশনার জর্জ ওকোথ-ওব্বো বৃহস্পতিবার কক্সবাজার পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এ শঙ্কার কথা জানান।
শরণার্থীদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে আবদিকার মোহামুদ বলেন, “আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে।”
গত ২৫ অগাস্ট থেকে নতুন করে প্রায় চার লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আসায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা সামালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘এখনও যথেষ্ট’ করছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই সংকটে বাংলাদেশ সরকার যে জরুরি সাড়া দিয়েছে তার প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আরও অনেক কিছু করতে হবে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রোববার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সংগঠন ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নাগরিকত্বের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠী অস্তিত্বের সঙ্কট, নিষ্ঠুরতা এবং উৎখাতের শিকার।
“হাজারে হাজারে রোহিঙ্গা সীমান্ত পার করে ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশ এ সমস্যায় সরাসরি আক্রান্ত। বাংলাদেশ একমাত্র মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিচ্ছে।”
আবদুল হামিদ বলেন, “মিয়ানমারের এই সমস্যাকে এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজের ভূমি রাখাইনে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সাথে ফিরে গিয়ে থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে আমি ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই।”
কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে চলমান জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।
এর মধ্যে গত ২৪ অগাস্ট রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে।
এ দফায় ইতোমধ্যে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ধারণা।
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতেও তারা রাজি নয়।
আস্তানার ‘প্যালেস অব ইনডিপেনডেনসে’ চলমান ওআইসি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বিভিন্ন দেশ তাদের উন্নত প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতা পৃথিবীতে অন্য এক বিভেদ তৈরি করছে।
পশ্চিমা প্রযুক্তি এবং রেনেসাঁর সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের তাল মেলাতে না পারার প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, এক সময় মুসলমানরা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিত তা ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। নতুন জ্ঞানের অন্বেষণে বিনিয়োগ করতে হবে, সমন্বিত গবেষণা ও উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করতে হবে।
মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদদের একই নেটওয়ার্কের আওতায় কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদী কর্মসূচি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বিশ্বের মধ্যে মুসলমানদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আরও গতিশীলতা তৈরি করবে।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নীতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, এই নীতির ফলে বাংলাদেশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। ওষুধ শিল্প ও বিকল্প ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে আধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বাংলাদেশ ব্যবহার করছে। জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল শস্য উদ্ভাবন করেছে, পাটের জেনম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে।
এ সময় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনেকেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই ধরনের সামর্থ্য রয়েছে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। সুনির্দিষ্ট প্রকল্পে দ্বিপক্ষীয়-যৌথ এবং অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে আমাদের কাজ করা দরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দারিদ্র বিমোচন এবং উন্নয়নের ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।”
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
এ সময় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে কিছু ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ প্রস্তাব করেন আবদুল হামিদ।
গবেষণা ও উন্নয়নে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ উদ্যোগ; ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তির শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ; বিজ্ঞানী ও উদ্যেক্তাদের এক নেটওয়ার্কের আওতায় আনা; বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা বিনিময়ের কর্মসূচি গ্রহণ; উদ্ভাবনের বাণিজ্যিক প্রয়োগে সহযোগিতা এবং চাকরির বাজার সৃষ্টিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি; উদ্ভাবন-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থায়নে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের মত বিষয় রয়েছে তার এই ‘প্ল্যান অব অ্যাকশনে’।
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওআইসির সামিট চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন, ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিন বক্তব্য দেন।
ওআইসির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক এই সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি হামিদ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ভারতের একটি বড় অংশে প্রায় তিনশ বছর রাজত্ব করেছিল মুঘল সাম্রাজ্য।
মুঘল সুলতানদের ইতিহাস সরিয়ে দিয়ে সেখানে নিয়ে আসা হচ্ছে হিন্দু শাসক ছত্রপতি শিবাজীর প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের ইতিহাস।
এ নিয়েই সে রাজ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ভারতের বেশীরভাগ সৌধ মুঘল আমলে তৈরি হয়েছিল। প্রায় তিনশো বছর রাজত্ব করা মুঘল সাম্রাজ্য দেশের ইতিহাসের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কিন্তু মহারাষ্ট্রের অনেক স্কুল পড়ুয়াদের কাছে সেই ইতিহাসের কোনও গুরুত্ব নেই।
তাদের সিলেবাস থেকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে মুঘল আমলের ইতিহাস।
পরিবর্তে ইতিহাস বইগুলিতে ছত্রপতি শিবাজীকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সপ্তদশ শতকে শিবাজী মুঘলদের পরাজিত করে মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সেই রাজত্ব মহারাষ্ট্র্রের সীমা ছাড়িয়ে আরও বেশ কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ছত্রপতি ছিলেন হিন্দু। আর মুঘলরা ছিলেন মুসলমান।
ছবির কপিরাইট AFP Image caption মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অনন্য সৃষ্টি তাজমহল
কিন্তু ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক কমিটি বলছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কোনও কারণ নেই।
কমিটির চেয়ারম্যান সদানন্দ মোরে জানাচ্ছিলেন, “আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। তাই মারাঠা ইতিহাসের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগ আছে। সমস্যাটা হল বইয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা সীমিত। তাই দুটো ইতিহাসই রাখা কঠিন, আবার মুঘল ইতিহাস রেখে মারাঠা ইতিহাস তো সরিয়ে দেওয়া যায় না!”
