আজ গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন
॥ লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, খাগড়াছড়ি ॥ জেলার নবগঠিত গুইমারা উপজেলায় আজ সোমবার প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চললেও ভোটের দিন ঘনিয়ে আসতেই প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে নানা শঙ্কা বাসা বেধেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সরকার দলীয় আওয়ামীলীগসহ বিএনপি ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বগ্রহণের পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হওয়ায় কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চায় জনগণ।
আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে বহিরাগতদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, ভয়ভীতি প্রর্দশনের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো: নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রার্থীরা।
তবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম কাউছার হোসেন। ভোটাররা যাতে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন সেজন্য ১১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩ প্লাটুন বিজিবি ও ২ প্লাটুন র্যাব এবং পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। এছাড়া নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরাসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পৌঁছে গেছেন।
প্রসঙ্গত, গুইমারা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৭হাজার ৯শত ৯২জন। নারী ভোটার ১৩হাজার ৬শ ২৫জন, পুরুষ ভোটার ১৪হাজার ৩শ ৬৭জন। ভোট কেন্দ্র ১৪টি ও বুথ সংখ্যা ৯৮টি। চেয়ারম্যান পদে ৩জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক এক মত বিনিময় সভায় আনানো হয়েছে বাংলাদেশে বছর প্রতি প্রতি লাখে নতুন ভাবে ২২৭ জন যক্ষায় আক্রান্ত হচ্ছেন । এর মধ্যে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে ৫১ জনের । কফে জীবানুযুক্ত নতুন রোগীর মধ্যে চিকিৎসার মাধ্যমে শতকরা ৯৪ ভাগ রোগী আরোগ্য লাভ করছে।
রবিবার বিকালে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি নাটাব আয়োজিত যক্ষা রোগ নিয়ন্ত্রনে সাংস্কৃকি কমৃীদের ভূমিকা শীর্ষক এই মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালুকদার। প্রবীন সাংবাদিক ও দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকার সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদের সভাপেিতত্ব অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নাটাবের রাঙ্গামাটি জেলার সম্পাদক হাজী মোঃ শাহজাহান মজুমদার, রাঙ্গামাটি শিশু নিকেতনের অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তফা কামাল , ব্র্যাকের জেলা স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী এম এ জামান এবং স্বাস্থ্য বিভাগের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মোঃ মোসলেম উদ্দিন।
মত বিনিময় সভায় জানানো হয় যক্ষা একটি বাহু বাহিত সংক্রামক রোগ হলেও এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার আওতায় এনে পূর্ণমাত্রায় চিকিৎসা প্রদান করা গেলে রোগীর সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। সরকার এই রোগ নিরুপন এবং চিকিৎসার সকল খরচ বিনামূল্যে প্রদান করছেন। ফুসফুসে আক্রান্ত যক্ষা রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনা না গেলে তার মাধ্যমে অন্যান্য সুস্থ্য রোগীরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
রাঙ্গামাটির সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের বিভিন্ন শাখর ৩০ জন শিল্পী ও সংগঠক মত বিনিময় সভায় অংশ নেন।
॥রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ বান্দরবানের বাঘমারা পাড়া বৌদ্ধ বিহার উৎসর্গ করা হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় পার্বত্য চট্্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মন্দির উৎসর্গ অনুষ্টানে যোগ দেন। এসময় প্রতিমন্ত্রীর সাথে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্নিবাণ চাকমা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ম্রাচা খেয়াং, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল আজিজ, সহকারী প্রকৌশলী মো:নুর হোসেন, বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকউল্লাহ, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পাইহ্লাঅং মার্মা, কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানুপ্রু মার্মা, বাঘমারা পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ ও পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের সাবেক সভাপতি উ সমা মহাথের সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এসময় প্রতিমন্ত্রী ফিতা কেটে ২ হাজার ১১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত বৌদ্ধ বিহারের উৎসর্গ করেন। পরে বিহার উৎসর্গ উপলক্ষে এক ধর্মদেশনা ও সভায় যোগদেন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম অনুসারে পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে আজ পার্বত্য এলাকার সর্বত্র উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মন্দির, মসজিদ, বিহার,গীর্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ক্ষেত্রে আজ পার্বত্য এলাকা সবদিকে এগিয়ে। আগামীতে সকলের সহযোগিতায় পার্বত্য এলাকার এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। এসময় অনুষ্টানে প্রতিমন্ত্রী বাঘমারা পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ বান্দরবানে সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে বিএনপি’র ১০নেতা তাদের নিজ নাম প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে। শনিবার বিকালে বান্দরবান জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করে।
এসময় নেতারা বলেন, গত ১লা মার্চ তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলরদের মতামতকে উপেক্ষা করে বান্দরবান জেলা বিএনপি’র আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অগণতান্ত্রিক ভাবে তৃণমূল নেতাদের মতামতকে উপেক্ষা করে দলে কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্যই আমরা সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটি থেকে নিজ নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ, লামা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আমির হোসেন আমু, জেলা বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক মুজিবুর রশিদ, প্রথম আলোর প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, এটিএন বাংলার প্রতিনিধি মিনারুল হকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে নেতারা বিএনপি’র মহাসচিব এর মাধ্যমে চেয়ারপার্সন বরাবরে লিখিত আবেদন প্রেরণ করে।
॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির রাবার বাগানস্থ ‘সাহারা এগ্রো ফার্মের’ লীজ নেওয়া ও ক্রয়কৃত ১’শ ৮৭ একর ভূমির সৃজিত বাগানের কিছু অংশে অর্ধশতাধিক মূল্যবান গাছ কেটে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ ভূমি বিক্রেতাসহ দুর্বৃত্তদের দায়ী করে মানিকছড়ি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে, সাহারা এগ্রো ফার্মস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলার ২১৪ নং ডলু মৌজাস্থ সাবেক ‘রাবার বাগানের লীজ ২০০৭ সালে সরকার কর্তৃক বাতিল হয়। পরে বাতিল লীজের ১২৫একর টিলা ভূমি নতুন করে লীজ পেতে সরকার নিকট আবেদন করেন সাহারা এগ্রো ফার্মের মালিক পক্ষ।
তাঁদের আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোহাম্মদ মহি উদ্দীন ভূইঁয়া,পিতা- ফজলুল করিম ভূইঁয়া, ৫১ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, মো. রশীদ আলী, পিতা- মুফতী সৈয়দ আলী, ৩৫ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, এস.এম. গোলাম মোস্তফা, পিতা- আবদুর রশিদ, ৩৬ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, আবদুল মন্নান, পিতা-বজলুর রহমান, ৩৮ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর এবং আবদুস ছালাম মজুমদার, পিতা-আবদুল কাদের মজুমদার, ৫২ নং হোল্ডিং ২৫ একরসহ মোট ১২৫ একর ভূমি লীজ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে আবেদন করেন। যাহা বর্তমানে লীজের প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া উক্ত ভূমির পার্শ্বে খাস ও রেকর্ডীয় ৬২ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি’র মাধ্যমে আঞ্চলিক দলিল মূলে ক্রয় করে মোট ১৮৭ একর ভূমিতে ঘেরা(কাটা তারের বেড়া) দিয়ে তাতে যথারীতি বাগ-বাগান সৃজন, মাছের লেক খনন ও গবাদি পশুপালন শুরু করেছেন বাগান মালিক পক্ষ।
অপরদিকে গত ১ মার্চ জনৈক মো. এয়াকুব আলী লোকজন (লেবার) নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সাহারা এগ্রো ফার্মের(ঘেরা দেওয়া)ভূমিতে জোরপূর্বক ঢুকে অর্ধশতাধিক মূল্যবান গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্ঠি হয়। পরে বাগান সহকারী ম্যানাজার মো. মোস্তফা বাদী হয়ে মানিকছড়ি থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০/১২ জন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে সারাহা এগ্রো ফার্মের ম্যানাজার মো. জাবেদ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক রাবার বাগানের লীজকৃত ভূমি সরকার কর্তৃক বাতিল হওয়ার পর সাহার এগ্রো ফার্মের মালিক পক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম(মধ্যস্থতাকারী) এর মাধ্যমে সকল ভূমি লীজ ও ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ নিয়ে ওই সাবেক জনপ্রতিনিধি’র সাথে মালিক পক্ষের একটি চুক্তিনামা হয়েছে।
চুক্তিনামা অনুযায়ী মধ্যস্থতাকারী এখনো ভূমির সকল রেকর্ডপত্র মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে না দেয়ায় কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। তবে চুক্তিনামার শর্ত লংঘন হয়নি। কিন্তু মধ্যস্থতাকারীর নিকট ভূমি বিক্রেতারা টাকা পাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে অবৈধভাবে বিক্রিত ভূমিতে প্রবেশ এবং প্রভাবখাটিয়ে মূল্যবান গাছ-গাছালি কেটে নেয়া সর্ম্পণ বেআইনি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শামিল।
