নমুনা সংগ্রহে টেকনিয়েসিয়ান ল্যাব অরিন,স্বাস্থ্য সহকারী শিপন,পলাশ কাজ করছে অক্লান্ত ভাবে রাঙ্গামাটিতে নমুনা সংগ্রহকারী কয়েকজন করোনা যোদ্ধার গল্প

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে সারা বিশে^র স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার, নার্স, ল্যাব ট্রেকনোলজিষ্ট, স্বাস্থ্য সহকারী সহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বেশী আতংক বিরাজ করেছিলো। ক্রমান্বয়ে আজ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে সব কিছু। দেশ লড ডাউন শেষে মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের লোকজন তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলাকে প্রায় ৫৪ দিনের মতো করোনা মুক্ত রেখেছিলো। কিন্তু গত ৬ মে রাঙ্গামাটিতে প্রথম বারের মতো করোনা আক্রান্ত হয় ৪ জন। তখন রাঙ্গামাটি জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র অল্প কিছু। দিন যতাই যাচ্ছে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহের কাজও বৃদ্ধি পায়। যারা রাঙ্গামাটির সদরের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়ে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে রোগীদের সহযোগিতা করছেন সেই সকল করোনা যোদ্ধাদের খবর কে রাখে। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে নমুনাাদেও রিপোর্ট চট্টগ্রামে পাঠিয়ে পজেটিভ রোগীদের সনাক্ত করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অনেকেই।
তেমনি কয়েকজন করোনা যোদ্ধা হলেন, টেকনিয়েসিয়ান ল্যাব অরিন চাকমা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী আমিনুর রহমান শিপন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী পলাশ দেওয়ান সহ আরো বেশ কয়েকজন করোনা যোদ্ধা যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাঙ্গামাটি জেলার করোনা রোগীদের খুঁজে বের করে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
যেখানে আমরা সাধারণ মানুষরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের অবহেলা ও বয়কট করার চেষ্টা করছি ঠিক সেখানে এই করোনা যোদ্ধারা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে অসুস্থ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমবার নমুনা সংগ্রহ করে পজেটিভ আসার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার এই করোনা যোদ্ধারা রিপোর্ট সংগ্রহ করছে অনায়াসে। কোন আপত্তি ছাড়া তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই সকল করোনা যোদ্ধারা তাদের পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা না করে রাঙ্গামাটির মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য সহকারী আমিনুর রহমান শিবন বলেন, প্রথম কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভয় পেয়েছি। কারণ টিভিতে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্য সহকারী সহ অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। সেগুলো দেখে আমাদের মনেও ভয় তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, আমার ঘরে শিশু সন্তান ও স্ত্রী ওপরিবারের লোকজন রয়েছে। তার পরও আমরা মনে সাহস নিয়ে রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করে গেছি। প্রথম কয়েকদিন আমি এক ঘরেই ছিলাম। পরিবারের কাউকে কাছে আসতে দেইনি। সকল সাপর্টো নিয়ে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করলেও মনে অনেক ভয় ছিলো। পরিবারের লোকজন যাতে কোন ভাবে এই ভাইরাসের আক্রান্ত না করে তার জন্য মনের মাঝে আতংক কাজ করেছিলো। সৃষ্টি কর্তার অসীম কৃপায় আমরা এখনো মানুষের সেবা দিয়ে গিয়ে সুস্থ আছি।
আবার আমি যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তাহলে তাকে কে দেখবে? এসব চিন্তা করে রাতে ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু যখন চিন্তা করলাম যুদ্ধের ময়দানে নেমে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না, ভয়কে জয় করে যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই তাহলে মানুষের চিকিৎসা করবে কে? আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছে সে দায়িত্ব যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এছাড়া এ আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমার পরিবারের লোকজন সাহস জুগিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা ও তাদের দেয়া সাহস নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজে এগিয়ে গেছি। এখনো সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যারা করোনায় অসুস্থ হচ্ছে তারাও তো আমার মতো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কারো বোন, ভাই, মেয়ে। এ করোনাকালে অনেকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। আমিও আমার অবস্থান থেকে পরম করুণাময়ের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে মানুষের একটু সেবা করে যাচ্ছি। আশা করছি আমরা আগামী দিনে সকলেই সুস্থ ও সুন্দর একটি পৃথিবী দেখতে পাবো।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30