দক্ষিণ-পন্থী রাজনৈতিক দলগুলি মুঘলদের ‘মুসলিম আক্রমণকারী’ হিসাবে চিহ্নিত করে। তাদের কথায়, হিন্দুদের ওপরে অনেক অত্যাচার করেছে মুঘলরা।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বক্তব্য আরও জোরালো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু মুঘল শাসক ইসলামের প্রসারের চেষ্টা করেছেন ঠিকই কিন্তু বাকিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু রাজত্বগুলির ওপরে শান্তিতেই কর্তৃত্ব করেছেন।
এদের কথায়, মুঘল সম্রাটদের শাসন ক্ষমতা বা দক্ষতার নিরিখেই তাদের বিচার করা উচিত, ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নয়।
বাংলাদেশে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির পর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিথিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারনোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।
বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়াদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেও মেনে নিতেও তারা নারাজ।
এদিকে গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর সীমান্তে নতুন করে এই রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, গত ১২ দিনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৮৭ হাজার মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে মালদ্বীপ।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী মিয়ানমারের এই নাগরিকদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের এই নাগরিকরা মাদক পাচার, জঙ্গি তৎপরতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে তারা বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে বলে তথ্য এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
ইহসানুল করিম বলেন, “আমাদের নীতি যে অত্যন্ত স্পষ্ট, তা রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টিতে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।”
মানবিক কারণে মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক নাগরিককে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে স্থান দেওয়ার প্রশংসা করে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সঠিক কাজই করেছে।
তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন বলে প্রেস সচিব জানান।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা আলোচনায় তুলে ধরেন নতুন রাষ্ট্রদূত। আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নিজের দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ৫০ আসনের উড়োজাহাজ তৈরিতে সাফল্য পাওয়ার কথা বলেন।
বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়েও বৈঠকে কথা হয় বলে ইহসানুল করিম জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এলএনজি বিদ্যুৎ ইৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে ইন্দোনেশিয়ার আগ্রহের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
আর প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
দুই নারীভক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হরিয়ানা রাজ্যের রোহতাক কারাগারের অস্থায়ী আদালত। দুটি ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁকে ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের সাজার কথা শোনান আদালত।
ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান একটি ধর্ষণের অপরাধে ১০ বছর কারাদণ্ড ভোগের পর আরেকটি ধর্ষণের অপরাধের সাজা ভোগ করবেন বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় আজ সোমবার দুপুরে এ রায় দেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইর বিশেষ আদালতের বিচারপতি জগদীপ সিং।
এর আগে বিচারপতি ও তাঁর দুই সহকারীর নিরাপত্তার জন্য হরিয়ানা সরকারকে নির্দেশ দেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের হাইকোর্ট। জেল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলের মধ্যে বিচারপতি ও দুই পক্ষের আইনজীবীরা যাতে আদালতের মতো সুযোগ-সুবিধা পান, তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
এদিকে আজ রায় ঘোষণার সময় রোহতাকে লক্ষাধিক রাম রহিম-ভক্ত জড়ো হয়। রোহতাকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার রাত থেকেই শহরটিতে ১০ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়।