এ বিয়য়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. এয়াকুব আলী গাছ কাটার ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছেন, এটি আমার স্ত্রী সালমা আক্তারের নামে রেকর্ডীয় ৪ একর টিলা ভূমি রয়েছে। আমি উক্ত ভূমিতে আমার হাতে সৃজিত গাছ বিক্রির জন্য আমি একটি জোত পারমিট অনুমোদন করেছি। যার কারণে আমি লোকজন নিয়ে গাছ কেটেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম (মধ্যস্থতাকারী) জানান, সাহারা এগ্রো ফার্ম কর্তৃপক্ষের নিটক এখনো ভূমির অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। ফলে লোকজন (বিক্রেতারা) বকেয়া টাকার জন্য ঝামেলা সৃষ্ঠি করছে। মালিকপক্ষকে বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য বার বার বলছি, কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে মানিকছড়ি থানার এস.আই মো. হেলাল উদ্দীন ঘটনার সত্যতা স্বীকার বলেছেন, এভাবে বৃক্ষ নিধন করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্ঠা চলছে।
॥ লংগদু প্রতিনিধি ॥ উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা স্থিতিশীল বজায় রাখা। কেননা আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদা বাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন লংগদু উপজেলার সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল আব্দুল আলীম চৌধুরী।
শনিবার (৪ মার্চ) লংগদু সেনা জোনের উদ্যোগে জোনের চিত্ত বিনোদন কক্ষে উপজেলার হেডম্যান ও কার্বারীদেরে নিয়ে আয়োজিত এক সন্মেলনে জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল আব্দুল আলীম চৌধুরী এআহবান জানান।
সম্মেলন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ রফিকুল ইসলাম পিএসসি। সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও স্বাগত বক্তব্যে জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল আব্দুল আলীম চৌধুরী আরো বলেন, যেহেতু আমরা এই এলাকায় থাকি তাই, এলাকার মানুষের সুখ, দুঃখ ও উন্নয়নের সাথে আমাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের এই সম্মেলন একটি যুগপোযোগী বলে মনে করি। এলাকায় যে কোন পরিস্থিতি দেখা দিলে তখন নিজেরাই আলাপের মাধ্যমে তা সমাধানের ব্যবস্থা করা যাবে।
তিনি বলেন, লংগদুতে আইন শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। তার জন্য আমি খুবই খুশি। এটা কেবল সম্ভব হয়েছে আপনাদের সহযোগিতার জন্য। আশাকরি আগামীতেও আপনারা এভাবে জোনকে সহযোগিতা দিয়ে যাবেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোমিনুল ইসলাম, উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোনাই মৌজার হেডম্যান প্রেম লাল চাকমা, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও হেডম্যান মোঃ এখলাস মিঞা খান।
এছাড়া লংগদু ইউপি চেয়ারম্যান ও হেডম্যান কুলিন মিত্র চাকমা আদু, উপজেলার কার্বারী সমিতির সভাপতি সুরুজ চান চাকমা, কার্বারী মোঃ আব্দুস সাত্তার বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে উপজেলার সকল হেডম্যান, কার্বারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ নানা শংকা ও পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির নবগঠিত গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন। ফলে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ সরগরম হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে উত্তেজনাও। তা সত্বেও নির্বাচনে বিজয়ের স্বাদ পেতে সব প্রার্থীই মরিয়া।ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা ছুটছেন প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে। চাচ্ছে ভোট আর দোয়া।শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রার্থীদের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে।প্রচারনার শেষ মূহুর্তে গণসংযোগ,শ্লোগান আর মাইকিং-এ মুখরিত শহরতলী থেকে গ্রামাঞ্চল। নির্বচনে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আঞ্চলিকর রাজনৈতিক দলের একজন প্রার্থী। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বিএনপির জয়ে আশাবাদী হলেও আওয়ামীলীগ ও আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীরা পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ নিয়ে মাঠ গরম করছেন। পক্ষান্তরে ভোটাররা চান নতুন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ,সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
নবগঠিত গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সরকারী দল আওয়ামী লীগ প্রার্থ মেমং মারমা ও দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ ইউছুফের পাশাপাশি সমানতালে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-(ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী উশেপ্রু মারমা।এছাড়া বিএনপি মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পূর্ন কান্তি ত্রিপুরা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হলাউচিং মারমা, আওয়ামীলীগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: নুরুন্নবী .মহিল ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা ত্রিপুরা, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মিল্টন চাকমা ও থোয়াইঅংগ্য চৌধুরী ।
গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামীলীগ তাদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে বিবেচনা করছে। এই কারণে উভয় দলের নেতারা কোমর বেধে মাঠে নেমেছে। প্রার্থীদের নিয়ে ঘুরছে ভোটারদের ঘরে ঘরে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বসে নেই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-(ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী উশেপ্রু মারমাও।তবে সব প্রার্থীই নিজেদের বিজয়ে আশাবাদী হলেও ভোটাররা বলছে তারা সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে নিতে নতুন নির্বাচন কমিশনের একটি অবাধ,সুষ্ঠ ও নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রত্যাশা করছেন।
গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের মেমং মারমা ও মো. ইউসুফ –এর মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকলেও রাজনীতির মাঠে তারা দুজনই ক্লিন ইমেজের অধিকারী। ভোটার মহলের কাছে রয়েছে দুজনেরই পরিচিতি। দলে দুজনেরই গ্রহণযোগ্য সমানে সমান। জনসম্পৃত্ততা আর ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তৎপর দুই প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয়ে আশাবাদী হলেও আওয়ামীলীগ ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীরা পরস্পর বিরোধী অভিযোগ মাঠ গরম করে তুলছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীরা ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। দার্জিলিং পাড়ায় গণসংযোগ করার সময় কথা হয় বিএনপির মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: ইউসুফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোটারদের কাছ থেকে সারা পাচ্ছি যদি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হলে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা শতভাগ তবে শঙ্কায় আছেন আধো সুষ্ঠ ভোট হবে কিনা।
একই দিন গুইমারা বাজার এলাকায় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করার সময় কথা হয় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান মেমং মারমার সাথে। তিনি বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। এবারেও তাকে জনগন জয়ী করবেন। তিনি অভিযোগ করেন কিছু এলাকায় একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করে তাঁর কর্মীদের গণসংযোগে বাধা প্রদান করেছে ও পোষ্টার ছিড়ে ফেলে দিয়েছে। তবে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে জনগণ প্রতিহত করবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী উশেপ্রু মারমা বলেন, তিনি কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নয় জনগনের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি সতন্ত্র হিসেবে লড়াই করছেন। অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও পোষ্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ প্রত্যাখান করে উশেপ্রু মারমা বলেন, তাঁর জনগনের সমর্থন বেশি থাকার কারনে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এখন তিনি শঙ্কায় আছেন সুষ্ঠ ভোট হবে কিনা।
গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটি এম কাউছার হোসেন বলেন, নবগঠিত ইসির নির্দ্দেশনা অনুযায়ি নির্বাচনকে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত করতে প্রশাসনও প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে র্যাব ও বিজিবি মোতায়েনের জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি আইন-শৃঙ্খলা সেল গঠন করা হয়েছে। কেউ যদি আচারণ বিধি লংঘন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৬জুন অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পূনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১০৯ তম সভায় নতুন উপজেলা হিসেবে গুইমারা অনুমোদন দেয়া হয়।
গুইমারা উপজেলার আয়তন ১শ ১৫ বর্গ কিলোমিটার। ভোটার সংখ্যা ভোটার সংখ্যা ২৭৩৮১ জন।
খাগড়াছড়িতে জাতীয় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নানা ভাবে আলোচিত। গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও কাজ করে নানামুখী সমীকরণ। তাই নির্বাচনে কোন দলের রাজনৈতিক সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন,তা অপেক্ষা করতে হবে শেষ দিন পর্যন্ত।
বিচার বহির্ভূত হত্যাই বাংলাদেশে বড় সমস্যা: যুক্তরাষ্ট্র
২০১৬ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, অসাম্প্রদায়িক, বহু মতের সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বেসামরিক প্রশাসনের ‘কার্যকর নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে।
এরপর জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনার পরপরই বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।
