॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি শহরের কলেজ গেইট এলাকায় পাহাড় ধ্বসে দেয়াল চাপা পড়ে নিহত ৩জনের মৃতদেহ শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনরা নিহতদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেছে। এর আগে দেয়াল চাপা পড়ে নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান হাসপাতালে নিহতদের দেখতে গিয়ে তাদের স্বজনদের কাছে এই সহায়তা করেন।
বৃস্পতিবার (১৬মার্চ) বিকেলে শহরে কলেজ গেইট এলাকায় একটি বসতঘরের উপর পাহাড় ধ্বসে দেয়াল চাপা পড়ে বসত ঘরের মালিক শামসুল আলম, নির্মাণ শ্রমিক কালু মালাকার ও মোম্মদ হানিফ নিহত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, রাঙ্গামাটির কিছু কর্তৃপক্ষ নিয়ম নীতি না মেনে যত্রতত্র জায়গায় লিজ দেয়ায় এবং লোকজন বিল্ডিং কোট না মেনে ঘর বাড়ি তৈরী করার ফলে রাঙ্গামাটিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। অচিরেই রাঙ্গামাটির অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে তা উচ্ছেদের ব্যবস্থা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, কলেজ গেইট এলাকায় পাহাড় ধ্বসে হতাহতের ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। দূর্ঘটনা কবলিত বসতঘর ও তার পাশে এলাকায় চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় আর কয়েকটি বসতঘর ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এছাড়া বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে উচ্ছেদ আতংক।
এদিকে এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের ঐ এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার কোন পরিকল্পনা নেয়া ঠিক হবে না। যারা মাটি কেটে দেয়াল নির্মাণ করছিল তারা অপরিকল্পিত ভাবে কাজ করার কারণে এই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে করলে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটনো না। তাই এলাকাবাসীকে উচ্ছেদ না করে এই ধরনের দূর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন তারা।
॥ মুহাম্মদ জুবাইর, টেকনাফ ॥ টেকনাফে পরিত্যাক্ত ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার বিজিবি। ১৩ মার্চ সোমবার সকাল ৭ টার দিকে সাবরাং আলোগুলা প্রজেক্ট সংলগ্ন নাফনদী দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবার বড় একটি চালান প্রবেশ করছে এমন সংবাদ পেয়ে বিজিবি‘র একটি দল লেঃ কর্ণেল মোঃ আবুজার আল জাহিদের নেতৃত্বে ঐ এলাকায় ওৎপেতে থাকে। এ সময় কয়েক জন লোক একটি বস্তা নিয়ে আসতে দেখে। বিজিবি‘র সদস্যের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা একটি বস্তা ফেলে কেওড়া বনের দিকে পালিয়ে যায়। পরে ফেলে যাওয়া বস্তার ভেতর ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা মুল্যের ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায। ২ বিজিবি‘র অধিনায়ক আবু জার আল জাহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানা। ইয়াবাগুলো ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে জমা রাখা হয়েছে যা পরে উর্ধতন কর্মকর্তাও সাংবাদিকদের সামসে ধংস করা হবে।
উচ্চ আদালতের রায়ের তিন মাস পার হয়ে গেলেও রাঙামাটি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে উজ্বল হয়ে শোভা পাচ্ছে দেশ কুখ্যাত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের নামে সড়ক ও এলাকার নাম। শুধু তাই নয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরও রাঙামাটি শহর থেকে এই কুখ্যাত রাজাকারের নামের সড়কের নাম বদলে ফেলতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। রহস্যজনকভাবে চুপ রয়েছে রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। চুপ রয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বজাধারী গণজাগরণ মঞ্চ। রাঙ্গামাটির যারা বাসিন্দা তারা তো এমনিতেই জানেন, তাছাড়া, যারা সেখানে কিছুদিন থেকেছেন কিংবা সেখানকার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন তারাও বলতে পারবেন যে, রাঙ্গামাটি শহরে একটি এলাকার নাম ত্রিদিব নগর, সংশ্লিষ্ট রাস্তাটির নামও ত্রিদিব রায় সড়ক!
