গবেষক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চলে গেলেন না ফেরার দেশে

বাংলা ভাষা সাহিত্যের শিক্ষক, গবেষক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চলে গেলেন না ফেরার দেশে, যাকে ধর্মান্ধতা মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনে সব সময় সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ

আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান জানান, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে তার বাবার মৃত্যু হয়।

বাহাত্তরের কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সদস্য আনিসুজ্জামান আমৃত্যু ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি শিক্ষকতা করেছেন।

৮৩ বছর বয়সী এই অধ্যাপক হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স ডিজিজ এবং প্রোস্টেটের সমস্যা ভুগছিলেন। শেষ দিকে তার রক্তে ইনফেকশনও দেখা দিয়েছিল।

অসুস্থতা বাড়তে থাকায় গত ২৭ এপ্রিল আনিসুজ্জামানকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৯ মে তাকে নেওয়া হয়েছিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার বিকালে তার মৃত্যুর খবরে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অধ্যাপকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বলেন, “ড. আনিসুজ্জামান ছিলেন বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

রাষ্ট্রের দুই সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক পাওয়া আনিসুজ্জামান ২০১৭ সালে তার আশিতম জন্মবার্ষিকীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তিনি শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে তিনি পেয়েছেন ‘প্রাপ্যের অধিক’। তিনি সারাজীবন ছাত্র থাকতে চেয়েছিলেন। জীবনে চলার পথে অপ্রত্যাশিত আঘাত হয়ত পেয়েছেন, কিন্তু ভালোবাসা পেয়েছেন তার চেয়ে ‘অনেক বেশি’।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মরদেহ আপাতত ঢাকা সিএমএইচেই রাখা হয়েছে। তাকে দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

২০১৩ সালের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সমাবেশে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

আলোতবর্তিকা

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের পুরো নাম আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। শিক্ষাজীবনের প্রথমভাগ তার সেখানেই কাটে।

দেশভাগের সময় তিনি কলকাতার এক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এরপর আরও অনেকের মত আনিসুজ্জামানদের পরিবারও চলে আসে এপারে।

ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করা আনিসুজ্জামান কৈশোরেই জড়িয়ে পড়েন রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ভাষার দাবিতে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রথম যে পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল, তা লেখার ভার পড়েছিল তার ওপর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর শেষ করে মাত্র ২২ বছর বয়সে সেখানেই শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আনিসুজ্জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে ১৯৬৫ সালে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি পান। সেখানে তার অভিসন্ধর্ভের বিষয় ছিল ‘উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল’।

পরে ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। গণঅভ্যুত্থানের সেই উত্তাল সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন ।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আনিসুজ্জামান চলে যান ভারতে। সেখানে প্রথমে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন।

১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন আনিসুজ্জামান। সেখানে দেড় যুগ শিক্ষকতা করে ২০০৩ সালে অবসর নেন। দুই বছরের মাথায় আবার তাকে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে বাংলা বিভাগে ফিরিয়ে আনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই শিক্ষক।

দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষকতা, গবেষণা ও মৌলিক সাহিত্য রচনার পাশাপাশি একক ও যৌথভাবে অসংখ্য গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ভাষা ও শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে; সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি পান স্বাধীনতা পুরস্কার। ভারত সরকার ২০১৪ সালে তাকে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে।  ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার জামিলুর রেজা চৌধুরী ও রফিকুল ইসলামের সঙ্গে আনিসুজ্জামানকেও জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031