ঢাকা অফিস :: বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাক জনগণের সঙ্গে নতুন তামাশা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (১৪ মে) দুপুরে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের রাজধানীর বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, যারা নিজ দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য দেখার মত একটা মিছিল পর্যন্ত করেতে পারেনি, তাদের মুখে সরকার পতনের আন্দোলনের কথা মানায় না ৷
বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগে নিজ দলে ঐক্য ফিরেয়ে আনুন। আজকে শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার কারণে বিরোধী দলের এগিয়ে যাওয়ার পথে সংকটের কালো ছায়া পড়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থতার দায়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপ দিয়ে ভাসতে ভাসতে এখন শ্রীলঙ্কা দ্বীপে পৌঁছেছে ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন অর্জনে বিশ্বের বিস্ময় উল্লেখ করে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রতিটি সংকট ও দুর্যোগে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা সফলতা অর্জন করেছেন।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যে প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ ঋণগ্রস্ত নয়, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকেও ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ খুশি থাকলে মির্জা ফখরুলদের মন খারাপ হয়ে যায়।
আওয়ামীলীগ থেকে দূষিত রক্ত বের করে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের দলের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ভালো লোকদের দলে টানুন আর খারাপদের দল থেকে বের করে দিন।
আওয়ামীলীগ করে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন যারা, তাদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দিন, সম্প্রতি ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে কেউ অপকর্ম করলে রেহাই পায় না, শাস্তি পেতে হয়, বিএনপির আমলে এমন একটাও নজির নেই, যে তারা শাস্তি দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক নোমানি ময়দানে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
॥ কাপ্তাই প্রতিনিধি ॥ কাপ্তাইয়ের ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর ১নং ওয়ার্ডের দূর্গম সীতাপাহাড় মারমা পাড়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় স্থানীয় দোকানদার থোয়াই চাই মারমা (৫৩) ও তাঁর সহধর্মিণী চিংঞো মারমা (৪০) গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান, আহত দম্পতির ছেলে সুইহ্লা চিং মারমা। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৬ জনের একটি সন্ত্রাসী দল অস্ত্র এবং লাঠি নিয়ে এসে আমাদের দোকানে বাবা এবং মা’কে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে চলে যান। সন্ত্রাসীরা সকলে সবুজ পোশাক পরিহিত ছিল বলে জানান সুইহ্লা চিং মারমা।
পরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আহত দুই জনকে রাত ৯টায় চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাজীব শর্মা জানান, গুরুতর আহত থোয়াই চাই মারমার বুকের পাজরের হাড় ভাঙ্গছে এবং বাম হাতে ক্ষত রয়েছে। এছাড়া তাঁর সহধর্মিণী কোমরে আঘাত পেয়েছে।
রাইখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সেলিম জানান, আমাকে ঘটনাটি তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। তবে কারা মেরেছে সেই বিষয়ে অবগত নই।
চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, ঘটনা শুনার পর চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে পুলিশ গিয়েছে। এই বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেন নাই। অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওসি জানান।
মঙ্গলবারের ওই ধ্বংসযজ্ঞের পর বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি চার সন্তান হারানো এক পরিবারসহ প্রিয়জন হারানো অনেক পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের সান্ত্বনা ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
“আপনারা একা নন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব সব করবো আমরা,” শোকগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন তিনি।
বুধবার রাতে কোয়াজুলু-নাটালের কোঅপারেটিভ গভর্নেন্স বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, মৃতের সংখ্যা ৩০৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ফের সচল হয়েছে এবং আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে রামাফোসা বলেছেন, “আমাদের দেখা অন্যতম বড় দুর্যোগের মোকাবেলা করছেন আপনারা। এতদিন আমরা ভাবতাম, এসব ঘটনা মোজাম্বিক বা জিম্বাবুয়ের মতো অন্য দেশগুলেোতেই শুধু ঘটে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরের প্রতিবেশী মোজাম্বিক গত দশকে একের পর এক প্রলয়ঙ্করী বন্যার শিকার হয়েছে। গত মাসেও দেশটিতে বন্যা, ভূমিধসে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যায় সন্তান হরানো মেরি সোকেলা রয়টার্সকে জানান, সোমবার রাতে যখন তাদের এলাকাটি ডুবে যায় তখন ছাদে বজ্রপাতের মতো প্রবল শব্দ শুনতে পান তিনি, এরপরই তার বাড়ির দেয়ালগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