গত ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা, সড়ক ও রাস্তাঘাট থেকে তাদের নাম মুছে ফেলা হবে। সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্দেশ পালনে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহায়তা নিতে হবে।
হাইকোর্ট গত ৬ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলতে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে শিক্ষা সচিব ও স্থানীয় সরকার সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ২০১২ সালে এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে খুলনার খান-এ সবুর রোড এবং কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ আজিজুর রহমান মিলনায়তনের কথা উল্লেখ করা হয়। এর পর ২০টি স্থাপনার নামের তালিকাসহ সম্পূরক আরেকটি আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে রিটকারীদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার একে রাশিদুল হক।
এদিকে আদালতের এই নির্দেশের পর রাজাকারের নামে নামকরণকৃত নাটোর শহরের দু’টি সড়কের নামফলক হাইকোর্টের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শহরের ট্রাফিক মোড়ে আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়া এবং বড়হরিশপুর বাসটার্মিনালের বিপরীত পার্শ্বে কছের উদ্দিন নামে দুই রাজাকারের নাম ফলক দুটি ভেঙ্গে ফেলেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি। তবে হাসপাতাল রোডে আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়ার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার আলী এবং বড়হরিশপুর বাসটার্মিনালের বিপরীত পার্শ্বে কছের উদ্দিন চেয়ারম্যান রোডের নামের পরিবর্তে বীরপ্রতীক সোলেমান আলীর নাম নামফলকে স্থান পাবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়। এসময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে আদালতের নির্দেশের পর মাগুরা জেলায় চার রাজাকারের নামাঙ্কিত সড়কের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ি এই নামবদল করা হয়েছে। চারটি সড়কের তিনটি রয়েছে মাগুরা পৌরসভায় এবং একটি রয়েছে জেলার বিনোদপুর উপজেলায়। পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল আজ পৌর এলাকায় তিনটি সড়কের নাম বদলের নির্দেশ দেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী বলেন, “হাই কোর্টের এই নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক খুশি হয়েছেন।”
একইভাবে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমায় রাজাকার আব্দুল ওয়াহেদ সরদারের নামে স্থাপিত একটি সড়কের নামফলক ভেঙে দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। নগরকান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী ও পাকহানাদারদের দোসর ওয়াহেদ সরদারের নামে সড়কের নামকরণের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু।
দেশের সকলে জানেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় দেশ ছেড়ে প্রথমে রেঙ্গুন পরে সোজা পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছেন। কারণ তিনি কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বিজয়কে মেনে নিতে পারেন নি। শুধু তাই নয়, সেখানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
বাংলাদেশকে যাতে জাতিসংঘ স্বীকৃতি না দেয় সে জন্য পাকিস্তান সরকার ত্রিদিব রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলকে জাতিসংঘে পাঠায়। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ত্রিদিব রায়কে জাতিসংঘ থেকে ফিরিয়ে আনতে তার মা বিনীতা রায়কে বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘে পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু ত্রিদিব রায় এতটাই কট্টরপন্থী পাকিস্তানী ছিলেন যে নিজের মায়ের অনুরোধ উপেক্ষা করে সেখানে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। ধারণা করা হয় সে সময় তার প্রচারণার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে চীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছিল বলেই প্রথমবার বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়া আটকে গিয়েছিল।