এছাড়া অবৈধভাবে আটক, সরকারি বাহিনীর হাতে গুম, জঙ্গিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, বাল্য বিয়ে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা,শ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগজনক বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।
জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরব হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দুদিন আগেই বলেছিলেন, দেশে কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে না।
এই ধরনের কোনো অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ খুবই সীমিত। বন্দুকযুদ্ধের মতো ঘটনাগুলোকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দেখছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো
এসব ঘটনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীকে দায় মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ।
“নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ সীমিত।”
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থাহীনতার কারণে জনগণ অনেক সময়েই তাদের শরণাপন্ন হয় না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে ‘ভিকটিমদের’ দায়ী করে সরকারের বক্তব্যের সমালোচনাও করা হয়েছে, যা প্রকারান্তরে নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়মুক্ত করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দুর্বলতা এবং বিচার ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে আটকের বিষয়টিও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া অনলাইনে মত প্রকাশ এবং এনজিওগুলার কাজে নিয়ন্ত্রণ আরোপকেও দেখানো হয়েছে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে।
তিনি শনিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, “যদি এদেশে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হয়, সে দেশে আমার মনে হয়, কোনো দলের নিবন্ধন সেদিন থাকবে না,” বলেছেন তিনি।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন বিএনপি নেতা।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া ও বাতিলের এখতিয়ার সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের। নিবন্ধন না থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় থাকা গেলেও ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।
আ্ইন অনুযায়ী, পরপর দুটি নির্বাচন বর্জন করলে তার নিবন্ধন বাতিল হবে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলেছে বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা এখনও তাদের রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই আমরা ইনশাল্লাহ নির্বাচন করব, সেখানে নিবন্ধন বাতিলের প্রশ্ন উঠবে না।
“সেই পরিস্থিতিতে দিকে যদি সরকার এদেশকে ঠেলে দেন, তা হলে তার জন্য এই সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে, শেখ হাসিনা দায়ী থাকবেন। আপনি ব্যক্তি স্বার্থে, ব্যক্তি লোভে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেন, তার জন্য আপনাকে দায়ী থাকতে হবে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত দল। যদি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, যে কোনো সময়ে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মোশাররফ।
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর তথ্য-উপাত্ত-যুক্তি নেই। ওই সব মামলার সবটাই বানোয়াট ও মিথ্যা, কোনোটাই প্রমাণ করতে পারবে না সরকার। তারা এই মামলা দিয়ে দেশনেত্রী উপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমাদেরকে দুর্বল করতে চায়।”
মামলায় শাস্তি দিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছে দাবি করে মোশাররফ বলেন, “আপনারা এই চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। সহজ পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন।
“অন্যথায় জনগণের যে রোষ ও জনগণের যে ক্ষোভ, তা বেশিদিন ঘরের ভেতরে অবস্থান করবে না। অতি শিগগিরই গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বিচার বিভাগের দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গটিও আনেন সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ।
“দুর্বল বিচার বিভাগকে আজকে এই সরকার জুজুর ভয় হিসেবে জনগণের সামনে দাঁড় করিয়েছে। বিচারালয়ে নাটক হচ্ছে। দেশনেত্রীকে বিশেষ আদালতে নিয়ে সারাদিন বসিয়ে রাখা হচ্ছে, মানসিকভাবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সভাপতি সৈয়দ মো. ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুর রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে বিএনপি’
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হলে তার দলও তাতে অংশ নেবে।
“নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে, সেই রকম নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিশ্চয়ই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, “আপনি বলেছেন, বিএনপি যদি না আসে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। আরে রেজিষ্ট্রেশন কী? আপনারা যখন ’৭৯ সালে, ’৮৬ সালে নির্বাচনে গিয়েছিলেন, কোন রেজিস্ট্রেশনের উপরে নির্বাচনে গিয়েছিলেন? একটি রাজনৈতিক প্রতি জনগণের ইচ্ছা-অনিইচ্ছাটাই বড় রেজিস্ট্রেশন।
“মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা একটা বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই রেজিস্ট্রেশন প্রথা চালু করেছিল। কারণ তাদের কাছে তাদের প্রভুরা যেভাবে বলেছেন, বিএনপিকে এমনভাবে বাঁধ তারা যাতে তাদের পাতানো নির্বাচনে, প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে থাকে। আর আজীবন ক্ষমতার রাজ সিংহাসনে শেখ হাসিনা রাজত্ব করবে।”
“এই দেশটি ছোট হলেও সাড়ে ১৬ কোটি মানুষকে আপনি রেজিস্ট্রেশনের ফিতায় বাঁধবেন- সেই সুখ স্বপ্ন কোনোদিন আপনাদের পূরণ হবে না,” কাদেরের উদ্দেশে বলেন রিজভী।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ‘লিডারশিপ ওয়ার্কশপ’ এই অনুষ্ঠানে বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান বক্তব্য রাখেন।
ছাত্র রাজনীতির প্রতি আস্থাহীনতা শুভ নয়: রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে তিনি বলেছেন, “ডাকসু ইলেকশন ইজ মাস্ট, তা না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাবে।”
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একথা বলেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁক বদলের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় রাজনীতিকদের মধ্যে খেদ রয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নাম লেখানো আবদুল হামিদ তার সময়কার এবং বর্তমানের তুলনা করে হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সময়ের রাজনীতি আর আজকের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে তফাৎ অনেক বেশি। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ-জাতির কল্যাণ। দেশের মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোনো স্থান ছিল না।
“ছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত, নেতৃত্ব দিত। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোনো জায়গা ছিল না। সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সম্মানের চোখে দেখত।”
এখনকার অবস্থা তুলে ধরে করে আবদুল হামিদ বলেন, “ছাত্র রাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখে মনে হয় এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। “ফলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের, এমনকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা, সমর্থন ও সম্মান হ্রাস পাচ্ছে।”
“এটি একটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে সঠিকপথে পরিচালিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে,” বলেন রাষ্ট্রপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতির সূতিকাগার অভিহিত করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদের জন্ম দিয়েছে। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এখনও পথ প্রদর্শক হিসেবে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। তাই গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই। আদর্শভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ছাত্র রাজনীতির নিরবচ্ছিন্ন চলার পথ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রসমাজকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে আব্দুল হামিদ বলেন, “যে কোনো অন্যায়, অবিচার ও অপশাসনের প্রতিবাদে এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় এ দেশের ছাত্রসমাজ বারবার এগিয়ে এসেছে। এজন্য অনেক নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। জেল-জুলুম ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তারুণ্যের জোয়ার কখনো থেমে থাকেনি এবং ভবিষ্যতেও থেমে থাকবে না।” সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও পঁচাত্তরের হত্যাযজ্ঞের ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই, প্রগতি ও প্রতিক্রিয়া, শুভ ও অশুভ এবং ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতার লড়াই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শেষ হয়ে যায়নি। আজকের লড়াইয়ে শুভশক্তি জয়ী না হলে রাষ্ট্র হিসেবে, জাতি হিসেবে আমরা আবার পিছিয়ে যাব। মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চাকা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণাকেন্দ্র খোলার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।
এবারের সমাবর্তনে মোট ১৭ হাজার ৮৭৫ জন স্নাতক অংশ নিচ্ছেন। এরমধ্যে ৮০ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে ৯৪টি স্বর্ণপদক এবং ৬১ জনকে পিএইচডি ও ৪৩ জনকে এমফিল সনদ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য অধ্যাপক অমিত চাকমা। তাকে দেওয়া হয় সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদ বক্তব্য দেন।