রায়ের আগেই রোহতাক জেলায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ রোহতাকে ঢুকলে আটক করা হবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া জেলার সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাতে কড়া নজরদারির নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের প্রধান বিচারপতিদ্বয়ের কাছে বেনামি চিঠিটি লেখেন হরিয়ানার সিরসা শহরের ‘গুরু’রাম রহিমের ডেরার (আস্তানা) এক নারী। সেখানে আনা হয় রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ। তুলে ধরা হয় ডেরার ভেতরে বিভিন্ন অনাচারের কথা।
বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হওয়ার পর শুক্রবার দেওয়া রায়ে প্রমাণিত হয় সেই চিঠিতে লেখা অনেক অভিযোগ। ভারতের বিশেষ আদালত রাম রহিম সিংকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩৭৬ (ধর্ষণ) ও ৫০৬ (সন্ত্রাসী হুমকি) ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারাবলে তাঁর সর্বনিম্ন সাত ও সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে শুক্রবার রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতায় নিহত হয় কমপক্ষে ৩৮ জন। আহত হন ২০০ জনের বেশি মানুষ।
ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যাপক সহিংসতা শুরু করেছে তার ভক্তরা।
সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকে সেনা-পুলিশ সব প্রস্তুত রেখেও পরিস্থিতি বাগে আনা যায়নি। লঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও পাঁচকুলা পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
সেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
পঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিভিন্ন স্থানে গন্ডগোল শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই দু’টি রেলস্টেশনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ধর্মগুরু রাম রহিমের ক্ষুব্ধ অনুসারীরা। দু’টি থানাতেও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা।
ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচ্চা সওদার সদর দফতর সিরসায় এবং পাঁচকুলায় রাম রহিমের অনুসারীরা সংবাদমাধ্যমকেও আক্রমণ করেছে। সংবাদকর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ ডেরা সমর্থকরা।
চন্ডিগড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় শহরজুড়ে কয়েকটি স্থানে এবং পঞ্জাবজুড়ে কারফিউ জারি হয়েছে।
রাম রহিম সিংয়ের লাখো সমর্থককে চন্ডিগড়ে ঢুকতে দেওয়ার জন্য হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমারিন্দর সিং। চন্ডিগড় দুই রাজ্যেরই রাজধানী।
ধর্মগুরুর মামলার রায় শুনতে আগে থেকেই শহরটিতে রাম রহিমের দুই লাখের বেশি ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন।
আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে সহিংসতা শুরু হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় হরিয়ানা ও পঞ্জাবে।
উত্তেজনার মধ্যেই সিরসায় নিজের সাংগঠনিক দপ্তর থেকে ১০০ গাড়ির বহর নিয়ে রওনা হয়ে আড়াইশ কিলোমিটার দূরে পাঁচকুলা আদালতে পৌঁছান রঙদার চরিত্র রাম রহিম সিং।
আদালত দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই ৫০ বছর বয়সী রাম রহিমকে কড়া পাহারার মধ্যে আম্বালা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রায় শোনার পর আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বহু সমর্থক। টেলিভিশন ফুটেজে ওই সময়ই রাম রহিমের অনুসারীদেরকে সহিংসতায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে।
বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল। শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে বাবা রাম রহিম তৈরি করেছেন তার আশ্রম- ডেরা সাচ্চা সওদা।
হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন।অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।
২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক রাতে ২৪টি পুলিশ পোস্টে ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের’ হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্যসহ অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের মংডু এলাকার বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে সমন্বিত এই হামলার সূচনা হয়।
রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের এই সমন্বিত হামলার ঘটনায় সঙ্কট নতুন মাত্রা পেল।
হামলায় নিহত নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্যের মধ্যে ১০ জন পুলিশ ও এক সেনা সদস্য রয়েছেন; নিহত বাকি ২১ জন ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহী’ বলে জানায় রয়টার্স।
তাদের খবরে বলা হয়, হামলার বিষয়ে শুক্রবার ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)’ নামে একটি গ্রুপ দায় স্বীকার করেছে। এক সময়ে ‘হারাকা আল-ইয়াকিন’ নামে পরিচিত এই গ্রুপটিই গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল।