শুধু কি তাই? এরপরও ত্রিদিব রায় পাকিস্তানে আমৃত্যু ছিলেন, সেখানে পাকিস্তানীরা তার আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রদূত করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। মন্ত্রিত্ব দিয়েছে, পাকিস্তানীদের দেওয়া সেই মর্যাদা তিনি আজীবন ভোগ করেছেন। কয়েক বছর আগে পাকিস্তানেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ত্রিদিব রায়ের ’৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডন-ভিত্তিক ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিত দেব সরকার, যার বই ‘দ্য লাস্ট রাজা অফ ওয়েস্ট পাকিস্তান’ গত বছর প্রকাশিত হয়েছে। এই বইতে লেখক উপমহাদেশের বিশাল ক্যানভাসের মধ্যে চাকমাদের ইতিহাসের প্রাসঙ্গিকতার একটি জীবন্ত চিত্র এঁকেছেন। রাজা ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ব্যাখ্যা করার জন্যই প্রিয়জীত দেবসরকার তাঁর বই-এর নামে তাঁকে ‘পশ্চিম পাকিস্তানের শেষ রাজা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মি: দেবসরকারের মতে, ১৯৫৩ সালে সিংহাসনে আরোহণ থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ত্রিদিব রায় নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানের এক জাতিগোষ্ঠীর রাজা হিসেবে দেখেছেন। রাজা ত্রিদিব রায় খুব চিন্তা-ভাবনা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মি: দেবসরকারের গবেষণা মতে, ত্রিদিব রায়-এর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রিক। নিজের রাজত্ব এবং স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখতেই ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। “উনি চাইছিলেন তাঁর রাজত্ব এবং রাজ পরিবারের শাসন যেন বজায় থাকে, যদিও অনেক সাধারণ চাকমা তাঁর নীতির বিপক্ষে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন”, মি: দেবসরকার বলেন। বইটির ভিত্তি হচ্ছে দালিলিক গবেষণা, অর্থাৎ প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত দলিল ছিল বইটির মৌলিক উপাদান। গবেষণার কাজ হয়েছে বিশ্বর বিভিন্ন অঞ্চলে – বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, তারপর শ্রী লংকা এবং থাইল্যান্ড হয়ে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স।
বই-এর শুরুতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে আরাকান এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাকমাদের আগমন এবং প্রভাব বিস্তারের ইতিহাস। এর পরে এসেছে, দিল্লিতে মোগল বাদশাহদের সাথে চাকমা রাজাদের সম্পর্ক এবং ব্রিটিশ শাসন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধীনস্থ করার সিদ্ধান্ত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও এলাকাটি পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করা হয়। স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ-এর এই সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করলেও, তৎকালীন চাকমা রাজা নালিনক্সা রায় খুশিই হয়েছিলেন। ভারতীয় কংগ্রেসের নীতি বেশ সোজা-সাপটা ছিল, বলছেন মি: দেবসরকার। তারা স্বাধীন ভারতে কোন ধরনের স্থানীয় রাজা-রাজকুমার বা রাজকীয় ক্ষুদ্র রাজ্য বরদাশত করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। কাজেই, চাকমা রাজার পক্ষে ভারতে যোগ দিয়ে রাজত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হতো।
“আপনি যদি একটু পেছনে যান, আপনি দেখবেন চাকমারা ব্রিটিশ ভারতে সব সময় স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে আসছে। তাদের কিন্তু সব সময় একটি আলাদা রাজত্ব, আলাদা পরিচয় ছিল,” মি: দেবসরকার বলেন।
রাজা ত্রিদিব রায় মনে করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করবে। শুরু থেকেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক আমলাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তানের উদীয়মান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকে তিনি কম গুরুত্ব দেন। এমনকি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শেখ মুজিবের ব্যাপক বিজয়-এর পরেও তিনি তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করেন নি।