“আমার প্রতিবেশীরা আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে, এতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। দুই ঘণ্টা পর আমি বাঁচলেও আমার সন্তানটি মারা যায়,” বলেন তিনি।
রামাফোসার জলবায়ু কমিশনের একজন কমিশনার এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রাইটসের প্রধান মেলিসা ফৌরি রয়টার্সকে বলেন, “এগুলোর কোনোটাই আশ্চর্যজনক না, কিন্তু পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক। কতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ভাবতে পারেন? রাস্তা, বন্দর…ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
“দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা নিয়ে আলাপ করছি যেন এটা ইচ্ছিক। আমাদের অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে আর যে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছি তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার মণ্ড ও কাগজ প্রস্তুতকারক সাপ্পি বুধবার জানিয়েছে, বন্যার কারণে তাদের কর্মীরা কাজে আসতে পারছে না, মালামাল সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটেছে, এতে তিনটি কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার ডারবান বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ধীরে ধীরে কার্যক্রম আবার শুরু করা হয়েছে বলে দেশটির সরকারি উদ্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঢাকায় এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপন ও দুই যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানে দৈনিক ইত্তেফাক রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি, পার্বত্য অঞ্চলের সর্বপ্রথম সংবাদপত্র বনভূমি ও দৈনিক গিরিদর্পন সম্পাদক, ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব একেএম মকছুদ আহমেদকে শান্তি সম্মাননা ক্রেষ্ট ও সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন (এসিএমবিএফ) দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে শনিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ঢাকায় শিশু কল্যাণ পরিষদ হল রুমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপন ও ২যুগ পূর্তিতে আনন্দবন্ধন, শান্তির মুকুটমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক আলোচনা সভা ও মানবাধিকার কর্মীদের শপথ গ্রহন, দুর্যোগ করোনা প্রতিরোধে বিশেষ অবদানে শান্তি পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
মুজিববর্ষ উদযাপন কমিটির সাংগঠনিক আহবায়ক ও এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা উদ্বোধন করেন, এসিএমবিএফ’র প্রকল্প পরিচালক ও ইত্তেফাকের সংবাদদাতা মো. শাহ্ জামাল।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন-বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ভাষা সৈনিক হাজেরা নজরুল, ভাষাসৈনিক মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এর সভাপতি ডা, মোমতাজ উদ্দিন আহাম্মদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল হক, আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের সভাপতি- মুহাম্মদ শাহ সুলতান আতিক, বাংলাদেশ জাতীয় সূন্নী ওলামাশায়েখ পরিষদ এর সভাপতি হাকীম আনছার আহমেদ সিদ্দীকী, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন, সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুজিব বর্ষে বাংলাদেশ যা পেয়েছে ইতিপূর্বে একশত বছরেও এদেশে তা হয়নি। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছে, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ নতুন নতুন অসংখ্য সেতু, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অসংখ্য স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিও ভূক্ত করা হয়েছে যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনে আন্তর্জাতিক মহলে মানবতার ঝড় উঠেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে বিনিময়ে বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী মায়ানমার-এর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় মাদার অব হিউম্যানিটি অর্জন করেছেন। যা বিশ্ববাসী কখনো ভুলবে না। বক্তারা সকলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানবতার কল্যাণে সমাজের অধিকার বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপন ও দুই যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানে আরো ১০জনকে শান্তি সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