মিয়ানমার সরকারের বিবৃতির বরাত দিয়ে মিজিমার খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গা গেরিলাদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ পোস্ট ঘিরে ফেলে এই হামলা চালায়। তাতে পাঁচ পুলিশ সদস্য এবং অন্তত সাতজন হামলাকারী নিহত হন।
ভোর ৩টার দিকে প্রায় দেড়শ হামলাকারী খামারা এলাকায় একটি সেনা ক্যাম্পে ঢোকার চেষ্টা করলেও প্রতিরোধের মুখে পিছিয়ে যায় বলে জানানো হয়েছে সরকারের বিবৃতিতে।
গত অক্টোবরে প্রায় একই ধরনের হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর বড় ধরনের দমন অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং ধর্ষণের মত অভিযোগ ওঠে।
সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযানের মুখে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান রাখাইন থেকে পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয় বলেও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
রয়টার্স বলছে, চলতি মাসে নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়গুলোয় নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বৃহ্স্পতিবার রাতে শুরুর পর কিছু কিছু এলাকায় সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে এখনও সংঘর্ষ চলছে।
নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দুইটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
এদিকে ঘটনার পর এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সুচির কার্যালয়ের প্রেস উইং।
বিবৃতিতে বলা হয়, “উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার একটি পুলিশ স্টেশনে হাতে তৈরি বোমা নিয়ে চরমপন্থি বাঙালি বিদ্রোহীরা আক্রমণ করে। রাত ১টার দিকে আরও কয়েকটি পুলিশ পোস্টে তারা সমন্বিত হামলা চালায়।”
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারে ব্যাপক বিরোধিতা বিদ্যমান। দীর্ঘদিন ধরে সেনা শাসনে থাকা দেশটির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তিন দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ।
রাখাইন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে থাকে। সু চির নিজ দলেরও অনেকে এই অবস্থানে আছেন। এই কারণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে মিয়ানমার। গত বছরের মে মাসে মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্শিয়েলকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন সু চি।
গত বছরের অক্টোবরে দমন অভিযান শুরুর প্রেক্ষাপটে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাসহ দেশটির সব জনগোষ্ঠীকে ফেরত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে উদ্ভূত এই শরণার্থী সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে বারবার আহ্বান সত্ত্বেও আগের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না দেশটির সরকার।
সু চির প্রেস উইং জানিয়েছে, ১৫০ জন রোহিঙ্গা আক্রমণকারী একটি সেনা ক্যাম্প ভাঙার চেষ্টা চালিয়েছিল, সেনা বাহিনী পাল্টা হামলা করেছে।
সাম্প্রতিক অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে মিয়ানমার পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র কর্নেল মায়ো থু সোয়ি বলেন, “আমরা তাদের ক্যাম্প, গুহা ও বোমা এবং গুহার ভেতর মুখোশ খুঁজে পেয়েছি বলেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছে।”
এদিকে এবার হামলাকারীর সংখ্যা গত অক্টোবরের হামলাকারীদের থেকে অন্তত পাঁচগুণ বেশি হবে জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
রয়টার্স জানায়, অন্তত ৫০টি গ্রামের এক হাজার বিদ্রোহী হামলায় অংশ নেয় বলে সেনা সদস্যদের মনে করছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা তৈরি করে এআরএসএ গ্রুপ, যারা ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
গ্রুপটির নেতা আতা উল্লাহ বলেছেন, শত শত তরুণ রোহিঙ্গা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
মানবাধিকার রক্ষায় সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে ন্যায্য প্রতিরোধ তারা চালিয়ে যাবে বলছে গ্রুপটি।
এআরএসএ এর নামে করা একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করে বলা হয়, “বার্মিজ নির্যাতনকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ২৫টির বেশি জায়গায় আমরা প্রতিরোধ কার্যক্রম চালিয়েছি। শিগগির আরও আসছে।”
বৃহস্পতিবারের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির কাছে হস্তান্তর করেন।
পরে ইয়াংগুনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব না পাওয়ায় এবং নিদারুণ বৈষম্যের কারণ মুসলমান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। তাদের ওপর বলপ্রয়োগের পথ ছেড়ে মিয়ানমার সরকারকে যৌক্তিক সমাধানের পথে আসতে হবে।