মি: দেবসরকার বলছেন, ত্রিদিব রায় ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করলে তিনি তাঁকে আওয়ামী লীগ-এর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবার অনুরোধ জানান। মুজিব ত্রিদিব রায়কে আশ্বাস দেন, যে তাঁর দল বিজয়ী হলে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে তিনি সহায়তা করবেন। “কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায়-এর মূল লক্ষ্য ছিল তাঁর রাজত্বের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা রক্ষা করা এবং আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সে বিষয়ে হয়তো কোন সমস্যা ছিল”, মি: দেবসরকার বলেন। তবে মি: দেবসরকার মনে করছেন, ত্রিদিব রায় ভেবেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নির্বাচনের ফলাফলকে কোন না কোন ভাবে নাকচ করে দিতে পারবেন। “উনি যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাদেরকে অনেক উন্নত মানের বাহিনী মনে করতেন, তিনি ভেবেছিলেন যে তাদের বিরুদ্ধে বিদেশী কোন হুমকি কাজ করবে না এবং তারা সব কিছু সামলে নিতে পারবে,” তিনি বলেন।
লেখক তাঁর কাজ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই শেষ করে দেননি, কারণ ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক জীবন ১৯৭১-এর পর থেমে থাকে নি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালে রাজা ত্রিদিব রায়কে দেশের প্রেসিডেন্ট হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হতে চাননি বলে পদ গ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু তারপরও, মি: দেবসরকার তাঁর উপসংহারে লিখছেন, “ত্রিদিব রায় ছিলেন এমন একজন রাজা যিনি শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থ-র জন্য তাঁর রাজত্ব হারিয়েছেন”। চাকমাদের ৫০তম রাজা ত্রিদিব রায়-এর নাম ১৯৭২ সালের দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি সেই অভিযোগ মোকাবেলা করার জন্য কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসেননি এবং ৭৯ বছর বয়সে ২০১২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নির্বাসনে ছিলেন। – দ্য লাস্ট রাজা অফ ওয়েস্ট পাকিস্তান, ১৬১ পৃষ্ঠা। প্রকাশক: কুইনটাস।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় কি ভয়ঙ্কর রাজাকার ছিলেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও আদালতের নির্দেশ থাকার পরও কি করে তার নামে রাঙামাটি শহরে সড়ক ও স্থানের নাম থাকে সে প্রশ্ন রইলো রাঙামাটির জেলা প্রসাশক, জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, আওয়ামী লীগ ও গণ জাগরণ মঞ্চের নিকট? স্বাধীনতার মাসে এ প্রশ্নের উত্তর তারা দিবেন এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।
॥ লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়িতে ক্ষৃদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’র আয়োজনে উচ্চতর সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের উপর পক্ষকাল ব্যাপী উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্স ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের হলরুমে প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম, ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক সুসময় চাকমা, প্রশিক্ষক জীতেন চাকমা প্রমুখ।
প্রশিক্ষণে উচ্চতর সংগীতে ৩২ জন, বাদ্যযন্ত্র (তবলায়) ১৮জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস পালিত নারীকে সবার আগে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে
॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ “নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা,বদলে যাবে বিশ্ব ,কর্মে নতুন মাত্রা” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বান্দরবানে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ২০১৭ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে র্যালী, আলোচনা স্বাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৮মার্চ) সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি র্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিণ শেষে পুনরায় জেলা প্রশাসক চত্ত্বরে এসে র্যালী শেষ হয়। এসময় র্যালীতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে জেলা মহিলা বিষয়ক র্কমকর্তা সুম্মিতা খীসা এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শম্পা রানী সাহা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাসান আলী, উইম্যান চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি লালছানি লুসাই, দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অং চ মং মারমা, সিনিয়র জে-ার স্পেশালিস্ট এ্যানা ত্রিপুরা।
অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, জেলা শিশু বিষয়ক র্কমকর্তা শিলাদিত্য মুৎসুদ্দি, কারিতাসের প্রোগ্রাম অফিসার রুপনা দাস, ব্যাক প্রতিনিধি মো: ওমর ফারুক, রুপালী নারী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রুপালী বড়–য়া,সূর্যের হাসি ক্লিনিকের জেলা সমন্বয়কারী প্রমোদ মল্লিক, হেলেন ক্লেনারের মা ও শিশু সাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাসুমা চেীধুরীসহ স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও কর্মী ও সুশীল সমাজের লোকেরা। সভায় সঞ্চালনা করেন হোসনেআরা শিরিন ও মিলন কুমার ভট্টাচার্য্য।
এসময় বক্তারা বলেন“এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। এরেই ধারাবাহিকতায় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জনের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন “নারীকে সবার আগে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নারী যে মানুষ, তা নারীকেও বুঝতে হবে। নারীর অগ্রগতির জন্য সবার আগে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ নারীকে প্রথমত পরিবার থেকেই আলাদা করে দেখা হয়। উন্নয়ন আর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নারীকে সুসংহত চিন্ত করতে হবে। নারী-পুরুষ প্রতিদ্বন্ধী নয়। আজ বিশ্বের দরবারে নারী পুরুষ সমান ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সাতরাং একে অপরকে পরিপূরক ভাবলেই মানুষে মানুষে সমতা আসবে।
ঘোলা পানির পোপা খাল,দুর্র্ভোগে ২০ হাজার মানুষ
॥ লামা সংবাদদাতা ॥ পাহাড়ে পানির কষ্ট নিত্য নৈমত্তিক বিষয়। শুষ্ক মৌসুম এলে পানির অভাব তীব্র আকার ধারন করে। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের পানির মূল উৎস ছড়া, ঝিরি ও খাল। দীর্ঘদিন যাবৎ পাথর, বন ও গাছ উজাড়ের কারণে পাহাড় গুলো বৃক্ষশূণ্য হয়ে পড়ায় শুষ্ক মৌসুম এলেই শুকিয়ে যায় পানির উৎস গুলো। অতি সামান্য পানির প্রবাহ বাঁচিয়ে রাখে পাহাড়ি মানুষের জীবন। তেমনি বান্দরবানের লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬টি ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডের ২০ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছে পোপা খালটি।
লামা উপজেলার পূর্ব-উত্তর সীমান্তের শেষপ্রান্ত পোপা মৌজার দোছড়ি এলাকার থেকে পোপা খালের সৃষ্টি। ঘিলাপাড়া ঝিরি ও দোছড়ি ঝিরি দুইটি ‘দোছড়ি’ পয়েন্টে এসে মিলিত হয়। সে স্থান থেকে পোপা খালের শুরু। খালটি ২টি ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডের উপর দিয়ে একেঁবেকেঁ বয়ে গেছে। দোছড়ি থেকে সৃষ্টি হয়ে রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লারী পাড়া নামক স্থানে এসে খালটি লামা খালের সাথে মিলিত হয়ে শেষ হয়। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং গড়ে প্রস্থ ৪০ ফুট। এই অঞ্চলের বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার মানুষের নিত্যদিনের খাওয়া ও ব্যবহারের সাথে জড়িয়ে আছে পোপা খালটি। এই খালের পানি পান করা থেকে শুরু করে গোসল, সংসারের সকল কাজে ব্যবহার, জমিনে সেচ দেয়া হয় এই পানি দিয়ে।
লামা সদর ইউনিয়নের এই এলাকাটি নেই যোগাযোগের ব্যবস্থা। পায়ে হেঁটে চলে এই এলাকার মানুষ। কিন্তু বর্তমানে বিস্তৃর্ণ এই এলাকাটি থেকে গাছ, বাশঁ, পাথর, বালি আহরণের জন্য সহজ রোড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে পোপা খালটি। দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা এই খাল দিয়ে গাছ, বাশঁ, পাথর, বালি পরিবহন করতে চলাচল করে ট্রাক্টর, ট্রাক, ট্রলি, জীপ। এতে করে খালের পানি সবসময় কাঁদাময় ও ঘোলা হয়ে থাকে। সেই পানি কোন কাজে ব্যবহার করতে পারছেনা এলাকাবাসি। অনেক সময় নিরুপায় হয়ে ব্যবহার করে আক্তান্ত হচ্ছে নানান পানিবাহিত রোগে।
অংহ্লা ডুরী পাড়া বৃদ্ধ অংউয়ে চিং মার্মা (৬৫) বলেন, কোথাও পানি নেই। এই খালের ময়লা পানি দিয়েই করি গোসল। খাওয়ার কাজেও এই পানি ব্যবহার করি। খাল দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ না করা হলে আমরা কিভাবে বাচঁবো ?