এদের মধ্যে ইত্তেফাকের জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলা সংবাদদাতা-লেখক-মানবাধিকার কর্মী শাহ্ জামাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সংবাদদাতা অনুজ কান্তি দাশ, ভাষা সৈনিক হাজেরা নজরুল, ভাষা সৈনিক মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এর সভাপতি ডা, মোমতাজ উদ্দিন আহাম্মদ, আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের সভাপতি- মুহাম্মদ শাহ সুলতান আতিক, বাংলাদেশ জাতীয় সূন্নী ওলামাশায়েখ পরিষদ এর সভাপতি হাকীম আনছার আহমেদ সিদ্দীকী, সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম (বাংলাদেশ প্রতিদিন), ছামিউল ইসলাম (দৈনিক সংবাদ) প্রমুখ।
মেলান্দহ (জামালপুর) সংবাদদাতা ॥ দৈনিক ইত্তেফাকের পার্বত্য চট্রগ্রামের রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি, পার্বত্য এলাকার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক গিরিদর্পনের সম্পাদক, ভাষাসৈনিক একেএম মকছুদ আহমেদ, ইত্তেফাকের জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলা সংবাদদাতা-লেখক-মানবাধিকার কর্মী শাহ্ জামাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সংবাদদাতা অনুজ কান্তি দাশসহ আরো ১০জনকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে।
অন্যান্য সংবর্ধিতরা হলেন-ভাষাসৈনিক হাজেরা নজরুল, ভাষাসৈনিক মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এর সভাপতি ডা, মোমতাজ উদ্দিন আহাম্মদ, আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের সভাপতি- মুহাম্মদ শাহ সুলতান আতিক, বাংলাদেশ জাতীয় সূন্নী ওলামাশায়েখ পরিষদ এর সভাপতি হাকীম আনছার আহমেদ সিদ্দীকী, সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম (বাংলাদেশ প্রতিদিন), ছামিউল ইসলাম (দৈনিক সংবাদ) প্রমুখ।
এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন (এসিএমবিএফ) দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে ৯ অক্টোবর সকাল ৯টায় শিশু কল্যাণ পরিষদ হল রুমে আলোচনা সভায় এই সংবর্ধন প্রদান করা হয়। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া এতে সভাপতিত্ব করেন। এসিএমবিএফ’র প্রকল্প পরিচালক ও ইত্তেফাকের সংবাদদাতা মো. শাহ্ জামাল এই সভার শুভ উদ্ধোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন-ভাষা সৈনিক একেএম মকছুদ আহমেদ। প্রধান আলোচক ছিলেন-বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-ভাষাসৈনিক হাজেরা নজরুল, ভাষাসৈনিক মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এর সভাপতি ডা, মোমতাজ উদ্দিন আহাম্মদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল হক, আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের সভাপতি- মুহাম্মদ শাহ সুলতান আতিক, বাংলাদেশ জাতীয় সূন্নী ওলামাশায়েখ পরিষদ এর সভাপতি হাকীম আনছার আহমেদ সিদ্দীকী, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন, সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মানুষ। রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নে নাকি জিয়াউর রহমানকে প্রথম কবর দেওয়া হয়েছিল।
সেখানেও জিয়াউর রহমানকে কবর দিতে কেউ দেখেনি, একটা বাক্স দেখেছিল।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ১৫ ও ২১ আগস্ট নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেদিনকার প্রত্যক্ষদর্শী বর্তমানে সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন। তিনিও আমাকে জানিয়েছেন- আমরা জিয়াকে দেখি নাই। সেই সময়ের আরও অনেকেই জীবিত আছে, তথাকথিত প্রথম কবরেও আসলে জিয়াউর রহমানের লাশটা কেউ দেখে নাই। এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, বিচারপতি সাত্তারও দেখে নাই। জ্বিন কিংবা ভূতে দেখেছে কি-না আমি জানি না।
তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একটি সত্য কথা বলেছেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে আসলে জিয়াউর রহমানের কোন লাশ নাই। সেটি যখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটা বক্তব্য দিয়েছেন, অবশ্য সেটা না দিলে তার মহাসচিব পদ থাকে কি-না সেটাও একটা ব্যাপার আছে।
বিএনপিকে অসত্য এবং মিথ্যাচারের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অসত্যের ওপর বিএনপির রাজনীতিটা দাঁড়িয়ে আছে। মিথ্যা আর অসত্যের ওপর রাজনীতি করে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না, এটিই হচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা। তাহলে হয়তো বিএনপির আজকের যে অবস্থা সেটা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী তপুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, দেবাশীষ পালিত, জসিম উদ্দিন শাহ, শাহজাহান সিকদার, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইদ্রিছ আজগর, গিয়াস উদ্দিন, ইফতেখার হোসেন বাবুল, আকতার হোসেন খাঁন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, বিএনপির নেতারা ক্রমাগতভাবে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করে আসছে। তারা একজন খলনায়ককে নায়ক বানানোর অপচেষ্টা চালান। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের তথাকথিত কবরে যান তারা, কোন সময় কারও বিয়ে ও কর্ণছেদন অনুষ্ঠান উপলক্ষেও তারা জিয়াউর রহমানের কবরে যান- সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। সেখানে গিয়ে আবার তারা মারামারি করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার অনেক অপচেষ্টা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে ইতিহাসের পাতা থেকে নির্বাসিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। রেডিও টেলিভিশন রাষ্ট্রীয় প্রচার যন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসিত করা হয়েছে। স্বাধীনতার খলনায়ক পাকিস্তানীদের দোসর জিয়াউর রহমানকে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রাজনীতির পাশাপাশি লেখাপড়া সঠিকভাবে চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা লেখাপড়াকে গুরুত্ব দেন। রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত, দেশ এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য, সেটি মাথায় রাখতে হবে। যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে সবসময় প্রস্তুত থাকবে। রাজনীতি করতে গিয়ে যাতে পড়াশোনার ক্ষতি না হয়।
যেসব পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না, সেগুলো বন্ধের জন্য সরকারের তরফ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এসব পত্রিকার ডিক্লারেশন রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এগুলো ভুতুড়ে পত্রিকা। এখানে নিয়োগকৃতদের বেতন দেওয়া হয় না, এরা চাঁদাবাজিসহ নানা কিছুতে লিপ্ত হয় এবং সেই বদনামটা সাংবাদিক সমাজের ওপর বর্তায়, যা কখনোই সমীচীন নয়। এজন্য আমরা ভুতুড়ে পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।”
শোকের মাস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘সাংবাদিকতায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তবেই অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যে সমস্ত অনলাইন পোর্টাল সংবাদ ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
আইপি টিভির জন্য ইতোমধ্যে ছয়শ আবেদন জমা পড়েছে বলে তথ্য দেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “আমরা সতর্কতার সাথে দেখছি। মন্ত্রিসভায় পাস করা নীতিমালা অনুযায়ী আইপি টিভি কোনো সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। সহসা আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও সমাজের বহুমাত্রিক বিকাশের স্বার্থে গণমাধ্যমের প্রসার ও স্বাধীনতা যেমন প্রয়োজন, একইসাথে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের নীতি-নৈতিকতাও আবশ্যক। তা না হলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রসারের সাথে নীতি-নৈতিকতা থাকলেই কেবল গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য সফল হবে।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ‘সাংবাদিকবান্ধব’ নেতা ছিলেন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “তখন যারা সাংবাদিক ছিলেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও বাঙালির জন্য তার চিন্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছিল।
“স্বাধীন হওয়ার পর দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। বাসন্তী নামের একজন নারীকে শাড়ির চেয়ে বেশি দামের জাল পরিয়ে ছবি ছাপানোসহ কিছু পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে আসার পর সেই বাসন্তীর সাথে দেখে করেছেন, তার ঘরও পাকা করে দিয়েছেন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর পত্রপত্রিকার সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন, যেখানে ছিলেন মিজানুর রহমান, অধ্যাপক খালেদ, আনিসুজ্জামান খান, গিয়াস কামাল চৌধুরী, আমানুল্লাহ খান, আব্দুল গণি হাজারী। আর ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সলিমুজ্জামান। এর বাইরে সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল।
“তাদের পরামর্শেই পত্রিকার সংখ্যা সীমিত করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাংবাদিক বেকার হননি, বেশিরভাগ চাকরিচ্যুতদের অন্যত্র চাকরি দেওয়া হয়েছিল, বাকিরা তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভাতা নিয়ে আসতেন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সাংবাদিক সমাজের জন্য যা করেছেন তা অতীতে কেউ করেনি। করোনার মধ্যে এদেশে তিনি সাংবাদিকদের সহায়তার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, আশপাশের দেশে তা করা হয়নি। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের তেমন কোনো জোরালো দাবি ছিল না, প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই স্থায়ী ব্যবস্থা করেছেন।
