দেশের মানুষের কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমিয়ে মাটির উপরের পানির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশের মানুষকে সুপেয় পানি দিতে হবে। কিন্তু আমাদের ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সেচের পানি বা ব্যবহারের পানির জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে আমরা যেন ভু-উপরস্থ পানি ব্যবহার করতে পারি, সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিই।”
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে পানি ভবন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ম্যুরাল’ এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নবনির্মিত প্রধান কার্যালয় ‘পর্যটন ভবন’ এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশে যেন পানির সমস্যা না হয়, সেজন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আইন করার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “যে পানির জন্য এক সময় হাহাকার ছিল, সেই হাহাকারটা যেন বন্ধ হয়। পাশাপাশি সারা বাংলাদেশে যত খাল, বিল, হাওড়, পুকুর, নদী যা আছে সবগুলোতে যাতে নাব্যতা থাকে… সেগুলো খনন করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো..।
“তাতে দুটি কাজ হবে। একটা হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে, আবার মৎস্য উৎপাদন বাড়বে। মানুষের চহিদাটাও আমরা পূরণ করতে পারব। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়ে সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”
সেই সঙ্গে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এটা সব সময় বিশ্বাস করি যে গবেষণা ছাড়া কোনো কাজেই উৎকর্ষতা সম্ভব না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখেছিলাম আমাদের গবেষণায় কোনো বিশেষ বরাদ্দই রাখা হত না, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ ছিল না এবং কোনো রকম প্রণোদনা দেওয়া হত না।”
সেই অবস্থা থেকে এখন দেশের প্রতিটি নদীতে ড্রেজিং করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “এরপর বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেনা শাসন জারি হয়। আর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হয়ে যায়, তারা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে যত বেশি দৃষ্টি দেয়, দেশের মানুষের উন্নয়নের দিকে তত দৃষ্টি দেয় না।”
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা যে ফসল লাগিয়ে গিয়েছিলেন, যে গাছ লাগিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ফসলই তারা (হত্যাকারীরা) ভোগ করেছে। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ এগোতে পারেনি। বাংলাদেশের অনেক সমস্যা ছিল, সেগুলো কখনো সমাধান হয়নি।”
অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আর পানি ভবন মিলনায়তন প্রান্ত থেকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হকসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।