চিউনীমুখ এলাকার রবিউল আলম (৪০) বলেন, পানির অভাবে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে আমাদের। এই এলাকায় একমাত্র পানির উৎস পোপা খালটি। ঠাকুর ঝিরি এলাকার রেজাউল করিম (৩৮) জানান, দূর্গমে বসবাস করা মানুষ গুলোকে মানুষ মনে করেনা ব্যবসায়ীরা। শিয়া পাড়ার বাসিন্দা দি ক্রোশ ত্রিপুরা বলেন, দিনে দিনে আমরা অসহায় পড়ছি। নদীতে পানি নেই। যা অল্প আছে তাও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিকার চাই।
৭নং ওয়ার্ডে ইউপি মেম্বার আবুল কাসেম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় খালটি গাড়ি চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে এলাকার মানুষ প্রচন্ড পানির কষ্ট ভোগ করছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। জনসাধারণের ক্ষতি করে নদী ও খালে গাড়ি চলাচলের বিষয়টি আমি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও ভর্তিতে পার্বত্য বাঙালি কোটা চালু, বিতর্কিতপার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন-২০১৬ অবিলম্বে বাতিল করাসহ পার্বত্য বাঙালি ছাত্রপরিষদের নিয়মিত ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৬ মার্চ তিন পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ।
শুক্রবার সংগঠনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে পূর্বে ঘোষিত ৭ মার্চের হরতাল ঐ দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসাথে উপজেলা নির্বাচনের কারণে ৬ মার্চ গুইমারা উপজেলাকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
এদিকে একই বিবৃতিতে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র শামসুজ্জামান বাপ্পির হল থেকে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ।
পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান আলকাছ আল মামুন ভঁইয়া ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক মো:আব্দুল হামিদ রানা রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র শামসুজ্জামান বাপ্পির হল থেকে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামসুজ্জামান বাপ্পীকে যে অভিযোগে বহিস্কার করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।তার নেতৃত্বেই রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম চালু করার জন্য আন্দোলন হয়েছে, তার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করেছে- এটাই তার অপরাধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবী -দাওয়াকে স্তব্ধ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রশাসনের বিরুদ্ধে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদের চলমান আন্দোলনকে ধামাচাপা দিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বাপ্পীকে বহিস্কার করেছে। আর তাকে বহিস্কারের ইন্ধনদাতা হচ্ছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যারা রাঙ্গামাটিতে হতে দিতে চায় না তারা।
পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ মনে করছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন জেএসএস এর দোসরদের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে পরবর্তীতে আরও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে।তাই সরকার এখনই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ উপজাতীয় শিক্ষকদেরকে সরিয়ে না দিলে পরে চড়া সুদে মাসুল গুনতে হবে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বাপ্পীর বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করার জোর দাবী জানিয়েছেন।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল পাচ্ছে জনগণ –বীর বাহাদুর এমপি
॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ পণ্যের প্রচার ও প্রসার আর ক্রেতাদের নতুন নতুন পণ্য সর্ম্পকে পরিচিতি করতে বান্দরবানে শুরু হয়েছে বান্দরবানে শুরু এসএমই পণ্যমেলা। এসএমই পণ্যমেলা উপলক্ষে বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে ও বেলুন আর পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী ও এসএমই ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার রাহুল বড়–য়াসহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাদের। মেলা উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে প্রায় ৬০টি স্টল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হাজির হয়েছে। মেলায় পাটজাত পণ্য,চামড়াজাত সামগ্রী, পোশাক, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়ার, হ্যান্ডিক্রাফটস, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, গৃহস্থালী পণ্য, গৃহস্থালী পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং অন্যন্য স্বদেশী পণ্য।
মেলা উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হয় এক আলোচনা সভা ও উদ্বোধনী অনুষ্টানের। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের সুফল জনগণ আজ পাচ্ছে। দেশের সর্বত্র আজ ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফলের ফলে আজ থানছির মত দুর্গম এলাকাতে ও বিদ্যুৎতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৬বছর পর বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারই এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়ে সফল বাস্তবায়ন করেছে।
এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, বিনামুল্যে বই প্রদান ও এখন মায়েদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করছে বর্তমান সরকার। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, শুধু শিক্ষিত হলে হবে না, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে, তাইলেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে আর সর্বত্র উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত থাকবে। ছয়দিনব্যাপী এই মেলা প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে আর ৬ইমার্চ সমাপনী অনুষ্টানের মধ্য দিয়ে এই এসএমই পণ্য মেলার সমাপ্তি হবে। মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে বিনামুল্যে প্রবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, র্যাফেল ড্রসহ নানান আকর্ষনীয় আয়োজন।
তিন পার্বত্য জেলায় ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফের
২১০টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ
॥ সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়ি ॥ তিন পার্বত্য জেলার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফের প্রকল্পের সহায়তায় স্থাপিত ২১০টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ করেছে সরকার। গত কাল (সোমবার) প্রাথমি ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় শাখা-১ এর উপ-সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিগ্রহন আইন ১৯৭৪ এর ৩ (১) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওয়াতায় তিনটি শর্তে আদেশ জারীর সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনায়ন করা হয়েছে। শর্তে মধ্যে (ক) অধিগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয় সমূহ জমি, গৃহ, নগদ তহবিলসহ যাবতীয় সম্পদ সরকারে অনুকুলে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। (খ) বিদ্যালয় সমূহের বর্তমান পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত হইবে এবং তদস্থলে বিধি মোতাবেক নতুন পরিচালনা গঠন করিতে হইবে। (গ) বিদ্যালয়সমূহের তথ্যাদি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক/শিক্ষিকার পদ সৃষ্টি করা হইবে। পদ সৃষ্টির আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ বিধি মোতাবেক সরকারীকরণ করা হইবে।
২০০৯ সালে তিন পার্বত্য জেলার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফের মৌলিক শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের বান্দরবান জেলার ৮০টি, রাঙ্গামাটি জেলার-৮১টি এবং খাগড়াছড়ি জেলার ৪৯টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। এ সব বিদ্যালয়ে প্রকল্পের আওয়াতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১ জন করে শিক্ষক সহায়তা দিলেও পাড়াবাসীর অর্থায়নে ৩ জন শিক্ষক পদায়ন করা হয়।
জুরাছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার ধর জানান সংশ্লিষ্ট্য বিদ্যালয় গুলো জাতীয় করণের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েভসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে তবে এখনো আমাদের হতে চিঠি পায়নি।
উল্লেখ্য তিন পার্বত্য জেলার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফের মৌলিক শিক্ষা সহায়তায় প্রকল্পের আওয়াতায় পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ২১০টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
“দুর্নীতি একুশের চেতনার পরিপন্থী” এই স্লোগানে অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় নন্দনকানন হতে শোভাযাত্রা বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সনাক সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও ইয়েস উপ-কমিটির আহবায়ক অ্যাড. আখতার কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বজন সদস্য মোবারক হোসেন, টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: মেহদী হাসান, এরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ইয়েস সহ-দলনেতা প্রেমানন্দ শীল এবং সনাক চট্টগ্রাম মহানগরের ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্যবৃন্দ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল দশটায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে চাই সহিংসতামুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত প্রিয় স্বদেশ…ও দুর্নীতি থামান প্লে কার্ড ও বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিবিরোধী ফেস্টুন নিয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ যুব শ্রেণীর প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করেন। সনাক সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে ও এরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুাষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, এ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী, আবৃত্তিকার মিলি চৌধুরী, নারী নেত্রী রওশন আরা চৌধুরী, ইয়েস সদস্য আনোয়ার, আদর, প্রীতি প্রমুখ। বক্তারা তাদের বক্তব্যে, গণতন্ত্র, সুশাসন, জবাবদিহিতা, সম-অধিকার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি; সহিংসতামুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত প্রিয় স্বদেশ গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।