“আজ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার সাংবাদিক উপকৃত হচ্ছে এবং এটি সাংবাদিকদের একটি ভরসাস্থল। কেউ মৃত্যুবরণ করলে পরিবার ৩ লাখ টাকা পায়। সাংবাদিকদের পরিবারকে সহায়তার জন্যও নীতিমালার খসড়া হয়েছে। ডিআরইউ’র এই জায়গাটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। আর জাতীয় প্রেসক্লাবের জায়গা বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের যাত্রাও বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে। সেখানে অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে।”
ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় সভায় ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম ও সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও রাজু আহমেদ, যুগ্মসম্পাদক আরাফাত দাড়িয়া, নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতা নাহার এবং সদস্য মোতাহার হোসেন ও মানিক লাল ঘোষ বক্তব্য দেন।
॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট ২০২১। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। এদিন নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৭তম বার্ষিকী।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানী বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে চালানো হয় নজির বিহীন গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। পরবর্তী সময়ে গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় প্রমাণ মিলে ওই সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল।
বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবন চিত্তে ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী পালন করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে কর্মসূচিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’ শান্তি সমাবেশেরে আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।
সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিক ভাবে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্পিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন।
হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানীকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। একই সঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
কর্মসূচি: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে।
এছাড়াও সকাল সাড়ে ১০ টায় ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় সভাপতিত্ব করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গ্রেনেড হামলার দিনটি স্মরণে সীমিত পরিসরে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ফারদিন খান: চট্টগ্রাম ব্যুরো :: ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ সড়কই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের কোমর সমান পানির কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এসময় মানুষের যোগাযোগ ও হাটা চলা কষ্টকর হযে পড়ে। আবহাওয়া অফিস বলছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ দেশের নানা জায়গায় ভোর থেকে অল্প ও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। রোববার ৬ জুন, রোববার ভোর থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। সকাল ৯টা থেকে বৃস্টি শুরু হয়ে তা থেমে থেমে এখনও অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই প্রবল বৃষ্টিতে শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় হাঁটু সমান কিংবা তারও বেশি পানিতে সয়লাব হয়ে যায় রাস্তাঘাট। অবিরাম বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, বহদ্দার হাট, বাদুরতলা, প্রবর্তক, শুলকবহর, কাতাল গঞ্জ, কাপাসগুলা ,হালিশহরসহ অনেক এলাকা ও অলিগলি রাস্তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে যারা কাজে বের হচ্ছে, তাদেরকে হাটু ও কোমর পরিমান পানি পেরিয়ে পড়তে হচ্ছে মারাত্মক দুর্ভোগে।
হামজারবাগ থেকে মেডিকেলে যাচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা। তিনি জানান, মুরাদপুরসহ আসার পথে প্রায় সর্বত্র রাস্তা পানিতে ডুবে ছিলো। মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত খুবই খারাপ অবস্থা। অনেক গাড়ী নষ্ট হয়ে রাস্তায় আটকে ছিল। পানিতে রাস্তা ডুবে ছিল। সব মিলিয়ে আজ একেবারে বাজে অবস্থা হয়েছে।এদিকে নগরীর অনেক জায়গায় প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।
নগরীর সরাইপাড়া থেকে মো.ফারুক নামে চাকরিজীবী বলেন, অফিসে যেতে রেইনকোট পড়ে নিচে নামতেই দেখি পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। নিচতলার অর্ধেক উচ্চতা পর্যন্ত পানি। সেখানে আমার বাইকও ডুবে আছে। শেষ পর্যন্ত অফিসে আর যাওয়া হলো না। অন্যদিকে সকালের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কেউ কেউ পথে বেরিয়ে জলাবদ্ধতার মুখে পড়ে স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করেছেন।
সকালে ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, টেকনাফসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ স্থানে প্রবল বজ্রপাতসহ ভারি থেকে অতিভারী বর্ষণ চলছে!
ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কার কথাও বলা হয় বুলেটিনে। এসময় বজ্রপাত থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে আরো ঘন্টাখানেক এমন বর্ষণ চলমান থাকতে পারে! এছাড়া আগামি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় প্রাক বর্ষার এমন ভারি বর্ষণ বিরতিসহ অব্যাহত থাকতে পারে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে!
এতে করে রোববার (৬ জুন) চট্টগ্রামের অফিসগামী ও সাধারণ পথচারীদের পড়তে হচ্ছে মারাত্মক দুর্ভোগে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসঘোলাসহ বিভিন্নস্থানের কোথাও হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানিতে সড়ক ডুবে গেছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে যারা কাজে বের হচ্ছে, তাদেরকে পড়তে হচ্ছে মারাত্মক দুর্ভোগে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, প্রাক মৌসুমি বায়ু ও লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে তা থেমে থেমে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হবে।
এদিকে চাক্তাই খাল ও হিজড়া খাল পুরোপুরি পরিষ্কার না হওয়ায় বৃষ্টির পানি আশপাশের ঘর-বাড়িতে উঠে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র অধীনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের অধীনে নগরের বিভিন্ন খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, যা এখন জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ আজ ১৭ মার্চ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে এবার উদযাপিত হবে এ দিনটি। গত বছর বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন থেকে শুরু হয় মুজিব বর্ষ যা এবছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনটি জাতীয় শিশু কিশোর দিবস হিসাবেও উদযাপিত হয়। এবারের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হবে। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি দশ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
এর আগে গতবছর বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করা হলেও করোনা ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মুজিব বর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করে উদযাপিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্্যাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজ ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশী অতিথিরা অংশগ্রহণ করবেন।
তিনি জানান, অনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিওভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার থিমগুলো হলো-কাল ১৭ মার্চ ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’, ১৮ মার্চ ‘মহাকালের তর্জনী’, ১৯ মার্চ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ২০ মার্চ ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’, ২১ মার্চ ‘ধ্বংসস্তুপে জীবনের গান’, ২২ মার্চ ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ২৩ মার্চ ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ২৫ মার্চ ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।
দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় কাল ১৭ মার্চ, ২২ মার্চ এবং ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৭ মার্চ, ১৯ মার্চ, ২২ মার্চ, ২৪ মার্চ এবং ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এই ৫ দিনের অনুষ্ঠানে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানগণ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আজ ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন।
এই ৫ দিনের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে সীমিত আকারে ৫০০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া, এই ৫ দিনের অনুষ্ঠানসহ অন্য ৫ দিনের অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের ধারণকৃত বক্তব্য প্রদর্শন করা হবে। প্রত্যেকদিনের অনুষ্ঠান টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়াল্ড রেজিস্টার এ অর্ন্তভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর বহু আকাঙ্খিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসি’র এক জরীপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নির্বাচিত হন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশী ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তাঁর উচ্চকিত প্রশংসা করেন।
বিগত বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি। শ্রীলংকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা (নৃশংস হত্যার শিকার) বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তাঁর স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালবাসা প্রতিফলিত হয়।’ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ৪ মার্চ নগরীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর জনগণের নেতৃত্বদান করেছিলেন।
জার্মানীর সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান উলফ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেন, ‘এই স্মৃতি জাদুঘর আমাদের একজন মহান রাষ্ট্রনায়ককে স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি তার জনগণের অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন এবং অতিদ্রুত স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।’
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছেন।’